সাবান আবিষ্কারের আগে মানুষ শরীর পরিষ্কার করত কীভাবে

সারা দিন বাইরে থাকলে গরমে শরীর ঘেমে যায়। ধুলাবালি লাগলে শরীর চিটচিটে হলে গোসল না করা পর্যন্ত শান্তি লাগে না। শরীর পরিষ্কার রাখার জন্য আমরা গোসল করি। এর জন্য সাধারণত সাবান ব্যবহার করি। কিন্তু সাবান আবিষ্কারের আগে মানুষ নিজেদের শরীর পরিষ্কার করত কীভাবে? গোসলের সময় সাবানের বদলে তাঁরা কী ব্যবহার করত?

সাবানের একটা সহজ, সুন্দর ও দীর্ঘ ইতিহাস আছে। শত শত বছর ধরে মানুষ পানি দিয়ে গোসল করেছে। উদাহরণ হিসেবে সিন্ধু সভ্যতার কথা বলা যায়। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মহেঞ্জোদারোতে ছিল বিশালাকার বাথ বা স্নানাগার। বর্তমানের ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানজুড়ে ছিল মহেঞ্জোদারোর অবস্থান। এই স্নানাগারটি ছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম গণস্নানাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে সম্ভবত কোনো সাবানের ব্যবস্থা ছিল না।

মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ জুডিথ রিডনার বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী লাইভ সায়েন্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নিয়মিত সাবান ব্যবহারের আগে অনেক মানুষ অপরিষ্কার থাকত। শরীর থেকে সত্যিই দুর্গন্ধ বের হতো।’

আধুনিক সাবানে অনেক অতিরিক্ত উপাদান থাকে। তবে শুরুর দিকে সাবান এমন ছিল না। ইতিহাসবিদদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে মিসরে চর্বি ও সবজির তেলের সঙ্গে অ্যালকাইন লবণ মিলিয়ে সাবানের মতো বস্তু তৈরি করা হয়েছিল। সে জিনিস অবশ্য পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি চর্মরোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হতো। তবে সাবান তৈরিতে একসময় গাছপালা, পশুর তেল, বালি ও কাঠের ছাইয়ের মতো উপাদানও ব্যবহৃত হতো।

আরও পড়ুন

তবে নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির রসায়নবিদ সেথ রাসমুসের বলেন, ‘সাবানের প্রাচীন উপাদানগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ, সাবান ক্ষয় হয়। তাই সাবানের যাত্রা ঠিক কখন শুরু হয়, তা একদম নিশ্চিত করে বলা কঠিন।’

মেসোপটেমিয়া সভ্যতার দেয়ালচিত্র
ছবি : ওয়ার্ল্ড হিস্টরি

এরপরও বিজ্ঞানীরা যতটুকু প্রমাণ পেয়েছেন, তা থেকে অনুমান করা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে মেসোপটেমিয়ায় সাবানের ব্যবহার ছিল। তার আগে সুমেরীয়রা সাবানের পরিবর্তে পানি ও সোডিয়াম কার্বনেট (চুনাপাথর) ব্যবহার করত। গাছের ছাই থেকে তৈরি করত লবণ। এসব দিয়েই নিজেদের পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করত তারা।

আরও পড়ুন

কয়েক শ বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় খেজুর, পাইন ও তেঁতুলের মিশ্রণ দিয়ে সাবানের কাজ চালাত। এ ধরনের মিশ্রণ আধুনিককালের সাবানের মৌলিক উপাদানগুলোর সঙ্গে মেলে। যেমন ক্ষারের কাজ করত তেঁতুল আর তেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো খেজুর।

রিডনারের মতে, আধুনিক সাবানের সঙ্গে প্রাচীন সাবানের খুব বেশি পার্থক্য নেই।

কিন্তু প্রাচীনকালে মানুষ কীভাবে সাবানের মতো বস্তু তৈরি করল? রিডনার মনে করেন, মানুষ সম্ভবত অজান্তেই সাবান তৈরি করেছিল। পশুর চর্বি ও সবজির তেল লবণে মেশালে সাবানের মতো কাজ করত। ব্যাবিলন ও প্রাচীন মিসরে ঐতিহাসিকেরা এমন প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। তবে এগুলোর পাশাপাশি প্রাচীনকালে ন্যাট্রন নামে একধরনের লবণের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে সাবানের মতো একধরনের বস্তু তৈরি করেছিল। সম্ভবত স্নানের সময় তারা এগুলো ব্যবহার করত।

তবে প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। তারা শরীর পানিতে ধুয়ে মানে গোসল করে শরীরে সুগন্ধি অলিভ অয়েল মাখত। এরপর বাঁকা কিছু দিয়ে (বর্তমান বাঁশের চটার মতো) শরীর থেকে তেল মুছে ফেলত। এভাবে তারা গায়ের দুর্গন্ধ দূর করত।

আসলে ঠিক কখন স্নানের কাজে সাবানের ব্যবহার শুরু হয়, সে ব্যাপারে ঐতিহাসিকেরা নিশ্চিত নন। তবে পশ্চিমা বিশ্বে সম্ভবত অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সাবানের প্রচলন হয়। তার আগে মানুষ সুগন্ধি এবং এ রকম নানান জিনিস ব্যবহার করত।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন