—আচ্ছা, আমি কীভাবে বুঝলাম যে শীত এসে গেছে, আর আমাকে শীত নিয়েই লিখতে হবে?
উত্তর খুবই সোজা, টেলিভিশনে বেবি লোশন, পেট্রোলিয়াম জেলি, উইন্টার ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন দেখে।
—আর তুমি কী করে বুঝলে? এ উত্তরটা আরও সোজা। আমার গায়ে কাপড়ের বহর দেখে!
যাহোক বুঝেই যখন ফেলেছ, তখন শীতের এই সময়ে শরীরের নানা অংশকে উষ্ণ রাখার কিছু টিপসও তো তোমাদের দেওয়া দরকার, তাই না? মনে রাখবে, এই শীতে মাথা গরম রাখতে চাইলে বিটিভি দেখবে।
চোখ গরম রাখতে চাইলে বাংলা সিনেমা দেখবে।
কান গরম রাখতে চাইলে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য শুনবে।
পেট গরম রাখতে চাইলে নিয়মিত ফুটপাতের খাবার পেটে প্রবেশ করাবে।
সুতরাং বুঝতেই পারছ, একটু আধটু শীত মোকাবিলা কতটা সহজ!
কিন্তু যে হারে ইদানীং আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহ এসে হানা দেয় তাতে মনে হচ্ছে, শরীরের নানা অংশকে শুধু গরম রাখলেই চলবে না। শীতের প্রকোপে তৈরি হওয়া রোগবালাইয়ের সঙ্গেও যুদ্ধে নামতে হবে। অথচ দেখো ঠিক এ সময়টাতেই কি না আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
আর এ জন্যই সহজে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই। তা ছাড়া আরও কিছু রোগের সমস্যাও বেড়ে যায়। শীতে শিশু ও বয়স্কদের সমস্যা হয় বেশি। তবে আশার কথা হলো স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে একটু যত্নশীল হলে অনেক সমস্যা আমরা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারি।
ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি
এক বন্ধু বলল, শীত আসামাত্রই আমার কাশির পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে ভোগা বাবা যতবার মূত্র বিসর্জনে গেছেন, আমি তার চেয়ে দ্বিগুণ বার কাশি দিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার কী হয়েছে?
বললাম, তোর বাবার যেমন বহুমূত্র, তেমনি তোর হয়েছে বহুকাশি!
তবে আমার বন্ধুটির কিন্তু খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই, ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশি এ সময়ের একটি সাধারণ সমস্যা। ফ্লু ভাইরাস এ সময় বেশিই আক্রমণ করে। আবার অধিকাংশ ঠান্ডাজনিত ভাইরাসই সরাসরি সংস্পর্শে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহূত জিনিসপত্রের মাধ্যমে রোগ অন্যের ভেতর ছড়াতে পারে। এই জীবাণুগুলো মানুষের দেহ ছাড়াও ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কখনো কখনো কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকে। তাই সারা দিনে বেশ কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। যখন-তখন চোখ, নাক ও মুখে হাত দেওয়া যাবে না। সর্দি-কাশি হলে গরম পানির ভাপ নেওয়া, লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া করা, গরম আদা-চা খাওয়া উচিত।
রিংকু বেজায় কৃপণ। একদিন তার বাড়িতে হাজির হলো তার বন্ধু সোহেল।
সোহেল বলল, কিরে রিংকু, তোর বাড়িতে এলাম, কিছু খাওয়াবি না?
রিংকু বলল, কী খেতে চাস, বল। ঠান্ডা, না গরম?
সোহেল তো মহা খুশি, নিয়ে আয়। ঠান্ডা-গরম দুটোই খাব।
রিংকু হাঁক ছাড়ল, ‘কই রে জগাই, ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আর চুলা থেকে এক গ্লাস গরম পানি নিয়ে আয়!’
তবে চিকিৎসকেরা কিন্তু বলেন, ঠান্ডা-গরম এমন একসঙ্গে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তোমরা কিন্তু সোহেলের মতো একসঙ্গে আবার দুটো খেতে চেয়ো না! বোঝা গেল?
