ছুটির ঘণ্টা। পরিচালক: আজিজুর রহমান। মুক্তি: ১৯৮০, বাংলাদেশ। ভাষা: বাংলা
কাহিনি: স্কুলের ক্লাসরুমে বসে সবারই কান খাড়া থাকে কখন ঢং ঢং করে ছুটির ঘণ্টা বাজবে। তারপর বইখাতা কাঁধে ফেলে হই-হই করে দে-ছুট! ১২ বছরের সুমন (আসাদুজ্জামান খোকন) আর তার বন্ধুরাও হঠাৎ ছুটি পেয়ে হইচই করতে করতে ছুটে এসেছিল স্কুলের গেটে। কাল ঈদ। তাই একটানা ১১ দিনের ছুটি পেয়ে তাদের আনন্দের আর সীমা নেই। তবে অন্যদের নিতে বাড়ি থেকে গাড়ি এলেও সুমনের গাড়ি আসতে একটু দেরি হয়। গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বাথরুম পায় সুমনের। দপ্তরি চাচা (রাজ্জাক) তখনো গেটে তালা লাগায়নি। তাই স্কুলের বাথরুমে ছুটে যায় সে।
কিন্তু বাথরুম সেরে বেরিয়ে আসতে গিয়েই দেখা গেল বিপত্তি। কে যেন গেট বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়েছে। সুমন প্রথমে ভেবেছিল, তারই কোনো বন্ধু হয়তো রসিকতা করে এ কাজ করেছে। কিন্তু অনেক ডাকাডাকিতেও কেউ দরজা খোলে না। একটু পরেই তার ভুল ভাঙে। সে বুঝতে পারে, স্কুলে কেউ নেই ভেবে দপ্তরি চাচা সব জায়গায় তালা লাগিয়ে চলে গেছেন। মুহূর্তেই একটা আতঙ্ক ভর করে ছোট্ট সুমনের মনে। তাহলে কী ঈদের দীর্ঘ ১১ দিনের ছুটিতে তাকে এই বাথরুমেই কাটাতে হবে! এত দিন মাকে দেখতে পাবে না!
ওদিকে সময়মতো বাড়ি না ফেরায় সুমনের বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। তার নানা-নানি এসেছেন ঈদে তাঁদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যেতে। কিন্তু ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয় তাঁদের জন্য। ছেলে হারানোর শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেন সুমনের মা। সবাই মিলে সুমনকে খুঁজতে শুরু করে। পাড়ায় পাড়ায় মাইকিং করে সুমনের হারানোর খবর প্রচার করা হয়। স্কুলের বাথরুম থেকে সুমন সব টের পায়। সে প্রাণপণে চিৎকার করে নিজের অস্তিত্ব জানাতে চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু সবই বিফলে যায়। কেউই তার কথা শুনতে পায় না। সবাই ধরে নেয়, এটা নির্ঘাত কোনো ছেলেধরার কাজ।
দেখতে দেখতে ঈদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও সুমনের অমানবিক আর কষ্টকর বন্দিজীবনের ছুটির ঘণ্টা বাজে না। ১১তম দিনে বাথরুমের কলের পানিও শেষ হয়ে যায়। এখন উপায়? সেটি জানতে দেখে নিতে পারো ছুটির ঘণ্টা ছবিটি। ১৯৮০ সালে নির্মিত এই ছবিটি সাদাকালো হলেও সবার ভালো লাগবে, সে-কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।