না না আমি আইসক্রিম সিনেমার কথা বলছি না। যে আইসক্রিমের কথা বললেই চোখ চকচক করে, জিব লকলক করে, আমি সেই আইসক্রিমের কথাই বলছি। আর আমার তো আইসক্রিমের নাম শুনলেই জিবে জল চলে আসে। আমেরিকান লেখক ফ্র্যাঙ্ক ওশান বলেছিলেন, ‘কেউ যদি আপনার হৃদয়ও ভেঙে দেয়, তাহলে তার মুখে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে চলে যাও, আর বসে বসে আইসক্রিম খাও।’ মনে শান্তি আনতে আইসক্রিমের চেয়ে ভালো খাবার আর কী আছে?
ছোটবেলায় আমার প্রিয় সুপারহিরো ছিল ‘আইসক্রিম ম্যান’। মানে আইসক্রিমওয়ালা। তাদের দেখলেই আমার হিংসে হতো। চাইলেই কিনা যখন-তখন বিনে পয়সায় আইসক্রিম খেতে পারে তারা! এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত হিংসে হতো আমার। ভাবতাম, আহা আমার বাবা যদি ‘আইসক্রিম ম্যান’ হতেন! যেহেতু আমাদের সবার বাবা আইসক্রিম ম্যান নন, সুতরাং কিনে খাওয়াই ভরসা। আর ওই কৌতুকটা তো নিশ্চয়ই শুনেছ—
মা একটা আইসক্রিম খাব, টাকা দাও তো?
গলায় ঠান্ডা লাগবে।
লাগবে না মা, আমি গলায় মাফলার পরে খাব।
ছোট-বড় সবার পছন্দের খাবার এই আইসক্রিম। কেবল যে মুখরোচক খাবার তা নয়, আইসক্রিমের পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ট। তবে পুষ্টিমানটা নির্ভর করে উপাদান ও তার পরিমাণের ওপর। নানা ধরনের ফ্লেভার ও উপাদানের পরিবর্তন এনে নানা স্বাদ ও গন্ধে ভিন্নতা আনা যায়। যেমন ভ্যানিলা, চকোলেট, ম্যাঙ্গো, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। আবার আইসক্রিমের পুষ্টি বাড়াতে ফল, বাদাম, কিশমিশ মেশানো যেতে পারে। ফলের জুস কিংবা ফালুদাতেও আইসক্রিম ব্যবহার করা হয়। গ্রীষ্মের গরমে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টায় অথবা বিকেলের আপ্যায়নে আইসক্রিম খুবই তৃপ্তিদায়ক।
এখন পর্যন্ত হাজারখানেক পদের আইসক্রিম বাজারজাত হচ্ছে। এমনকি মরিচের আইসক্রিম পর্যন্ত পাওয়া যায়, যদিও ভারতীয় অভিনেতা বোমান ইরানি একবার বলেছিলেন, ‘মরিচের আইসক্রিম খারাপ না, কিন্তু জীবনেও আর খাব না আমি।’
সুতরাং সবই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
তবে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় আইসক্রিম বেশ আরামদায়ক খাবার। কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে আইসক্রিম। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কিডনির পাথর হওয়ার মাত্রা কমাতে আইসক্রিমের ভূমিকা রয়েছে। যদিও টনসিলাইটিস হয়ে যাবে বলে আমাদের আইসক্রিম খেতে দেন না বড়রা। তবে টনসিলের অপারেশন হওয়ার পরপর কিন্তু ঠিকই আইসক্রিম খেতে দেওয়া হয়, রক্ত বন্ধ রাখার জন্য।
লেখক মারটি রুবিন বলতেন, ‘একজন কবিও তো বলতে পারবেন না, আইসক্রিম শব্দটি কখনো আইসক্রিমের চেয়েও মজার?’ সুতরাং আইসক্রিম আইসক্রিম না করে বরং মাঝেমধ্যে দু-একটা খেয়েই নাও। তবে তার আগে আইসক্রিমের প্যাকেটের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখটা ভালোভাবে দেখে নিয়ো। আর সব সময়ের জন্য জেনে রাখো, অতিরিক্ত আইসক্রিম খেলে দেহের ওজন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ছাড়া আইসক্রিম দাঁতের জন্যও ক্ষতিকর। আইসক্রিমে থাকে প্রচুর পরিমাণ চিনি, যা আমাদের শরীরের জন্য মোটেই ভালো নয়। তা ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আইসক্রিম রক্তের শর্করা বাড়াতে সাহায্য করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণে আইসক্রিম-জাতীয় খাবার খেলে শরীরে একান্ত প্রয়োজনীয় ফাইবার, মিনারেল ও অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আইসক্রিম মানেই হলো হাই ক্যালরি, লো ফাইবার এবং ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব—এই তিনের সম্মেলন। ফলে সহজেই হার্টের অসুখ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়। আবার আইসক্রিমে থাকে কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার, যা হতে পারে নানান রকম ক্যানসারের উৎস। যাঁরা টনসিল অপারেশন করেননি, তাঁদের জন্যও আইসক্রিম ক্ষতিকর।
তার মানে এই না যে, তুমি আইসক্রিম খাবেই না। প্রমীলা ব্যাডমিন্টনের সাবেক ১ নম্বর সায়না নেহওয়াল বলতেন, ‘আমি একটা ম্যাচ জেতার পর সেটা উদ্যাপন করি আইসক্রিম খেয়ে।’
আমেরিকায় প্রতিবছর গড়ে ২৩ লিটার আইসক্রিম খায় একজন মানুষ। অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ লিটার আর নিউজিল্যান্ডের মানুষ খায় গড়ে ২০ লিটার আইসক্রিম। তুমি আর কতইবা খাও? তবে চাইলে তুমি হলিউড অভিনেতা জ্যাকি চ্যানকে অনুসরণ করতে পারো। জ্যাকি চ্যান মাঝেমধ্যেই আইসক্রিম খেতেন। আর বলতেন, এর বিনিময়ে আমাকে অতিরিক্ত আরও ২০ মিনিট দৌড়াতে হবে, এই যা। কৌশলটা কিন্তু ভালো, ভালো না?
চাইলে নিশ্চিন্তে দ্বৈতা হাজরা গোস্বামীর ছড়াটিও পড়তে পারো তুমি—
সত্যি বলছি বিশ্বাস করো আইসক্রিমের এমন গুণ
রাগ অভিমান জল হয়ে যায় দুঃখী মানুষ হেসেই খুন
পরীক্ষাতে কম নম্বর? টিচার তোমায় বকছে খুব?
এক্ষুনি যাও অর্ডার করো সানডে মেঘের ফানডে স্কুপ।
মনে রেখো বন্ধুরা, জীবনটাও কিন্তু একটা আইসক্রিমের মতোই। তাই গলে যাওয়ার আগেই একে পুরোপুরি উপভোগ করে নিতে হবে। ভালো থেকো।