কথা হবে কানে কানে, তবে ফিসফিস করে না। বরং ইচ্ছেমতো উচ্চ স্বরে। এমনও তো হয়, উচ্চ শব্দে তোমার গান শুনতে মন চাইছে। আর চারদিকের পরিবেশ বলছে ভিন্ন কথা। যেখানে বাসার লোক থেকে প্রতিবেশী, সবার কথাই ভাবতে হচ্ছে তোমায়। তখন তোমার ইচ্ছেটাকে বাক্সবন্দী করে রাখা ছাড়া গতি দেখছ না! তবে একটু বুদ্ধি করলে তুমি সাপও মারতে পারবে, আবার লাঠিও ভাঙবে না। যেখানে জোর ভলিউমেই পছন্দের গান শুনতে পারবে অন্যকে বিরক্ত করা ছাড়াই। আর সেই বুদ্ধির নাম হলো হেডফোন। কানে লাগিয়ে তোমার মুঠোফোন বা কম্পিউটারের মিউজিক প্লেয়ার অন করো আর ঢুকে যাও নিজের পৃথিবীতে। সেই পৃথিবীতে ডুব দিতে এর চেয়ে আর ভালো বুদ্ধি কী হতে পারে! এই হেডফোনের আবার একটি টি-টোয়েন্টি সংস্করণ (ছোট ভার্সন) আছে। তা হচ্ছে ইয়ারফোন। অনেক ক্ষেত্রে যেটা আরও বেশি আধুনিক। চাইলে সহজেই পেঁচিয়ে পকেটে রাখতে পারো। অনেক ইয়ারফোন আবার তার ছাড়াই শুধু একটা ছোট যন্ত্র, যা কানের পাশে গুঁজে রাখলেই চলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হেডফোনের কার্যকারিতাও বাড়ছে দিন দিন। অথচ এটা যখন প্রথম আবিষ্কৃত হয়, সেটা শুধু আমেরিকান নৌবাহিনীতে ব্যবহার করা হতো। ১৯১০ সালে নিজের বাড়ির রান্নাঘরের নানা ধরনের জিনিস দিয়ে এই হেডফোন প্রথম তৈরি করেন মার্কিন নাগরিক ন্যাথানিয়েল ব্যাল্ডউইন। এরপর ১৯১৯ সালে বেতার (রেডিও) শোনার জন্য ব্যান্ডেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান হেডফোন তৈরি করে বিক্রি করে। এভাবেই গড়িয়েছে আরও এক যুগ। ১৯৪৩ সালে মার্কিন সংগীতশিল্পী জন সি কস উদ্ভাবন করেন স্টুডিওতে ব্যবহার উপযোগী হেডফোন। এর আগ পর্যন্ত শুধু বেতার ও গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানে হেডফোন ব্যবহার করা হতো। আশির দশকে ওয়াকম্যানে ব্যবহারের জন্য প্রথম ব্যক্তিগত হেডফোন ব্যবহারের চল শুরু হয়। এরপর নব্বই দশকের শেষের দিকে এসে কম্পিউটার ও মুঠোফোনের জন্য নানা ধরনের আধুনিক হেডফোন তৈরি হতে থাকে। আজকাল তো তার ছাড়া ব্লুটুথ হেডফোনের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে।
এই যাহ্, সেরেছে। ধান ভানতে গিয়ে যে শিবের গীত গাইতে শুরু করেছি। ফ্যাশনের সঙ্গে ইতিহাস মেশালে ভূগোলের মতো সব গোলমেলে হয়ে যাবে, তা আমি জানি। তাই ইতিহাস আর না, তার চেয়ে বরং চলো হেডফোনের চলতি বাজার ঘুরে আসি।
ডাক্তার কী বলেন
হেডফোনে কান ঠিক থাকবে তো? বিষয়টি নিয়ে ডাক্তারই বা কী বলেন? ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসনাত জোয়ার্দার বলেন, ‘উচ্চশব্দ মানুষের শ্রবণক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সেটা হেডফোনের শব্দ হোক আর অন্য কোনো শব্দ হোক। এর ফলে যেমন মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে, তেমনি অনেক দিন ধরে বেশি মাত্রায় হেডফোন ব্যবহার করলে মাথা ধরা, খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ, বিষণ্নতাসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।’
তবে এই ভয়ে পুরোপুরি হেডফোনের ব্যবহার ছেড়ে দিতে চাইলে তাদের জন্য অভয় আছে। ডাক্তাররা বলছেন, হেডফোনে যদি কেউ নির্দিষ্ট শব্দমাত্রায় শোনে তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। সাধারণত ৭৮ ডেসিবল মাত্রা পর্যন্ত হেডফোনের শব্দ কানের কোনো ক্ষতি করে না। এর বাইরে গেলেই কানের ক্ষতি হবে। আজকাল অনেক হেডফোনে শব্দমাত্রা কানের ক্ষতিকর পর্যায়ে গেলে একটা সংকেত দেয়। সেটা দেখেও কিনতে পারো।
বিভিন্ন রকম হেডফোন
স্মার্টফোনের সঙ্গে আমাদের দেশে হেডফোনের চাহিদাও বেড়েছে। মুঠোফোনে সাধারণত ইয়ারফোন ব্যবহূত হয়। যেখানে কথা বলা, গান শোনা, এফএম চালু করা ইত্যাদি কয়েকটি কাজেই এটা ব্যবহার করা হয়। যারা কম্পিউটারে গেম খেলতে ভালোবাসো, তাদের জন্য আলাদা হেডফোন মিলবে। এর মধ্যে একটিতে আবার আছে ভাইব্রেশন (কম্পন), যেটা মাথায় লাগিয়ে গেম খেলার সময় সত্যিকারের অনুভূতিই পাওয়া যাবে। হেডফোনে আরামসে কথা বলা ও শোনার জন্য আছে নয়েজ ফ্রি হেডফোন। কোনো জায়গায় বেড়াতে গেলে যাতে সহজে বহন করা যায়, সে জন্য আছে ভাঁজ করা যায় এমন (ফোল্ডেবল) হেডফোন। মুঠোফোনে ব্যবহারের জন্য এক পোর্টের ইয়ারফোনগুলো অনেক জনপ্রিয়। আছে তারের ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ব্লুটুথ হেডফোন। এই হেডফোনে ব্লুটুথ অন করে রাখলেই ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত মুঠোফোনে তারের সংযোগ ছাড়াই কল ধরা যাবে বা গান শোনা যাবে।