কোরবানির সময় হয়ে এল। চারদিকে গরুর ছড়াছড়ি। পাড়া–মহল্লায় কান পাতলেই শোনা যায় হাম্বা হাম্বা ডাক। রাস্তায় বেরোলে দেখা যাবে, দু–তিনজন মিলে কোনো একটা গরুকে নিয়ে যাচ্ছে। কোনো গরুকে টেনে টেনে নিতে হচ্ছে। কোনোটা আবার নিজে নিজেই সামনে যাচ্ছে। টানাটানি নেই। আলতো করে কেউ রশি ধরে রেখেছে। দুই রকম গরুই দেখা যাবে। কোনো গরু শান্তশিষ্ট। কোনোটা রাগী।
কোরবানির সময় অনেককেই দেখা যায় গরুর আক্রমণের শিকার হতে। ফেসবুক-ইউটিউবে এমন ভিডিও পাবে প্রচুর। এ সময় অনেকের মধ্যে খানিকটা রাখাল ভাব চলে আসে। ধরে নিচ্ছি তুমি এই দলে। গরু-ছাগলকে খাওয়ানো আর দেখাশোনা করতে ইচ্ছে করে অনেকেরই। তা ছাড়া গরুকে আদর করার ইচ্ছা হওয়াই স্বাভাবিক। মনে হতেই পারে, যাই, গরুটাকে একটু খাওয়াই। গরুর গায়ে কাদামাটি লেগে থাকলে একটু গোসল করানোর ইচ্ছা জাগতে পারে।
তুমি হয়তো বিকেলবেলা এলাকার গরুগুলো দেখতে বের হতে চাও। দেখতে চাও, কারা গরুকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে, আর কারা গরুকে শুধু একটা রশি দিয়ে গ্যারেজে বেঁধে রেখেছে। তোমার বন্ধুর বাসার গরুটাও দেখতে যেতে পারো। গরু দেখলে তোমার ইচ্ছা জাগতে পারে সেটাকে পোষার। তোমাদের বাসায় যদি কোনো গরু কোরবানির জন্য নিয়ে আসা হয়, তাহলে সেটাকে পোষার করার ইচ্ছা দমন করাই কঠিন। কারণ, ঈদ তো এসে গেল প্রায়। গরুটাকে তো ঈদের দিন থেকে আর পাওয়া যাবে না। ধরে নিচ্ছি তুমি এটা জানো। গরুকে পোষার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, তা বলার জন্য এই লেখা।
প্রথমে গরুকে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। চট করে গরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। কোনো গরুকে দেখে তোমার মনে হতে পারে, আহ! কী সুন্দর গায়ের রং! চোখ দুটো কী মায়াবী! মাঝেমধ্যে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আহা গরুটকে যারা পেলেপুষে বড় করল, তাঁর কথা ভেবে গরুটা কষ্ট পাচ্ছে নাকি? এসব ভেবে আবেগপ্রবণ হয়ে গরুর সামনে গেলে, আর গরু মারল ঢুস!
