গরমে আরামের প্যান্ট
স্কুলে তো সারা দিন ইউনিফরম পরেই কাটে। বাকি সময়টা তো আর ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এই সময়ে পরতেই পারো তোমার ইচ্ছামতো ফ্যাশনেবল আর আরামদায়ক পোশাক। বন্ধুদের সঙ্গে বাসার বাইরে ঘুরতে যাবে বা পরিবারের সঙ্গে শপিংয়ে বেরোচ্ছ! ঝটপট পরে নিতে পারো থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। গরমে আরাম তো পাবেই, সঙ্গে ফ্যাশনটাও নেহাত মন্দ হবে না। আমার কথা বিশ্বাস না-হয় চলো, শুনে আসি ফ্যাশন ডিজাইনারদের মুখেই। ফ্যাশন হাউস ব্যাঙের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার সায়েম হাসান মনে করেন, ‘কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের গরমের সময়ে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টই বেশি আরামের আর ফ্যাশনের। কিশোরেরা এক রঙের চেয়ে নানা ধরনের প্রিন্ট ও চেক প্যান্ট পরলে বেশি স্টাইলিশ দেখায়। কিছুদিন আগেও ঢোলা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের চল বেশি থাকলেও এখন চলছে ফিটিং প্যান্ট। কাপড়ের ক্ষেত্রে একটু নরম কাপড় বেছে নিতে পারে কিশোররা।’ কী, এবার মানলে তো!
ঘরে তো এমন প্যান্ট পরতেই পারো। থ্রি-কোয়ার্টার এখন সমানতালে চলছে ঘরের বাইরের পোশাক হিসেবেও। এটা পরে অনায়াসে সবখানে চলাফেরা করা যায়। ভ্রমণ বা অবসর কাটাতেও এমন প্যান্টের জুড়ি নেই। চাইলে নিজের পুরোনো ফুল প্যান্ট দিয়েও ঘরে বসে বানিয়ে নিতে পারো খাটো প্যান্ট। কীভাবে? বুদ্ধিটাও শিখিয়ে দেব, অপেক্ষা করো।
যেমনটা চলছে
অনেক ধরনের কাপড়ের প্যান্ট রয়েছে বাজারে। তবে জিনস ও সুতির প্যান্ট চলছে ভালো। এখন জিনসের কাপড় অনেকটা পাতলা করে বানানো হচ্ছে খাটো প্যান্ট বা থ্রি-কোয়ার্টার। প্লাস পয়েন্টের ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম জানান, ‘কোনো প্যান্টের দুই পাশে দুই পকেট দেওয়া, কোনোটিতে আবার দুইয়ের অধিক পকেট। পকেটে চেন বা বোতামের ব্যবহারে আছে নতুনত্ব। একটু ফিটিং প্যান্টই যেহেতু চলছে, তাই নিচের দিকের ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করছে ডিজাইনাররা।’
নিচের দিকে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাজুড়ে কোনোটায় লাগানো হচ্ছে অন্য রঙের কাপড়। তার সঙ্গে মিলিয়ে দুই পাশের পকেটের কোনায় অল্প করে সেই রং জুড়ে দিয়ে আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, উজ্জ্বল রংগুলো এখন চলছে বেশি। চেক ছাড়াও প্রিন্টের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে কিশোরদের। প্যান্টের সামনের দিকে চেন অথবা স্টিলের বোতাম লাগানো হচ্ছে। সুতি কাপড়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার কাজ হচ্ছে। দুই পাশের পকেটে ভিন্ন কাট আর ফলস কাপড় দিয়ে আকর্ষণীয় করা হচ্ছে প্যান্টগুলো। অনেক প্যান্টে শার্টের নিচের লুক হবে হাতার মতো। এটা ভাঁজ করলে থ্রি-কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার হবে আর ভাঁজ ছাড়লে হয়ে যাবে ট্রাউজার। কেনার আগে নজর দিতে হবে ওয়াশের দিকে। প্যান্ট তৈরির আগে কাপড়টা যত ওয়াশ ভালো হবে, তৈরির পরে দেখতে ততটাই জমকালো লাগবে। বাজারে যেসব কাপড়ের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পাওয়া যাবে, তার মধ্যে আছে গ্যাভাডিন, ক্যানভাস, রিপস্টেপ, জিনস, খদ্দর ও জার্সি কাপড়।
