আমার সমস্যাটা খুব জটিল। আসল কথা হচ্ছে, আমি জীবনের প্রতি বিরক্ত ও হতাশ। আমি এখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। অষ্টম শ্রেণিতে আমি জিপিএ–৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। নবম শ্রেণির শুরুটাও করেছিলাম ভালোভাবে। এসএসসিতে বোর্ডে প্রথম হওয়াই ছিল আমার লক্ষ্য। অষ্টম শ্রেণি থেকেই আমি একজন গণিত স্যারের কাছে পড়তাম। নবম শ্রেণিতে উঠে বুঝতে পারি লোকটা চরিত্রহীন। আশা করি সবটা বলতে হবে না। মা সব জানতে পেরে তখনই স্যারকে বাদ দিলেন। আমি গণিতে ভালো। বাসায় টিউটর নেই বলে সমস্যা হয় না। কিন্তু এখন আমি অঙ্ক করতে বসলেই সমস্যা হয়। লোকটা গায়ে একটা আতর দিত। এখন আমি অঙ্ক করতে বসলেই কেন যেন ওই আতরের গন্ধ পাই। আমার গা শিরশির করে। অঙ্ক করতে পারি না। অঙ্কের ফল খারাপ হওয়ায় আমি খুবই হতাশ। মনে হয় দুনিয়াতে কোনো ভালো মানুষ নেই। এখন আমি কারণে–অকারণে খারাপ ব্যবহার করি। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। খুব রাগ উঠলে আমি বাথরুমে চলে যাই, ভয়ে। সামনে যে আসে, তাকে মেরে বসি! আমি বুঝতে পারি এটা ভালো না, তবু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমাকে সাহায্য করুন। আমি এমন থাকতে চাই না।
তাসনিয়া রায়না
বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
উত্তর: তোমার সমস্যাটি বিস্তারিত জানানোর জন্য ধন্যবাদ। এই যে তুমি তোমার মাকে বা মনোবন্ধুকে তোমার সমস্যার কথাটি বলতে পেরেছ এবং কেমন করে এই সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিল, তা জানিয়েছ, এটাই অনেক জরুরি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকে এটি জানাতে পারে না, অনেকে বোঝে না যে তার সমস্যাগুলোর সঙ্গে ছোটবেলার নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কোনো সম্পর্কই আছে।
যা–ই হোক, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাসার গণিত শিক্ষক তোমার সঙ্গে যে আচরণ করেছিলেন, তার প্রভাব তোমার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ওই ঘটনাগুলো তোমার ব্যক্তিত্বের সুষম বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। যেহেতু সেই খারাপ লোকটি অঙ্ক করাতেন, ফলে এখন অঙ্ক করতে গেলেই তোমার মধ্যে একটি শর্তাধীন অবস্থা তৈরি হয়।
অঙ্ক—> সেই অঙ্ক স্যার—> তাঁর খারাপ আচরণ—> তাঁর প্রতি বিতৃষ্ণা—> অঙ্কের প্রতি বিতৃষ্ণা—> অঙ্কের প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া—> অঙ্ক পরীক্ষা খারাপ হওয়া।
তোমার মনে তৈরি হওয়া এই শর্তাধীন অবস্থা (কন্ডিশনিং) ভাঙতে হবে। তোমার মনে রাখতে হবে যে তিনি একজন খারাপ ব্যক্তি। তাঁর আচরণ ছিল খারাপ। কিন্তু অঙ্কের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। অঙ্ক একটি বিষয়, যার প্রতি তোমার মনোযোগ দিতে হবে। অঙ্কের সঙ্গে লোকটির কোনো সম্পর্ক নেই, এটা বিশ্বাস করতে থাকো। প্রতিদিন নিজেকে নিজে বলো যে ওই ঘটনার জন্য তুমি কোনোভাবেই দায়ী নয়। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করো। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাও।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।