বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। মাত্র দুটি উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ এবং একটি প্রবন্ধ সংকলনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে এমন একটি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা অবিস্মরণীয়।
প্রবাদপ্রতিম মানুষটির লেখা ১৪টি কিশোর উপযোগী গল্প নিয়ে বইটি সাজানো হয়েছে। গল্পগ্রন্থটিকে প্রধানত দুটি অংশে ভাগ করা যেতে পারে। একটি অংশে রয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের ৯টি গল্প এবং অন্য অংশটিতে রয়েছে লেখকের মৌলিক ৫টি গল্প।
তিনি চিরায়ত সাহিত্য ভীষণ পছন্দ করতেন। প্রথম অংশে সেটিরই প্রতিফলন ঘটেছে। গল্পগুলো হচ্ছে মহাভারতের পটভূমি থেকে ‘কুরুক্ষেত্র’, ইলিয়াড থেকে ‘হেক্টর উপাখ্যান’, শাহনামা থেকে ‘সোহরাব ও রোস্তম’, আরব্য রজনী থেকে ‘আবুল হাসানের গল্প’ এবং চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত ‘ডেভিড কপারফিল্ড’।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এই গল্পগুলোর দারুণ রূপান্তর করেছেন। গল্পগুলোর চিরায়ত আবেদনের সঙ্গে লেখকের অনবদ্য লেখনশৈলীর সমন্বয়টি খুব উপভোগ্য। সেই সঙ্গে গল্পগ্রন্থটিতে একটি দারুণ ব্যাপার হলো, বিশ্বসাহিত্যের ৭টি গল্পের সঙ্গে লেখক স্থান দিয়েছেন বাংলা, জুলু এবং চাকমা লোককাহিনিকে।
‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ থেকে ‘দেওয়ানা মদিনা’, জুলু এবং চাকমা লোককাহিনি থেকে ‘হাতির পেটে লড়াই’, ‘টুনটুনি ও কুনোব্যাঙ’ শিরোনামের গল্পগুলোর উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে মানুষের মুখে মুখে দীর্ঘকালজুড়ে যেসব কাহিনি প্রচলিত, সেসবের সবটুকুই চিরন্তন সাহিত্যের মর্যাদার দাবিদার।
আমি ফুলটাইম পাঠক আর পার্টটাইম লেখক।
ঐতিহাসিক স্থান–নিদর্শনের ঐতিহ্য ও অন্য রকম আবেদনকে ভিত্তি করে লেখা হয়েছে ‘নাটোর ঘুরে আসি’ এবং ‘ঢাকার চিঠি’। ‘কিশোরসমগ্র’–এর শেষ গল্প ‘বই পড়ার আনন্দ’তে বলা হয়েছে, কেবল সাহিত্যধারার বই পড়লেই চলবে না, নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে হলে বিজ্ঞান পাঠও প্রয়োজনীয়।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রচুর পড়তেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ফুলটাইম পাঠক আর পার্টটাইম লেখক।’ লেখকের অধ্যয়নের বিশাল ব্যাপ্তির কল্যাণেই গল্পগ্রন্থটি সমৃদ্ধ হয়েছে। ছোটদের জন্য তিনি যে গভীর মমতা লালন করতেন, সেটিও সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে । সব মিলিয়ে বইটি ভীষণ উপভোগ্য, অনবদ্য তো বটেই।