‘তাহার চোখ দুটি গোল গোল, কান দুটি অনাবশ্যক রকমের বড়, মাথায় এক বস্তা ঝাঁকড়া চুল’। এই চেহারাতেই সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু প্রথম দিন এসেছিল স্কুলে। তবে একালের স্কুলগুলোয় বোধ হয় এমন কোনো পাগলা দাশুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক বস্তা ঝাঁকড়া চুল কেটেই তো ঢুকতে হবে স্কুলে। কিন্তু তোমার চুলের ধরনটাই হয়তো তেমন, কিংবা তুমি চাইছ বেশ লম্বা রকস্টার ধরনের চুল থাকবে। মেয়েরা হয়তো ভাবছে, মাইলি সাইরাস বা সেলেনা গোমেজের মতো হবে হেয়ারস্টাইল। কিন্তু স্কুলের নিয়মকানুনের কথাও তো মনে রাখতে হবে। আবার এই গরমে আরামও চাই।
হেয়ারোবিকস ব্রাইডালের সৌন্দর্যবিষয়ক পরামর্শদাতা তানজিমা শারমীন জানান, কেমন হতে পারে চুলের স্টাইল।
ছেলেদের ছোট চুলই চাই
স্যালুনে গিয়ে ‘মেসি কাট’ শুনেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল? না, তোমার প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসির সঙ্গে এই হেয়ারস্টাইলের সম্পর্ক নেই। মেসি, অর্থাৎ এলোমেলো বলেই এমন নাম। বেশ চলছে এখন এটি। তবে কিশোরদের জন্য দুঃসংবাদ, স্কুলে বোধ হয় হবে না, স্কুলের পর চলতে পারে এমন চুল। হাত দিয়ে চুলটা একটু এলোমেলো করে নাও, জেল বা সামান্য পানি দিয়ে ঠিক করো। ব্যস, হয়ে গেল। আর স্কুলে একদম ঠিক করে আঁচড়ে ভদ্র ছেলেটি হয়ে থেকো। খাটো, একটু লম্বা যেকোনো ধরনের চুলেই চলবে এটি।
ওয়ান ডিরেকশন ব্যান্ডের হ্যারি স্টাইলের মতো চুল পছন্দ যাদের, তারা একটু অপেক্ষা করো। গরমের মৌসুমটা শেষ হোক বা স্কুল পেরিয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখো। এর পরই নাহয় বড় চুল রেখো। তানজিমা শারমীন তো তা-ই মনে করেন।
স্যালুনে গিয়ে কোরিয়ান পপ তারকাদের অদ্ভুত সব হেয়ারস্টাইল দেখে ভড়কে যেতে পারো। মনে পড়তে পারে ছোটবেলার সেই বাটি ছাঁটের কথাও। আচ্ছা, আসলেই কি মাথার ওপর বাটি বসিয়ে কাটা হতো বলে এমন নাম ছিল এর?
