তোমার মেগালোফোবিয়া আছে কি না, মিলিয়ে নাও
কোনো অসুস্থতা থাকলে তোমাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে নিজে গুগল করে কী অসুখ হলো, খুঁজতে গেলে কিন্তু বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়। তোমার হয়তো সামান্য জ্বর। একটু গায়ে ব্যথা। এই ব্যথা আর জ্বরকে মিলিয়ে তুমি যদি খুঁজতে শুরু করো, দেখবে নানা রোগের লক্ষণের সঙ্গে তোমার মিল খুঁজে পাচ্ছ। তবে তোমার জ্বর হলে তুমি বলতে পারবে, ‘আমার জ্বর’। একইভাবে তোমার যদি অনেক বড় কিছু দেখে ভয় লাগে, তবে তোমার মেগালোফোবিয়া থাকতে পারে। চলো এই ফোবিয়া বা ভয়ের সঙ্গে পরিচিত হই।
ফোবিয়ার নাম মেগালোফোবিয়া। বড় অদ্ভুত এই ফোবিয়া। এতে আক্রান্ত মানুষ বড় আকারের বস্তু দেখলেই ভয় পায়। এই ভয়ের পেছনে আছে বিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানীরা এই ভয়ের বিজ্ঞান খুঁজে বের করেছেন। ভয়ের বিজ্ঞান জানার আগে তোমার মেগালোফোবিয়া আছে কি না, মিলিয়ে নাও।
যদি বড় আকারের কিছু দেখলে বা কাছে গেলে তোমার খুব ভয় লাগে, তোমার ভেতর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, তাহলে ধরা যেতে পারে, তুমি মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত। যেকোনো জিনিসই বড় আকারের হতে পারে। প্রাকৃতিক কোনো কাঠামো, যেমন পাহাড় দেখলে তোমার আতঙ্ক জাগতে পারে। উঁচু কোনো ভবন, বড় কোনো জাহাজ এমনকি বড় আকারের কোনো মানুষ দেখলেও ভয় পেতে পারো।
বিচিত্র এই ভয় হাসপাতালে পরীক্ষা করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ণয় করা যায় না। আশা করি তোমার এই ভয় নেই। এই ভয় অবশ্য খুব বিরল। খুব কম মানুষই মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত থাকে। মেগালোফোবিয়াকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা একটি বিশেষ অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করেন। কত মানুষ এই ভয়ে আক্রান্ত, তার আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে পুরো বিশ্বে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত।
মেগালোফোবিয়াকে সাধারণ কোনো ভয় হিসেবে ভুল কোরো না। যেমন একটা হাতি দেখলে তোমার মুখ দিয়ে বের হতে পারে, ওরে বাবা! কত বড় হাতি। রাস্তার এক পাশে হাতি দেখলে অন্য পাশ দিয়ে তুমি চলে যেতে পারো। এটি মেগালোফোবিয়া নয়। মেগালোফোবিয়ার ক্ষেত্রে হাতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তোমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাবে। খুব চমকে উঠবে তুমি। মনে হবে তোমার ভয়ংকর বিপদ। এমন মনে হলে বুঝতে হবে, তোমার মেগালোফোবিয়া আছে। বড় আকারের বস্তু দেখে তোমার প্যানিক অ্যাটাক হলে বুঝতে হবে, এটা মেগালোফোবিয়া। সহজ ভাষায় বললে, মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষ বড় আকারের বস্তু দেখে তীব্র উদ্বেগ ও আতঙ্কে ভোগে।
মেগালোফোবিয়ার লক্ষণ কখনো কখনো তীব্র হয়। তখন শুধু বড় জিনিসের চিন্তা করলেও ভয় পেতে পারে আক্রান্ত ব্যাক্তি। এমনকি বড় কিছুর ছবি দেখলেও ভয় লাগতে পারে। একেক মানুষের ক্ষেত্রে একেক রকম হয় এই আতঙ্ক। আবার নির্দিষ্ট ধরনের বস্তু দেখেও ভয় পেতে পারে একজন মানুষ। হতে পারে, তুমি শুধু বড় আকারের ট্রাক দেখেই ভয় পাও। একজনের মনে হয়তো ভয় জেগে উঠবে বড় ভবন দেখে। কেউ হয়তো পাহাড় দেখে ভয় পাবে। কেউ ভয় পাবে লম্বা ক্রেন দেখে। সাগরের খুব উঁচু ঢেউ দেখে কারও বুক ধরফর করবে।