প্রিন্ট আর চেক ছাড়াও বাজারে একরঙা নানা ধরনের প্যান্ট পাওয়া যায়। কিনে নিতে পারো সেসবেরও একটি। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগেও কিনতে পারো প্যান্ট। ভ্রমণের উপযোগী প্যান্টে অতিরিক্ত পকেট জুড়ে দেওয়া আছে, যাতে টুকটাক কাজের জিনিস পকেটে নিয়েই চলতে পারো।
বাজারে যা দরদাম
দামের মধ্যে পার্থক্য চোখে পড়বে দোকানভেদে। ফ্যাশন হাউসের বানানো ব্র্যান্ডের প্যান্টের স্টাইল বৈচিত্র্যময়। তাই এসব প্যান্টের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। নানা ধরনের ব্র্যান্ডের প্যান্ট কেনা যাবে ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকার ভেতরে। এ ছাড়া সাধারণ দোকানেও কিনতে পারো, দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। মার্কেটগুলো থেকে বেছে কিনতে পারো তোমার পছন্দমতো। মার্কেটে তিন থেকে ৬০০ টাকায় কেনা যাবে ঘরে-বাইরে পরার মতো প্যান্ট।
যেখানে পাবে
দেশের সবখানেই এখন থ্রি-কোয়ার্টার বা ঘরে পরার খাটো প্যান্ট কিনতে পাওয়া যায়। তবে, রাজধানী ঢাকা শহর ঘুরে তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি তেমন কিছু স্থানের নাম। ঢাকার নিউমার্কেট, মিরপুর, উত্তরা, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান ইত্যাদি এলাকায় কিনতে পারবে নানা ধরনের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। নিউমার্কেটের আশপাশের রাস্তার ধারে ও বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গ্লোব, রাপা প্লাজা, এআরএ সেন্টার, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর-১-এর প্রিন্স প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, মোস্তফা মার্ট, পলওয়েল মার্কেট, গুলশান হকার্স মার্কেট, মালিবাগসহ বিভিন্ন মার্কেটে। ফ্যাশন হাউসগুলোয় গেলে পেয়ে যাবে তোমার পছন্দমতো ফিটিং আর স্টাইলিশ এসব প্যান্ট। ফ্যাশন হাউসের মধ্যে ওটু, আর্টিস্টি, ফ্রিল্যান্ড, প্লাস পয়েন্ট, বিগ বস, এক্সটাসি, ওয়েটিক্স, মেনস ক্লাব, ব্যাঙসহ নানা হাউসে।
পুরোনো প্যান্ট নতুন রূপে
পরামর্শ দিয়েছেন প্যান্ট কাটিং মাস্টার তাপস কুমার:
চাইলে বাসায় থাকা পুরোনো প্যান্ট দিয়ে ঘরে পরার খাটো প্যান্ট বানিয়ে নিতে পারো নিজেই। প্রথমতো তোমার পুরোনো প্যান্টটি বেছে নাও। এরপর সেটা পরিষ্কার করে শুকিয়ে ফেলো। বাসায় লন্ড্রি করে নিলে কাটার শেপটা ঠিক থাকবে। এবার কতটুকু কাটতে হবে, ঠিক করে নাও। ফিতা দিয়ে মেপে স্কেল ধরে একটা দাগ দিয়ে নাও। এবার কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে সুন্দর করে কেটে নাও। এরপর বাসায় সেলাই দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সেখানে সেলাই করে নিতে পারো। নাহলে, ৩০ থেকে ৪০ টাকা দিয়ে আশপাশের প্যান্ট কাটে এমন দরজির দোকানে সেলাই করে নাও। ব্যস, হয়ে গেল তোমার শখের খাটো প্যান্ট।
ছবি: সাবহানাজ রশীদ
অলংকরণ: নামিস্তা তাবাসসুম
মডেল: সামি, সন্ধি ও সৌরভ