একটু সময় নিয়ে খেয়াল করে দেখো তো, তোমার শরীরে কি কোনো অনুভূতি টের পাচ্ছ? আচ্ছা আরেকটু সময় নাও। শ্বাস-প্রশ্বাস কি স্বাভাবিক আছে, নাকি বেড়ে গেছে? ধীরে হলেও সমস্যা নেই। শুধু তোমাকে বুঝতে হবে, তুমি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছ কি না। তুমি কি ঠিক এই মুহূর্তে কিছু নিয়ে ভাবছ? নাকি এই লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছ? আসলে আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কে সব সময় একধরনের সংকেত পৌঁছায়। এসব সংকেত আমাদের জানায়, আমরা কেমন অনুভব করছি।
অনুভূতি কোথা থেকে আসে?
আমরা অনুভব করি আমাদের মস্তিষ্ক দিয়ে। দেহের ত্বকেও আমাদের অনুভূতি রয়েছে। এককথায় মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরে সব জায়গায় অনুভূতি রয়েছে। শুধু কম আর বেশি। আমরা খুশি হলে কিংবা মজার কিছু পেলে হাসি। বেশি মজার ব্যাপার হলে হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলি। এই কান্না হলো সুখের কান্না। আবার দুঃখ পেলেও আমরা কাঁদি। দুটি কান্নার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অনুভূতিরও ভিন্নতা আছে দুই ধরনের কান্নায়। আবার কেউ যখন হঠাৎ পেছন থেকে এসে চিৎকার করে ওঠে, তখন ভয়ে আমাদের গলা শুকিয়ে যায়। আমরাও পাল্টা চিৎকার করে উঠি। ভয় পেলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে না, বেড়ে যায়। হৃৎস্পন্দন বাড়ে। অর্থাৎ, শরীর মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় এবং আমাদের মধ্যে অনুভূতি তৈরি হয়।
অনুভূতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কথা না বলে শুধু অনুভূতির সাহায্যে অনেক কিছু প্রকাশ করা যায়। যেমন তোমার খুব মন খারাপ থাকলে নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকবে। তোমার চেহারা দেখলেই অন্যরা বুঝবে, তোমার মন ভালো নেই। হয়তো তোমার সঙ্গে তখন কেউ দুষ্টুমি করবে না। আবার তুমি যদি খুব আনন্দে থাকো, তাহলে কিন্তু কোথাও চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে থাকবে না। মুখ থাকবে হাসি হাসি বা স্বাভাবিক। অন্যরা হয়তো তোমার সঙ্গে এসে হাসি-ঠাট্টা করবে। তোমার বাবা কোনো কারণে রেগে থাকতে পারেন। চেহারা দেখলেই বুঝবে, তোমার বাবা কোন মেজাজে আছেন। রেগে থাকলে তুমি নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে রসিকতা করতে যাবে না। আবার রাগান্বিত অবস্থায় কেউ বলেও দেবে না যে আমি কিন্তু এখন প্রচণ্ড রেগে আছি, আমার সঙ্গে মশকরা করবে না। বরং তাঁর অনুভূতি না বুঝে মশকরা করতে গেলেই বিপদে পড়তে হবে। এসব ক্ষেত্রে আলাদা করে কিছু বলতে হয় না। দেখেই মনের অবস্থা ধারণা করা যায়। এ রকম পরিবেশে তুমি বরং বাবাকে সাহায্য করতে পারো। তাঁর রাগের কারণ জেনে সমাধান করতে পারো। কেউ দুঃখ পেলে তাঁকে সাহায্য করতে পারো। এ কারণে অনুভূতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শুরুতেই বলেছিলাম, অনুভূতির সঙ্গে মস্তিষ্ক ও শরীরের সংযোগ রয়েছে। চলো, একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক। এমন কারও কথা ভাবো, যাকে ভাবলে তোমার ভালো লাগে। তোমার বন্ধু কিংবা পোষা প্রাণীও হতেও পারে। অথবা কোনো জিনিস বা খাবার সম্পর্কে ভাবতে পারো, যে খাবারের কথা মনে হলেই তোমার মন ভালো হয়ে যায়। এবার খেয়াল করে দেখো তো, প্রিয়জন বা প্রিয় খাবারের কথা মনে হতেই কি তোমার মুখের ভাবের পরিবর্তন হয়েছে? মুখে কি একটু হাসি দেখা যাচ্ছে? কাঁধে কি কোনো পরিবর্তন লক্ষ করেছ? সঙ্গে বুক ও পেটের নড়াচড়াও খেয়াল করতে পারো। শ্বাস-প্রশ্বাস কি আগের মতোই আছে, নাকি প্রিয়জনের কথা মনে হতেই বেড়ে গেছে? এমন কোনো ঘটনার কথা মনে করো, যা মনে হলেই ভয় করে। বারবার ওই একই ঘটনা মনে করার চেষ্টা করো। নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছ। এই পরিবর্তনই হলো অনুভূতি!
সূত্র: দ্য উইক জুনিয়র