কখনো এই ভয় এত বিচিত্র হয় যে খুব সাধারণ কিছুও ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। একজন বডিবিল্ডার বা একটি হাতিও হতে পারে ভয়ের কারণ।
মেগালোফোবিয়া আছে কি নেই, তা বোঝার অন্যতম শর্ত হলো, এই ভয় অন্তত ছয় মাস থাকতে হবে। জীবনে এক–দুইবার বড় কোনো কিছু দেখে ভয় পেয়ে দাবি করা যাবে না, আমার মেগালোফোবিয়া আছে বা আমার অমুক ফোবিয়া আছে। দু–একটা লক্ষণ মিলে গেলেই ‘আমার অমুক ফোবিয়া আছে’ বলে দাবি করা ঠিক হবে না।
মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের বড় বস্তুর কাছে গেলে হৃৎস্পন্দন বাড়তে পারে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, ঘাম, হাত-পা কাঁপা, বমি বমি ভাব, হালকা মাথাব্যথা, আতঙ্ক, পালিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা দেখা দিতে পারে। ‘ভবিষ্যতে কখনো এ রকম বস্তুর মুখোমুখি হতে চাই না’—মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষ সাধারণত এ রকম চেষ্টা করতে পারে। সাধারণভাবে এর কারণ, মেগালোফোবিয়ার মতো নির্দিষ্ট ফোবিয়াগুলো জেনেটিক দুর্বলতার কারণে হতে পারে। বিশেষ কোনো ঘটনার মুখোমুখি হওয়া বা পুরোনো অভিজ্ঞতার কারণেও মেগালোফোবিয়া হয়।
আমরা ছোটবেলায় অনেক সংবেদনশীল থাকি। ছোটবেলায় তোমার জীবনে ঘটা সাধারণ কোনো ঘটনা তোমার বড়বেলাকে প্রভাবিত করতে পারে। ছোটবেলায় যদি বড় বস্তুর সঙ্গে জড়িত কোনো বিরূপ অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তোমার মেগালোফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। বড়বেলায়ও এ রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ছোটবেলায় কেউ যদি বড় কোনো ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখে বা সমুদ্রের তীরে বেড়াতে গিয়ে ঢেউয়ের ধাক্কায় কোনো শিশু ছিটকে পড়ে, এমন অভিজ্ঞতা মনে গভীর ছাপ রাখতে পারে।
তুমি যদি এমন ভীতিতে আক্রান্ত হও, তবে তোমার মধ্যে বড় বস্তুকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়। এড়িয়ে চলার ফলে মেগালোফোবিয়া বেড়ে যেতে পারে। তাই ভয়কে জয় করার জন্য মেগালোফোবিয়াকে মোকাবিলা করতে হবে।
তোমার ভীতিটি আছে কি না, জানতে হলে অবশ্যই তোমাকে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেতে হবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। তাঁরা তোমাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কত দিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছ? তোমার লক্ষণগুলো কতটা গুরুতর? এই ভয় তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে কি না? তোমার জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না।
মনে রেখো, ভয় পাওয়া একটি স্বাভাবিক আবেগ। ভয় আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। অকারণ ভয় যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন এটি কেবল সমস্যা হয়ে ওঠে। আমাদের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে এমন ফোবিয়া হলো, উচ্চতা বা গভীর পানিজনিত ভয়। মেগালোফোবিয়াও একই ধরনের ফোবিয়া। বড় বস্তু থেকে আমাদের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তাই সতর্কতার প্রয়োজন আছে।