তাই সাবধান। গরুর এমন বাহ্যিক রূপ দেখে মুগ্ধ হওয়ার আগে একটু থামো। লক্ষ করো, বড় মানুষেরা গরুর কাছে গেলে গরুর আচরণ কী রকম। কেউ কাছে গেলে গরুটা কি সতর্ক হয়ে যাচ্ছে? স্বভাব কি খুব ছটফটে? কাউকে মাথা দিয়ে ধাক্কা দিতে চাচ্ছে কি? পা দিয়ে লাথি দেওয়ার রেকর্ড আছে? তাহলে এই গরু থেকে দশ হাত দূরে থাকতে হবে। হুট করে কাছে যাওয়া যাবে না। কাছে গেলে এই গরু গুঁতো দিতে পারে।
এলাকায় এমন একটা গরু খুঁজে বের করো, যে খুব শান্ত। বন্ধুসুলভ। বড় কেউ যার গায়ে হাত দিলে কিছুই বলে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বড়দের উপস্থিতিতে এই গরুর সামনে যেতে পারো। পেছনে গিয়ে কখনো সুবিধা করা যাবে না। কারণ, গরুর পা গরুর জন্য খুব মারাত্মক অস্ত্র। মনে রাখবে, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। তবে শান্তশিষ্ট গরুর গলার নিচে চামড়া ঝুলে থাকার জায়গাটায় হাত বুলিয়ে দিতে পারো। গরু খুব আরাম পাবে। সম্ভাবনা আছে, গরু গলাটা লম্বা করে দেবে। মাথাটা খানিকটা নিচের দিকে নামাবে। তখন মন ভরে আদর করা যেতে পারে।
তবে বেশিক্ষণ না। কারণ, এই গরু গত কয়েক দিনে অনেক চাপের মধ্য দিয়ে গেছে। সম্ভাবনা আছে দূরের কোনো এলাকা থেকে ট্রাকে দাঁড়িয়ে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তোমার এলাকার হাটে এসেছে সে। গরু যে পালন করে, তার কাছ থেকে হয়তো কিনে নিয়েছে কোনো ব্যাপারী। স্বাভাবিকভাবে কৃষক যত যত্ন করেছে, ব্যাপারী ততটা করতে পারেনি। অনেকগুলো গরু সামলাতে গিয়ে আলাদা করে কোনো গরুর যত্ন নেওয়ার তেমন সুযোগ হয় না ব্যাপারীর।
গরুর হাটে গরুর জন্য সুযোগ-সুবিধা যাচ্ছেতাই। হয়তো সারা দিন গরুটাকে অসমতল জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। তেমন কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। তোমার মহল্লার মতো অপরিচিত জায়গায় এসে গরুটা ভড়কে যেতে পারে, রেগে যেতে পারে। ঘটতে পারে এ রকম নানা কিছুই। তাই যখন গরুটা বসে বিশ্রাম করছে, জাবর কাটছে, তখন হুটহাট গরুকে উঠিয়ে দেওয়া, কিংবা আদর করার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখো। নতুন জায়গায় গরুকে মানিয়ে নিতে একটু সময় দাও। দিনের বেলা দেখেশুনে আদর করতে পারবে।
কয়েকটি বিষয় মানতেই হবে। যেমন গরু যেমনই হোক, তোমাকে শান্ত থাকতে হবে। গরুর পাশে ধীরে নড়াচড়া করা খুব জরুরি। চট করে বা দ্রুত নড়াচড়া করলে গরু ভয় পেয়ে যেতে পারে। শান্তভাবে ধীরেসুস্থে চলাফেরা করলে গরু চঞ্চল হবে না। খড়কুটো হাতে নিয়ে খাওয়াতে চাইলে বড়দের সাহায্য নাও। গরু খেতে না চাইলে জোর কোরো না। মুখের সামনে অনেকক্ষণ ধরে রাখার প্রয়োজন নেই।
ভিড় করে গরু দেখো না। গরু চঞ্চল হয়ে উঠলে চট করে সবাই দূরে সরে যেতে পারে না। তুমি যেহেতু ছোট, দ্রুত সরতে না পেরে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারো। গরুর ধাক্কা খেয়ে আহত হতে পারো। আর জানোই তো, লাল বা উজ্জ্বল রঙের জামা পরা মানুষের ছোটাছুটি গরু পছন্দ করে না। তোমার সুন্দর লাল রঙের জামা পরে গরুর সামনে না যাওয়াই ভালো।
গরুর তুলনায় ছাগল পোষা খুব সহজ। ছাগল পোষার সময় শুধু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। ছাগল ছুটে এসে মাথা আর শিং দিয়ে যেন ধাক্কা না দিতে দেয়। ছাগল কাঁঠালপাতা খুব পছন্দ করে। ছাগলকে পাতা খাইয়ে ভাব জমাতে পারো। এতে রাখাল হওয়ার অনুভূতি পূরণ হবে। শেষমেশ কিশোর আলোকে চিঠি লিখে তোমার গরু পোষার অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলো না।