শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই নানা ধরনের প্রস্ত্ততি। তবে সেটা ঢাল-তলোয়ার দিয়ে না, নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমেই সহজে পরাজিত করতে পারো তাকে। এই যেমন মোজা, একটা ছোট্ট জিনিস। কিন্তু তার কাছেও শীত পালিয়ে বেড়ায় সেই খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকের দিক থেকে। কারণ, গ্রিকবাসী এই সময়ে পশু-পাখির চুল দিয়ে বিশেষ ধরনের মোজা তৈরি করা শেখে। যা দিয়ে তারা ঠান্ডা মাথায় যুদ্ধ করত ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে। এরপর রোমানরা পা ঢাকার জন্য পঞ্চম শতকের দিকে বিশেষ ধরনের মোজা ব্যবহার করত, যেটাকে তারা বলত পুটিফ (পিইউটিটিইইএফ)। এগুলোর বেশির ভাগই তৈরি হতো কাপড় বা লোমশজাতীয় জিনিসে। আর এটা দেখতেও ছিল দুই আঙুলের লম্বা পায়ের মতো। এরপর ইউরোপের মানুষ মোজার ব্যবহার শেখে। তবে, ১০০০ খ্িরষ্টাব্দের দিকে মোজা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আর মোজার বর্তমান যে আকৃতি আমরা দেখি বা পরি সেটা আসে আরও পরে, ১৬০০ শতকের দিকে।
তবে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পায় বিভিন্ন সুতায় তৈরি মোজা। ১৯৩৮ সালে প্রথম নাইলন দিয়ে এই মোজা তৈরি করা হয়।
ধুত্তোরি ছাই, ধান ভানতে গিয়ে তো ধান তৈরির ইতিহাস রচনায় বসেছি।
চুলোয় যাক মোজার ইতিহাস। আমরা বরং এবার জেনে নিই মোজার রংঢং।
মোজা কিন্তু এমন একটা জিনিস যেটা তোমার অনেক কাজের কাজি। টেবিলে পড়তে বসেছ আর নিচ দিয়ে এই ফাঁকে কামড়ে দিল মশা। তবে তোমার পায়ে যদি এক জোড়া মোজা থাকে তাহলে মশারা অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েই পড়বে। ধুলাবালি থেকে পা থাকবে সুরক্ষিত, শীত লাগবে না পায়ে আর ফ্যাশনের দিকটাও ঠিক ঠিক মনে রাখবে মোজা।
তাহলে বোঝো, মোজা কেমন কাজের কাজি।
ওহ! জানো তো জুতা কিন্তু মোজার খুব কাছের বন্ধু। যারা দুজনেই আবার তোমার কাজে নিয়োজিত। তাই, এদের পায়ে পরে নাও কিন্তু পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ো না। মোজা নিয়ে কিআর হয়ে আমি কথা বলেছিলাম বসুন্ধরা মলের মোজাবিক্রেতা আরমান সরকারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘জুতার সঙ্গে ছাড়াও মোজা পরা যায় ঘরের মধ্যে স্যান্ডেল বা খালি পায়ে। তাই, অন্য সময়ের চেয়ে মোজার বিক্রি শীতে বেশি বেড়ে যায়। এটা শীতের জন্য অনেক কার্যকর। কিশোরদের উপযোগী মোজায় নানা রঙের ছোঁয়া। তারা রঙিন মোজাই বেশি পছন্দ করছেন।’
মোজার রকমফের
নানা ধরনের মোজার দেখা মিলছে বাজারে। কোনোটা লম্বায় হাঁটু ছঁুয়ে ফেলবে, তো কোনোটা আবার একদম পিচ্চি। যেটা শর্ট মোজা নামেই বেশি পরিচিত। শর্ট মোজা সাধারণত পরা হয় জুতার সঙ্গে। কেডসের সঙ্গে বেছে নিতে পারো পায়ের খানিকটা ওপরে আসা মোজাগুলো। এটা মাঝারি সাইজের। আর বাসায় পরার জন্য আরেকটু লম্বা মোজা কিনতে পারো। তাহলে বিছানা বা ফ্লোর সবখানেই দাপাদাপি করে বেড়াতে পারবে। লাল, নীল, হলুদ, কমলা, কালো, সাদা, খয়েরি কোন রঙের মোজা নেই বাজারে। নিজের পছন্দের রংটা বেছে নিয়ে পা করে তুলতে পারো রঙিন। সুতি, উলের কাপড়, জার্সির কাপড় নানা কাপড়ের মোজা বাজারে পাবে।
কেমন দামে কিনতে পাবে
যারা ভাবছ মোজার দামটা না জানি কত্ত হবে, তাদের বলছি ব্যাপার না বস! দাম তোমার হাতের নাগালেই। স্কুলের টিফিনের সময় যে ২০ টাকার ঝালমুড়ি খাও একদিন সেটা বাদ দিলেই কিনে ফেলতে পারবে এক জোড়া চকচকে মোজা।
সাধারণ মার্কেটে ২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই ভালো ভালো মোজা পাওয়া যায়। তবে আছে একটু বেশি দামের মোজাও। সেটা অবশ্য ব্র্যান্ডের মোজা। বাটা, গ্যালারি অ্যাপেক্স, ক্রোকোডাইল, পুমাসহ নানা ব্র্যান্ডের মোজা কিনতে পারো ৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
যেখানে পাবে
আর কিনতে পারবে সারা দেশের যেকোনো পোশাকের মার্কেটে বা ছোটখাটো দোকানে। বড় বড় শহরে তো ফুটপাতেই মোজার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
মোজার দুর্গন্ধ এড়াতে চাইলে
যারা পায়ে গন্ধ ছড়ানোর ভয়ে মোজা পরো না তাদের জন্য সুপরামর্শ। আর যারা নিয়মিত মোজা পরো তাদের জন্য মোজা ভালো রাখার পরামর্শ দিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ তারজিমা শারমিন:
· নিয়মিত পা ধুয়ে পরিষ্কার করে তারপর মোজা পরো
· মোজার গন্ধ এড়াতে একাধিক মোজা ব্যবহার করা ভালো
· জুতা পরলে যেসব জুতায় বাতাস চলাচল করতে বা একটু নরম তেমন জুতা বেছে নিতে পারো
· একবার পরার পরই মোজা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিয়ো
· যাদের পা ঘামে তারা মোজা পরার আগে ঘাম প্রতিরোধক লোশন কিনে লাগিয়ে নিতে পারো
· এ ছাড়া, পা পরিষ্কার রাখতে মরা চামড়া তোলা, নখ কাটা ইত্যাদি কাজ ঠিকমতো করতে হবে
ছবি: কবির হোসেন
মডেল: শাহরিন, দুর্জয় ও ইরা