‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরো-ঝরো,
আউশের ক্ষেত জলে ভরো-ভরো,
কালিমাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।’ —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘মেঘের আঁধার মন টানে
যায় সে ছুটে কোনখানে
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের মাঠ পানে।’ —ফররুখ আহমদ
তাঁরা তো লিখেই খালাস, কিন্তু তোমার হয়েছে বিপদ, তুমি এখন কোন কবির কথা মানবে। বৃষ্টি এলে ঘরে বসে দেখবে নাকি বেরিয়ে পড়বে বৃষ্টিস্নাত পৃথিবী উপভোগ করতে? ধরো তুমি সিদ্ধান্ত নিলে, কবিদের মাঝে বিভাজন তৈরি না করে বরং চার্লি চ্যাপলিনের কথাটাই মানবে। যিনি বলেছিলেন, ‘সব সময় বৃষ্টিতে হাঁটা চাই, যাতে কেউ আমার চিৎকার করে কান্নার দৃশ্য দেখতে না পারে।’ সমস্যা হবে তখনো যখন শুনবে প্রখ্যাত ইংরেজ কথাসাহিত্যিক ক্যাথরিন ফিশারের কথা। তার কিশোর-কিশোরীদের ফ্যান্টাসি এবং বিজ্ঞানবিষয়ক একটি উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায় তিনি একটি মাত্র গান দিয়ে শুরু করেছিলেন, যাতে তিনি বলেছিলেন, ‘দেয়ালের কান আছে, দরজার চোখ আছে, গাছেরা কথা বলতে পারে, পশুরা মিথ্যা বলতে পারে, বৃষ্টি বিষয়ে সতর্ক থাকো, সতর্ক থাকো তুষারপাত বিষয়েও।’
যখন বন্ধুরা বলবে, চল দোস্ত বাইরে যাই, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলি, তখন মা বলবে, উঁহু বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না, তোমরা বরং ঘরে বসে লুডু খেলো!
এসব দ্বন্দ্বে পড়ে তোমার হয়তো বৃষ্টির ওপরই রাগ লাগল, কিন্তু সেটাও পারছ না, কারণ রাশিয়ান-আমেরিকান লেখক ভ্লাদিমির নবোকভ বলেছেন, ‘তোমরা বৃষ্টির ওপর রাগ কোরো না, কারণ সে কীভাবে ওপর থেকে পড়ে, সেটা সে জানে না।’
হলো তা? এসব ঘাঁটার চেয়ে তুমি বরং নিজেকেই জিজ্ঞেস করো, তুমি কী চাও? আমি অবশ্য তোমার উত্তরটা আন্দাজ করতে পারছি মার্কিন গায়ক রজার মিলারের কথা থেকে, তিনি বলেছিলেন ‘কিছু মানুষ বৃষ্টিতে হেঁটে যায়,আর কেউ কেউ শুধু নিজেকে সিক্ত করে নিতেই বেশি ভালোবাসে।’
ভালো তো, তুমিও তা-ই চাও। তবে বৃষ্টিতে অ্যালার্জি, মাথাব্যথা এ রকম সমস্যার মধ্যে যারা আছ, তাদের জন্য কিন্তু বর্ষাকাল বা বৃষ্টিবরণ পুরোটাই ভিন্ন। ঝুম বৃষ্টিতে তোমরা ঘর মাথায় তুলে আড্ডা দাও। বাদলা দিনে আড্ডা দেওয়ার মজাটাই আলাদা। আর যদি আয়োজন করা যায় ছোট কোনো বারবিকিউ পার্টি, তাহলে ব্যাপারটা কেমন মজার হবে, একবার ভেবে দেখতে পারো।
আর যাদের বৃষ্টিতে এমন কোনো অ্যালার্জি নেই, তাদের জন্য ঝুমবৃষ্টিতে ফুটবল খেলাটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। বড় কোনো মাঠ পেলে তোমাদের উচ্ছলতায় মাঠে যেন প্রাণ ফিরে আসে। বৃষ্টিতে ভিজে সব একাকার—জামাকাপড়, ভেজা শরীর, সারা গায়ে কাদামাটি মাখা হয়ে উঠবে। প্রাণোচ্ছল, প্রাণচঞ্চল, অসীম আনন্দময় ক্ষণ।
এত আনন্দ, তবু তুমি বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার মায়ের এত মাথাব্যথা কেন? কারণটা হলো, তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন, এতে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো নানা উপসর্গ দেখা দেয়। হ্যাঁ, বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এমনটা হতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে জ্বর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশিও হতে পারে। সুতরাং তোমার মায়ের ভয়টা কিন্তু মোটেও অমূলক নয়।
কিন্তু লক্ষ করো, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসার বড় কারণ হলো ভেজা কাপড় গায়ে শুকিয়ে যাওয়া। কারণ, বৃষ্টির পানিতে প্রতিদিন ভেজা হয় না বলে শরীর অভ্যস্ত থাকে না। তা ছাড়া বৃষ্টির পানি কিছুটা ঠান্ডা। প্রতিদিনের গোসলের পানির সঙ্গে এর ভিন্নতা রয়েছে। ফলে হঠাৎ ভিজলে জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। অন্যদিকে, কেউ যদি প্রতিদিন কলের পানিতে গোসল করে হঠাৎ একদিন পুকুরের পানিতে গোসল করে তারও এ সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টির পানিতে মাথার চুল ভিজে যাওয়ার পর ভেজার সঙ্গে সঙ্গে পানি মুছে না ফেললে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসতে পারে।
তাহলে কী দাঁড়াল? সাধারণত বৃষ্টিতে ভেজার সঙ্গে সঙ্গে কাপড় পাল্টে ফেললে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা কম হবে। তবে জ্বর এসে গেলেও ভয়ের কিছু নেই, এ জ্বর তেমন গুরুতর নয় বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। এ ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ঠান্ডা-জ্বর সেরে যাবে অনায়াসেই।
জ্বর এলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রুফেন জাতীয় ওষুধ খেতে পারো। শুরুতেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। জ্বর ১০২ ডিগ্রির নিচে থাকলে প্যারাসিটামলও খাওয়ার দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাবে।
সুতরাং বর্ষাকালে কেউ যদি বৃষ্টিতে দু-একবার ভিজতে চাও, সে ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করবে, যাতে অযাচিত ঠান্ডা লাগার হাত থেকে রেহাই পেতে পারো। এ জন্য তোমার যা করতে হবে তা হলো বৃষ্টিতে ভেজার পর দ্রুত শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা ও সারা শরীর মুছে ফেলা। ভেজা কাপড় পাল্টে শুকনো কাপড় পরে নেওয়া। যারা বাড়িতে এসি ব্যবহার করো তারা ভেজার ঠিক পরপরই এসিতে না এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর আসো। গোসলের পরই জোরে চালানো ফ্যানের নিচে যাওয়া যাবে না। এই তো।
তাহলে, তোমরা আজ একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই পারো, বেশির ভাগ সময় ছাতা মাথায় নিয়ে বৃষ্টিতে বের হলেও, সতর্ক থেকে মাঝে মাঝে ছাতা ছাড়াও বৃষ্টিতে বের হওয়া যায়! না হলে জীবন থেকে কিছু বাড়তি আনন্দ ফস্কে যেতে পারে।
এক বৃষ্টির দিনে মালিক তার কাজের লোককে বলল, রহিম, বাগানে পানি দিতে যা।
রহিম বলল, স্যার আজ তো বৃষ্টি হচ্ছে।
মালিক বলল, বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কী, তুই ছাতা নিয়ে যা!