হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরি হলে কী করব
আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্থিসন্ধি হলো হাঁটু। কারণ, এই হাঁটুর ওপর ভর করে আমরা হাঁটাচলা, দৌড়াদৌড়ি, ওঠাবসা করি। হাঁটুর বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একটি হলো লিগামেন্টজনিত সমস্যা। মূলত হাঁটু গঠিত হয় তিনটি হাড়ের সমন্বয়ে।
১.ফিমার
২. টিবিয়া
৩. প্যাটেলা।
কিন্তু এ হাঁটুর ভারসাম্যতা নির্ভর করে ১১টি লিগামেন্টের ওপর। এর মধ্যে মূল কাজ করে চারটি লিগামেন্ট। এগুলো হলো
১. অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, ২. পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, ৩. মিডিয়াল কোলেটারাল লিগামেন্ট, ৪. লেটারাল কোলেটারাল লিগামেন্ট। আঘাতের কারণে যেমন খেলাধুলা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য দুর্ঘটনায় হাঁটুর লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, এমনকি ছিঁড়েও যেতে পারে।
যে অসুবিধা হয়
১. হাঁটুব্যথা, ফোলা।
২. হাঁটুর ভারসাম্য ঠিক থাকে না। দেখা যায় অসমতল জায়গায় হাঁটাচলা করার সময় হঠাৎ হাঁটু বেঁকে যায়।
৩. মাঝেমধ্যে জ্যাম (Lock) বা আটকে যায়। ৪. দৌড়ানো সম্ভব হয় না।
যাদের হয়
১. মূলত তরুণ-তরুণীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগে।
২. পেশাদার-অপেশাদার খেলোয়াড়। এ ছাড়া যেকোনো বয়সেই আঘাতের কারণ হতে পারে।
কীভাবে বোঝা যাবে লিগামেন্ট ছিঁড়েছে
১. প্রথমত রোগী আঘাতের বিবরণে বলবেন, হাঁটুতে আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে একটি মোচড় লেগেছিল।
২. দ্বিতীয়ত অসমতল জায়গায় হাঁটার সময় বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ পায়ের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং রোগীর পা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম হয়।
ওপরের লক্ষণগুলো পর্যালোচনা সাপেক্ষে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করে হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ব্যাপারে ধারণা করতে পারেন। হাঁটুর এক্স-রে এবং এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিৎসা, অপারেশন ও ব্যায়াম
হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার সর্বাধুনিক চিকিৎসা হলো অর্থোস্কোপিক রিকনস্ট্রাকশন অব অ্যান্টেরিয়র অর পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট। অর্থাৎ রোগীর শরীরের অন্য একটি লিগামেন্ট নিয়ে ছিঁড়ে যাওয়া লিগামেন্টে প্রতিস্থাপন করা। বড় ধরনের কাটাছেঁড়া না করে শুধু কয়েকটি ছিদ্র করেই এই অপারেশন করা যায়। অপারেশনের পর সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম করতে হয়। এর জন্য অবহেলা না করে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা