প্রিয় মনোবন্ধু,
আমার বয়স ১৭ বছর। একাদশ শ্রেণিতে পড়ছি। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু ভিতু প্রকৃতির। দশম শ্রেণিতে যখন পড়তাম, আমার একজন শিক্ষক বেশ কয়েকবার ভূতের গল্প বলেছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। সেই সময় থেকেই আমি রাতে লাইট নিভিয়ে ঘুমাতে পারতাম না। মাঝেমধ্যে জেগে উঠে জোরে জোরে সুরা কালেমা পড়তাম আর কান্না করতাম। আমার তখন হুঁশ থাকত না। বেশ কিছুক্ষণ পর মনে হতো যে আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এর সঙ্গে এসএসসির টেনশন যোগ হয়। তারপর থেকে স্বপ্নে আমি মাঝেমধ্যেই অঙ্ক, অন্যান্য সাবজেক্ট, রেজাল্ট—এসব দেখতাম। এভাবেই এসএসসি শেষ হলো, বেশ কিছু সময় গেল এই সমস্যা নিয়েই। মাস দুয়েক আগে থেকে লাইট নিভিয়ে ঘুমানো শুরু করি, তবে আম্মু–আব্বুর সঙ্গেই ঘুমাই। তবে এখন রাতে হঠাৎ করেই আগের মতো উঠে বসে পড়ি, তবে এখন কান্না করি না। আম্মু–আব্বুকে চিনতে পারি না। মনে হয় ওরা অন্য কেউ, আমাকে মেরে ফেলবে। বেশ কিছুক্ষণ পর সবটা বুঝতে পারি। এখনো সেই আগের মতো পড়া নিয়েও স্বপ্ন দেখি, কখনো ঘুম থেকে উঠেই কিছু সূত্র চোখের সামনে দেখতে পাই। যখন পড়তে বসি তখনো মনে হয়, পেছন থেকে কেউ এসে আমার ক্ষতি করবে।
আমার আরও একটা সমস্যা আছে। আমি একটা বিষয়ে চিন্তা করতে থাকলে মুহূর্তেই অনেক চিন্তা মাথায় এসে যায়, চিন্তার মধ্যে ভারসাম্য থাকে না। মনে হয়, আমার মস্তিষ্ক আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার অনেক কিছু কল্পনাতেই করে ফেলি। যেমন হয়তো ভাবছি কারও সঙ্গে ফোনকল বা মেসেজে কথা বলব। ভাবতে ভাবতেই আমি কল্পনাতেই কথা বলা শুরু করে দিই, অপর ব্যক্তির উত্তর কী হবে, সেটাও নিজের মতো করেই সাজাই। আমি নিজের অজান্তেই নিজের সঙ্গে অন্যজন হয়ে কথা বলি। তারপর হঠাৎ মনে হয়, এতক্ষণ আমি কল্পনা করছিলাম!
আমার ভাইবোন নেই, বন্ধুবান্ধব দু-একজন আছে। আমার মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা অনেক কম। কিন্তু আমি স্বাভাবিক হতে চাই। আমি সত্যিই আর নিতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা, বাংলাদেশ
উত্তর: মনে রাখবে ভয়, ভয় বাড়ায় আর সাহস, সাহস বাড়ায়। তোমার শৈশবের কিছু স্মৃতি আর বেড়ে ওঠার পর্যায়ে ভয় পাওয়া থেকে এবং সেই ভয় মনের মধ্যে থেকে যাওয়াতে তোমার এই ধরনের অতি উদ্বেগ আর আতঙ্ক (প্যানিক অ্যাটাক) হচ্ছে। আর কেউ তোমার ক্ষতি করবে, এ ধারণা কখনো কখনো কিছু মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তুমি এর থেকে পরিত্রাণ পেতে শ্বাসের ব্যায়াম, রিলাক্সেশন, মাইন্ডফুলনেস—এগুলো প্র্যাকটিস করতে পারো। এ ছাড়া এই সমস্যার জন্য কখনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যদি সুযোগ থাকে, তবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা তোমার সবচেয়ে কাছের মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগে যোগাযোগ করতে পারো।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected] এই ঠিকানায়।