শীতকালেই কেন পিঠা খাওয়ার ধুম?
শীতকাল অনেকের খুব পছন্দ। আবার অনেকেই শীতে জবুথবু। অনেকে সারা বছর ধরে ডিসেম্বর মাসের জন্য অপেক্ষা করেন। কবে ডিসেম্বর আসবে আর কবে শীত আসবে। ডিসেম্বরে সাধারণত পরীক্ষা শেষ হয়। শীতের মধ্যে পড়ে বছর শেষের ছুটি। বেড়াতে যায় অনেকে। আত্মীয়বাড়িতে আপ্যায়ন হয় ধুমধাম করে।
শীতের সময় সবার হাতে অবসর কাটানোর মতো সময় থাকে। এ সময়ে স্কুল-কলেজ, কোচিং, পড়ালেখার ছুটি। মা-বাবারাও কিছু দিনের জন্য কাজ থেকে বিরতি নেন। ব্যাগপোটলা বেঁধে সপরিবার বেশ কদিনের জন্য অনেকে দেন ছুট। গ্রামে, নানাবাড়ি বা দাদাবাড়িতে। সেখানে সব ভাইবোনদের একসঙ্গে জড়ো হলে আনন্দের সীমা থাকে না। প্রতিদিন সকালে লেপ-কম্বলের আরাম ছেড়ে মোটা মোটা শীতের পোশাক পরে নাস্তায় হাতে বানানো কোনো না কোনো পিঠা খাওয়া হয়। খেজুরের রস চুলার ধারে বসে খাওয়া চলে। সারা দিনই পিঠার আয়োজন, বাড়ির কোনো প্রতিবেশি মেহমান এসেছে শুনে নিজেরাও বানিয়ে পাঠানো চিরচেনা এইসব দৃশ্য যেন শীতকালের মূল ঘটনা। কিন্তু শীত এলেই কেন এত পিঠার আয়োজন করা হয়?
আমাদের দেশে শীতকাল ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আয়োজনে সারা বছর পিঠা তৈরি হয়। তবে শীতকালে হরেক রকম পিঠার সংখ্যা চোখে পড়ে বেশি। এই প্রচলন নতুন নয়। ছয় ঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু শীত, আর তার আগে আসে চতুর্থ ঋতু হেমন্ত। হেমন্ত ঋতু মানে নবান্ন উৎসব। এই সময়টায় সোনারাঙা আমন ধান ঘরে তোলেন কৃষক। ধান ভেঙে আসে নতুন চাল। এর কিছুদিন পরই আসে শীতকাল। তাই হেমন্তের নতুন চালে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে শীতে। বানানো হয় ভাপা পিঠা, চিতই, পাটিসাপটা, পুলি, দুধ পুলি বা দুধ চিতই, মালপোয়া, নকশিপিঠার মতো হরেক ধরনের পিঠা। আবার শীতকালে পাওয়া যায় খেজুরের রস। অনেকেই গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে তা দিয়েও তৈরি করে বাহারি সব পিঠা। খেজুরের গুড়ও পিঠা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এই দুই মিলে শীতকাল ঋতুটা হয়ে যায় পিঠা উৎসবের ঋতু।
গ্রাম বাংলায় শীতের এই দৃশ্যের চল দেখা গেলেও শহরে সেভাবে লক্ষ্য করা যায় না। তাই শহরে শীত এলেই রাস্তার ধারে দেখা যায় বিভিন্ন পিঠার ছোট ছোট দোকান। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন আয়োজন করে পিঠামেলার। সেখানেও হরেক রকম বাহারি পিঠার দেখা মেলে। অনেকে আবার শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাসায় তৈরি করে পিঠা। ছুটির দিনে পরিবার মিলে উপভোগ করে সেই মুহূর্ত। যেভাবেই হোক না কেন, এক কথায় পিঠা ছাড়া যেন শীত জমেই না। তাই তো শীত এলেই যেভাবেই হোক পিঠা চাই–ই চাই।