বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে সব বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এত দিনে তোমরা পাঠ্যবইয়ের সব অংশ শেষ করেছ নিশ্চয়ই। কোনো বিষয়ে কিছু বাকি থাকলে এখনই শেষ করে নাও। তোমরা কেউ কেউ হয়তো ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞানের প্রতি একটু বেশি সময় দিতে গিয়ে অন্য বিষয়ে সময় কম দাও। তাতে মোটের ওপর পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো হয় না। ভালো ফলাফলের জন্য বাংলা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি, ধর্ম—এসব বিষয়ের প্রতি সমান গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে ভালো পরীক্ষা হলেই সামগ্রিক ফল ভালো হবে। তাই এখন সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করো।
শরীর ঠিক তো সব ঠিক
সময়ের কাজ সময়ে করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়। তাই পড়াশোনার রুটিনটা সারা বছরই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। এখন পরীক্ষার আগে নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়ার দরকার নেই। রাত–দিনের সময়সূচি ভাগ করে নাও। তবে বিশ্রামের জন্য সময় রাখবে। এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। তুমি যদি এখন রাত জেগে কম ঘুমাও, তাহলে পরীক্ষার আগের দিন ঠিকমতো রিভিশন দিতে পারবে তো? অহেতুক দুশ্চিন্তা বাদ দিতে হবে। পড়া, খাওয়া, ঘুম সবই করতে হবে। তবে অবশ্যই নিয়মমতো। মনে রাখবে, শরীর ঠিক থাকলেই তুমি ফিট।
পরীক্ষার আগের দিন করণীয়
পরীক্ষার আগের দিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটা আসার আগেই তুমি পেয়ে যাবে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড। এগুলোর কয়েকটি ফটোকপি করে রাখবে। পরীক্ষার দিন কী কী নিয়ে যেতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলো গুছিয়ে নেবে। যেমন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মূল কপি, তিন–চারটি কলম, জ্যামিতি বক্স, লম্বা স্কেল, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি ইত্যাদি একটি স্বচ্ছ ফাইলে ভরে রাখবে। এমন কলম নেবে, যেগুলো দিয়ে দ্রুত লেখা যায়। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আগে থেকে কিনে রাখবে। গণিত পরীক্ষার জন্য তিন–চারটি পেনসিল আগের দিনই মসৃণ করে রাখবে। শার্পনার রাখবে নতুন। প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড কখনো লেমিনেটিং করবে না। পরীক্ষার আগের দিন রাত জাগবে না এবং অবশ্যই রিচ ফুড খাবে না।
৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার কক্ষে বসতে হবে
প্রতিদিনের মতোই পরীক্ষার দিন ঘুম থেকে উঠবে। কোনো রকম চাপ বা দুশ্চিন্তা যেন তোমার কাছে ঘেঁষতে না পারে। যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকবে, সেদিন সেই বিষয়বস্তু একটু উল্টেপাল্টে দেখে নেবে। স্বাভাবিক থাকবে। খুব বেশি সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই। আধঘণ্টা আগে তোমাকে পরীক্ষা কক্ষে বসতে হবে। তাই হাতে সময় নিয়ে বের হবে, যাতে ১ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারো।
পরীক্ষার আসনে বসে
পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়ে বহুনির্বাচনি অংশের উত্তরপত্র হাতে পাবে। উত্তরপত্রের ওএমআরে ওপরের অংশে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি লিখতে হবে। ওএমআরের নির্দিষ্ট ঘরে এসব সংখ্যা লিখে অবশ্যই মিলিয়ে নেবে। মিলিয়ে নেওয়ার খালি ঘরে যে ডিজিট লেখা হয়েছে, তার নিচের বৃত্তটি ভরাট করবে। অবশ্যই কালো বলপয়েন্ট দিয়ে ভরাট করবে। বৃত্ত ভরাটে কোনো কারণে যদি ভুল হয়ে যায়, তাহলে দুশ্চিন্তা করবে না। সঠিক বৃত্তটি ভরাট করবে। এ ক্ষেত্রে একই কলমে দুটি বৃত্ত ভরাট থাকতে পারে। তাতে কোনো সমস্যা হবে না। খেয়াল রাখবে, সঠিক ডিজিটের বৃত্তটি অবশ্যই ভরাট থাকতে হবে।
হাজিরা শিটে প্রতিদিনের পরীক্ষার নির্দিষ্ট ঘরে উপস্থিতির স্বাক্ষরের ঘরে পূর্ণ নাম লেখা ভালো। অনেকে বাংলা পরীক্ষার সময় বাংলায় স্বাক্ষর করে আবার ইংরেজি পরীক্ষার দিন ইংরেজিতে স্বাক্ষর করে। এটা ঠিক নয়। সব পরীক্ষায় স্বাক্ষর অবশ্যই এক রকম হতে হবে। সেটা ইংরেজিতেই হোক বা বাংলায়।
সৃজনশীল প্রশ্ন সব কটি পড়ে কোনটা তুমি দিতে পারবে, তা পেনসিল দিয়ে শনাক্ত করে নিতে পারো। তোমার কাছে যেটা সহজ মনে হয়, সে প্রশ্নের উত্তর আগে দেবে। প্রশ্ন ভালো করে পড়ে বুঝে নিতে হবে। ঘড়ি দেখবে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদিসময় খুব বেশি চলে যায়, তবে পরবর্তী এক বা একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
রিভিশনে কমবে ভুল
সময়ের প্রতি সচেতন থেকে হাতে ১০–১৫ মিনিট রাখার চেষ্টা করবে। কারণ, রিভিশন দিতে পারলে ভুলের পরিমাণ কমবে। বিশেষ করে গণিতের ক্ষেত্রে রিভিশন দিতে পারাটা জরুরি বিষয়। শুধু গণিত নয়, সব বিষয়েই রিভিশন দিতে হবে।
ওভার রাইটিং করবে না
ওভার রাইটিংয়ে পরীক্ষক বিরক্ত হতে পারেন। তাই ওভার রাইটিং এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এরপরও কোনো বিষয় ভুল হলে একটানে কেটে দেবে। গণিতের ক্ষেত্রে ওভার রাইটিংয়ে সঠিক সংখ্যাটি বোঝা যায় না। একাধিক দাগ দিয়ে কাটা ঠিক নয়।
পরীক্ষা শেষ হলে
প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে কে কয়টা বহুনির্বাচনি সঠিক দিতে পেরেছ, কে কয়টা পারোনি—এসব নিয়ে একদমই আলোচনার দরকার নেই। কয়টা ঠিক হয়েছে আর কয়টা হয়নি, এসব মেলানোর কোনো দরকার নেই। কার অঙ্কের উত্তর কত, কে কে কী ভুল করেছ, তা নিয়ে একদম মাথা ঘামাবে না। এসব মেলাতে গিয়ে যদি দেখো তোমারটা ভুল হয়েছে, তাতে তোমার মন খারাপ হবে, যা পরবর্তী পরীক্ষায় প্রভাব ফেলবে। হল থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় এসে হাত–মুখ ধুয়ে খাওয়াদাওয়া করে বিশ্রাম নেবে। বিকেল থেকে পরের দিনের পরীক্ষার বিষয়ে মনোযোগী হবে।
আরও একটু কথা
জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর পাঠ্যবই অনুসারে হতে হবে। পাঠ্যবইয়ে কোনো কিছুর ‘সংজ্ঞা’ বা ‘বলতে কী বোঝায়’ জাতীয় প্রশ্নের হবহু উত্তর দেওয়া থাকে। এগুলো যথাযথভাবে মনে রাখতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে ঘাবড়ে যাবে না। গভীর মনোযোগ স্থাপন করে লেখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনোযোগী হলে একসময় না পারা প্রশ্নের উত্তরও লেখা সম্ভব হয়ে যেতে পারে। তাই কোনো অবস্থায়ই মনোবল হারানো যাবে না। যেসব বিষয়ে চিত্রাঙ্কন করতে হয়, সেসব ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কনটা সঠিক হলেই হবে। সুন্দর করতে গিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না।
মনে রেখো
পরীক্ষা শেষে প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, জ্যামিতি বক্সসহ যেসব জিনিস পরীক্ষার কক্ষে নিয়েছ, সব খেয়াল করে অবশ্যই নিয়ে আসবে। শুভকামনা তোমার জন্য।