মন ভালো রাখার প্রথম শর্ত কী
বছরের শুরু। তোমার স্কুল নিশ্চয়ই খুলে গেছে। মর্নিং শিফটে যারা স্কুলে যাও, তাদের ভোরে ঘুম থেকে উঠতে কেমন লাগে? রাতে ভালো ঘুম হলে ভোরে উঠতে অসুবিধা না হওয়ারই কথা। তবে এখন অনেকেই রাতে একটু ফোন চালিয়ে দেরি করে ঘুমায়। রাতে যদি ঘুম ভালো না হয়, তবে সকালে স্কুলে যেতে কষ্ট হবেই। এমন হলে সকালে শরীরটা ঝিমিয়ে থাকে। শরীর চলে না। যেন শরীরকে টেনে নিয়ে খুব করে বোঝাতে হয়, স্কুলে তো যেতেই হবে। চলো যাই।
ঘুম থেকে উঠে আবার বিছানায় ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত তোমার মন–মেজাজ কেমন থাকবে, তার প্রথম শর্ত হলো, ভালো ঘুম হওয়া। মন ভালো রাখার এই প্রথম শর্ত নিয়েই আজকের লেখা।
ঘুম কম হলে আমাদের মনে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। এটি অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরও খারাপ করতে পারে। কম ঘুমানো একটি ক্রনিক সমস্যা। ধরো তোমার ঘুমের চক্রটা খারাপ হলো, ফলে উদ্বেগ তৈরি হলো। এই সমস্যা সমাধান না করলে ঘুম আরও কমে যেতে পারে। ফলে উদ্বেগ আরও বেড়ে যেতে পারে।
মেজাজ ভালো না হওয়া শুরু হয় মৃদু উদ্বেগের মধ্য দিয়ে। স্কুলে আর বাসায় পড়ার চাপ বা অন্য চাপ বাড়লে উদ্বেগ বাড়ে। একসময় দেখা যাবে, ঘুম খুবই কম হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন হলে একে বলা হয় দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা। স্কুলজীবন বা কম বয়সে রাতে সবার সহজেই ভালো ঘুম হয়। ফলে খুব একটা সমস্যা হয় না। সমস্যা দেখা দেয় একটু বয়স বাড়লে। প্রতি রাতে কারও যদি মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুম হয়, তবে তার উদ্বেগ অনেক বেড়ে যায়। এভাবে অনেক তরুণ কম বয়সেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
আমেরিকানরা কম ঘুমায়
বাংলাদেশে স্কুলশিক্ষার্থীরা কতটুকু ঘুমায়, সঠিকভাবে এ তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবটা আছে। সেখানে এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী) জানিয়েছেন, প্রতি রাতে তাঁরা ৭ ঘণ্টার কম ঘুমান। কিশোর-কিশোরীদের অবস্থা আরও খারাপ। সকালে স্কুল থাকলে আগের রাতে প্রায় ৭০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী পর্যাপ্ত ঘুমায় না। ঘুমহীন এই অবস্থা সবারই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঘুমের অভাব হলে স্পষ্ট চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা কমে যায়। নির্দিষ্ট কাজ থাকলে কাজ করার সক্ষমতাও কমে। আর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তো আছেই।
২০২২ সালে ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহের প্রতিদিন সাত ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের মধ্যে স্বল্প বিষণ্নতার লক্ষণ থাকে। কম ঘুম মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, চাপ বাড়ে। নেতিবাচক আবেগগুলোর প্রতি সাড়া দেওয়ার পদ্ধতিই বদলে যায়। এর মানে হলো, একটি খারাপ খবরে আগে তোমার যেমন প্রতিক্রিয়া হতো, ঘুম কম হওয়ার কারণে তোমার প্রতিক্রিয়ার ধরন বদলে যাবে। ঘুম–গবেষক আরিক প্রাদারের মতে, কম ঘুম কিছু মানুষের ক্ষেত্রে একটি চক্র তৈরি করে। জীবনে ঢুকে পড়ে নেতিবাচক অনুভূতি, অকারণ চিন্তা ও চাপ।
ঘুমের সঙ্গে মানসিক সুস্থতার সম্পর্ক
ঘুমের অভ্যাসের সঙ্গে মানসিক সুস্থতার সম্পর্ক আছে। শুধু ঘুমের পরিমাণের ওপর মানসিক সুস্থতা নির্ভর করে না। ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। কারও কারও বিছানায় যাওয়ার পর ঘুমাতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে। আবার রাতে নিয়মিত ঘুম ভেঙে যায়। এভাবে চলতে থাকলে পর্যাপ্ত সময় ধরে (সাত ঘণ্টা বা এর বেশি) বিছানায় বিশ্রাম করার পরও বিশ্রামের অনুভূতি হবে না।
তুমি কীভাবে বুঝবে, তোমার বিশ্রামের অনুভূতি কেমন? যদি তোমার ধৈর্য কম হয় বা সহজেই রেগে যাও, তাহরে তোমার ভালো বিশ্রাম হয়নি বলে ধরে নিতে পারো। যদি বেশি বেশি নেতিবাচক চিন্তা করো, বেশি দুশ্চিন্তা করো, চাপ সামলাতে তোমার অসুবিধা হয়, তবে তোমাকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু একটা করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হওয়ার এই চক্র ভাঙতে হবে। এর জন্য তুমি চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করো।
সমাধান কী
কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপি ফর ইনসমোনিয়া (সিবিটি-আই) একটি থেরাপি। ঘুম কম হলে এই থেরাপির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, সিবিটি-আই ঘুমের ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর। যারা এটি চেষ্টা করে, তাদের ৮০ শতাংশের ঘুমের উন্নতি ঘটে। এই পদ্ধতিতে বিছানায় শুয়ে দুশ্চিন্তা করার পরিবর্তে অন্য কিছু করতে হবে। বিছানায় শুয়ে ঘুমের অপেক্ষা করার পরিবর্তে বই পড়া বা অন্য কিছু করতে করতে একসময় ক্লান্ত হবে। ক্লান্ত হলেই শুধু বিছানায় যেতে হবে।