নিউমোনিয়া
এই সময়ে তোমার, তোমার ছোট ভাইবোন আর তোমার দাদুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কেননা, তোমাদের বিশেষ করে তোমার ছোট্ট ভাই বোনদের ত্বক ও শ্বাসতন্ত্র নাজুক এবং অপরিণত। তাই এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না। সহজে ঠান্ডা হয়ে যায়। এ জন্য পর্যাপ্ত শীতের কাপড় পরাতে কার্পণ্য করা চলবে না।
আর হ্যাঁ নিউমোনিয়া হলে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগটি খুব খারাপ পরিণতির দিকে চলে যেতে পারে। তাই নিজে নিজে চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দেশে এত নিউমোনিয়া কেন তা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শীতের প্রকোপ কমে যাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন দাবি করলেও ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে পিছপা হবে না কিন্তু।
টনসিলাইটিস ও গলাব্যথা
ঠান্ডার কারণে গলার ভেতরে টনসিলের ইনফেকশন হতে পারে। এতে জ্বর এবং গলাব্যথা হয়। তা ছাড়া শীতে ঠান্ডা পানি খেলে বা গরম কাপড়চোপড় না পরলেও গলাব্যথা হতে পারে। মাথাব্যথা হলে যেমন মাথা টেপাতে ইচ্ছে করে, ঠিক সেভাবে গলাব্যথার চিকিৎসা খোঁজার কোনো কারণ নেই, বরং তোমার গলা ফোলা আর ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া ও বিশ্রাম নিতে হবে।
হাঁপানি
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলাবালির প্রকোপ থাকায় অ্যালার্জি হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলেও মানুষের নাক, কান ও গলায় অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। ফলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই ধুলাবালু এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের ধুলাবালু পরিষ্কারের প্রতিও যথেষ্ট গুরুত্ব দেবে। ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি শ্বাসনালিতে প্রবেশ না করে, সে জন্য মাস্ক ব্যবহার করবে। নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করবে (মানে আপনার কি ধারণা আমি চোখ দিয়ে শ্বাস নেই? যত্তসব!)। মাইন্ড করো না, এটা বিশেষভাবে বলার কারণ হলো, নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা উভয় বেড়ে যায়।
চোখ, নাক ও মুখে হাত দেবেন না। শীতকালে পকেটে হাত রাখাই ভালো। এতে একদিনে যেমন হাত উষ্ণ থাকবে, অন্যদিকে পকেট মারেরাও তেমন সুবিধা করে উঠতে পারবে না। ভালো তো। ভালো না?
নাক পরিষ্কার করার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করবে। বাসায় বলতে পারো, কার্পেট ব্যবহার না করতে পারলেই ভালো। লোমযুক্ত কম্বল বা চাদর ব্যবহার করবে না। অ্যাজমা থাকলে শীতকালজুড়েই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনহেলার ব্যবহার করবে।
শুষ্ক ত্বকের সমস্যা
সরকারি দল বলছে, বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রে এত শীত নেমেছে, যত শীতই আসুক না কেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিরোধী দল বলছে, এই সরকারের দুর্নীতির কারণে দেশে এত শীত। এ জন্য শীঘ্রই হরতালের ডাক দেওয়া হবে।
এদের এসব কথায় তুমি আর আগের মতো কৌতুক খুঁজে পাচ্ছ না, কেননা শীত আসতেই তোমার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেছে। এতে ত্বক চুলকাতে পারে, ফেটে যেতে পারে এবং বিভিন্ন রকম চর্মরোগ তোমাকে জ্বালিয়ে মারতে পারে। ভয়ের কিছু নেই, ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করলেই এটি সমাধানযোগ্য। এ জন্য অলিভ অয়েল বা লোশন ব্যবহার করতে পারো। আর অতি অবশ্যই বেশি করে পানির পাশাপাশি শীতকালীন শাকসবজি আর ফলমূল খাবে।
খুশকি
শীতকালে খুশকি সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। খুশকি কিন্তু মাথার মরা চামড়া ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু এর ফলে মাথার চামড়া চুলকায়। খুশকির সঙ্গে প্রদাহ থাকলে তাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে। খুশকিকে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়। খুশকি শ্যাম্পু দিয়ে দমিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে মাথার চুল ঝরে যেতে পারে। আর হ্যাঁ, কখনোই মাথা ভেজা রাখা যাবে না। একজনের চিরুনি আরেকজন ব্যবহার করা যাবে না। ঠান্ডা যতই পড়ুক, গোসল করতে ভয় পেলে চলবে না। যে তুমি ভাবছ বড় হয়ে ব্যাটম্যান হবে, সে তুমি এখন সামান্য ‘বাথ ম্যান’ হতে পারবে না? তা হবে না, তা হবে না!
তুমি তো আর সাপ, ব্যাঙ নও যে, শীতের ভয়ে শীতনিদ্রায় চলে যাবে। তোমাকে তোমার প্রতিদিনের পড়াশোনার কাজ খেলাধুলার মধ্য দিয়েই যেতে হবে, আবার স্বাস্থ্যরক্ষা করে শীতকে মোকাবিলাও করতে হবে।
আশা করছি তোমার এই শীতের সময়টা যেন অন্তত তুহিনের মতোই কাটে। তুহিনের কেমন কেটেছিল জানতে চাও? দাঁড়াও বলছি, টানা এক মাস শীতের ছুটির পর স্কুল খুলেছে।
ছুটির পরে প্রথম ক্লাসে ঢুকেই রহমত স্যার তুহিনকে জিজ্ঞেস করলেন, তা তুহিন শীতের ছুটি কীভাবে কাটালে তুমি?
তুহিন জবাব দিল, স্যার সোয়েটার পরে, মাফলার পরে, মোজা পরে, আর আর হুম, মনে পড়েছে, জ্যাকেট পরে!