এত ভাবার দরকার নেই, কতগুলো হেয়ারকাটের নাম জেনে নাও। চুল কাটানোর সময় বলে দিতে পারো ট্যাপারড কাট, ফেড কাট, বাজ কাট বা ক্রু কাট দেওয়ার কথা। এগুলো সবই খাটো চুলের কাট। গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে পারো, কোনটা তোমার জন্য মানানসই। সামনে চুল বড় রাখতে পারো, তাতে স্পাইক করতে সুবিধা হবে। ঘাড়ের কাছে একদমই ছাঁটা থাকুক। আর সবচেয়ে বড় কথা, চুল কাটানোর সময় ঘুমিয়ে পোড়ো না যেন, একটু খেয়াল রেখো, ঠিকভাবে কাটা হচ্ছে কি না। মহা ফাজিল কোনো বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ো না, তার স্টাইল জ্ঞান যত ভালোই হোক না কেন। টেরই পাবে না, হয়তো ইশারায় হেয়াস্টাইলিস্টকে সে বলে দিয়েছে তোমার ঘাড়ের সব চুল গায়েব করে দিতে।
মেয়েদের পনিটেইল বা বেণি
এই বয়সের মেয়েরা নাকি ইমো কাটটা বেশ পছন্দ করে। অনেকগুলো লেয়ার, তাতে আবার থাকে নানা রঙের হাইলাইটস। তবে তানজিমা শারমীনের কাছে গিয়ে এমন হেয়ারস্টাইল করাতে চাইলে তোমাকে শুনতে হবে, না। কিশোর বয়সে এমন হেয়ারস্টাইল করানো উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি। এখন সাদামাটা চুলের স্টাইলই ভালো। তবে কোথাও বেড়াতে গেলে নানা রকম রঙিন ব্যান্ড ও ক্লিপ দিয়ে স্টাইলিং করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
স্কুলের জন্য টেনে বাঁধা একটা পনিটেইল বা বেণি, এটাই সবচেয়ে সহজ ও আরামদায়ক বলে মনে করেন তানজিমা শারমীন। খুব ছোট চুল হলে সামনে ক্লিপ দিয়ে আটকে খোলা রাখতে পারো। তবে স্কুলে ক্লিপ, ব্যান্ড যেটাই পরো, তা যেন কালো রঙের হয়। আর স্কুলের পরে তো নানাভাবেই বাঁধাতে পারো চুল। সকালের বেণিটাতেই জড়িয়ে নাও নানা রকম রঙিন ফিতা বা ক্লিপ, অথবা চুল খুলে শুধু সামনের দিকে একটা চিকন বেণি করে ফেলো। মাথাজুড়ে কয়েকটা বেণি করে নানা রকম ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখতে পারো।
লেয়ার বা স্টেপ কাট করানোর কথা ভুলেই যাও। স্কুলে গেলে মুখের আশপাশে উড়ন্ত চুলগুলোকে সামলাবে কীভাবে? এখন তোমাদের জন্য মানানসই, ইউ কাট বা সমান করে ছেঁটে রাখা চুল। সামনে ব্যাংস করতে পারো। তবে খেয়াল রেখো, তা যেন প্রয়োজন হলে ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখা যায়। হেয়ারস্টাইল বা চুলের কাটের ব্যাপারে সবার আগে আরামের কথাই মাথায় রেখো। সঙ্গে সময় ব্যান্ড বা হেয়ারক্লিপ রেখো।
চুলের যত্নে
চুল নাকি আচারের মতো, সব সময় তেলে ভিজিয়ে রাখতে হয়—নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠার সময় মা-খালাদের কাছে এটাই সব সময় শুনতাম আমরা। তবে এত কিছুর প্রয়োজন নেই, এই বয়সে পরিচ্ছন্ন থাকাই সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন তানজিমা শারমীন। কিশোর-কিশোরীদের জন্য বাড়তি কোনো সৌন্দর্যচর্চা বা পারলারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। এক দিন পর পর শ্যাম্পু করা উচিত। এই গরমে মাথার তালু ঘেমে যায় বেশ। সে জন্য চুল সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। চুলের ধরন অনুযায়ী বেছে নাও মানানসই শ্যাম্পু। আর সপ্তাহে এক দিন চাই তেল ম্যাসাজ। ঘণ্টা খানেক পর শ্যাম্পু করে ফেললেই চলবে।
হেয়ার স্পে্র বা জেল ব্যবহার না করাই ভালো। কখনো ব্যবহার করলে তা ঠিকমতো শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর রিবন্ডিং বা চুলে রং করানোর কথা ভেবো না একদম। এখন হয়তো করিয়ে ফেললে শখ করে, কিন্তু কয়েক বছর পর চুলের ক্ষতিটা তো তোমারই সামলাতে হবে।
ছবিঃ কবির হোসেন
মডেলঃ লামিয়া, আশাবরী, নিহাল ও রাফি