পরীক্ষার ফল ভালো করার উপায়টা আজ আমি তোমাদের শিখিয়ে দেব। সবচেয়ে সহজ উপায়টা হলো, জিনিসটা শিখে ফেলা। জিনিসটা কী, বুঝে ফেলা। তা করতে হলে বিষয়টা তোমার ভালো লাগতে হবে। ভালো লাগাও কিন্তু অনুশীলনের ব্যাপার। চর্চার ব্যাপার। মানে প্র্যাকটিসের ব্যাপার।
আমি যেদিন প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁয় খেতে গেলাম, খাবারটা আমার ভালো লাগেনি। কয়েকবার খাওয়ার পর চাইনিজ খাবার আমার প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছিল। আমি কিন্তু ছাত্রজীবনে ক্রিকেট খেলা অপছন্দ করতাম। সবাই যখন টেলিভিশনের সামনে ভিড় করে ক্রিকেট খেলা দেখত, আমার সেটা খুবই অপছন্দের ব্যাপার ছিল। তারপর বাংলাদেশ যখন ক্রিকেটে ভালো করতে লাগল, আমি আস্তে আস্তে ক্রিকেট খেলা দেখতে লাগলাম। এখন তো ক্রিকেট আমার খুবই প্রিয় একটা খেলা। পড়াশোনার ব্যাপারটাও তাই। প্রথম প্রথম কোনো একটা সাবজেক্ট ভালো না–ই লাগতে পারে। কিন্তু তুমি চেষ্টা করো, পড়ো, বোঝার চেষ্টা করো, আর অনুশীলন করো, দেখবে ওই বিষয়টাও তোমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। আর তোমার যদি একবার ভালো লেগে যায়, তাহলে তুমি সেই সাবজেক্টে ভালো করবেই।
তারপরও পরীক্ষার ফল ভালো করার কতগুলো কায়দা আছে। একটা হলো, পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন আসে, আর সেটার উত্তর কীভাবে লিখতে হয়, এটা একটু গবেষণা করে বের করে ফেলা। সংক্ষিপ্ত উত্তর যেখানে চাইবে, সেখানে বড় করে লেখার দরকার নেই। আবার যেখানে একটু বড় উত্তর পরীক্ষক আশা করবেন, সেখানে সংক্ষেপে উত্তর দিলে চলবে না। কাজেই প্রশ্নপত্রে ওই উত্তরের জন্য কত নম্বর বরাদ্দ আছে, সেটা দেখে নেওয়া ভালো।
বাংলা আর ইংরেজিতে ভালো করার আরেকটা উপায় হলো, প্রচুর বই পড়া। বাংলা আর ইংরেজিতে প্রচুর বই পড়ো, পত্রিকা পড়ো। ইংরেজি লিসেনিং আর স্পিকিং ভালো করার জন্য প্রচুর ইংরেজি ছবি দেখতে পারো। এখন তো তোমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। অনলাইনে পৃথিবীর সেরা সিনেমাগুলো দেখে ফেলো। আর ইংরেজি সাহিত্য বাংলা অনুবাদ না পড়ে ইংরেজি মূল বইটাই পড়ার চেষ্টা করে দেখতে পারো। ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলো ইংরেজিতে লেখো। সপ্তাহে অন্তত তিন ঘণ্টা ইংরেজি সাহিত্য থেকে পড়বে, তিন ঘণ্টা বাংলা সাহিত্য থেকে পড়বে। পাঠ্য বইয়ের কথা বলছি না। বলছি বাইরের বইয়ের কথা।
বাংলা আর ইংরেজিতে ভালো করার জন্য মূল বইয়ের মূল টেক্সট আগে বারবার করে পড়ে নিতে হবে। শুধু প্রশ্ন আর উত্তর শিখলে চলবে না। তারপর প্রশ্ন আর অনুশীলনী নিয়ে খাটতে হবে। কোন প্রশ্নের কী উত্তর হতে পারে, নিজের খাতায় সেটা লিখে ফেলো। তারপর কী লিখেছ, সেটা মনে রাখার চেষ্টা করো।
গণিতে ভালো করার জন্য প্রথমে যে পরামর্শটা আমি দেব, তা হলো, সরাসরি অনুশীলনীতে না গিয়ে আগে যে কথাগুলো লেখা আছে, সেগুলো পড়ো। পড়ে বোঝার চেষ্টা করো, জিনিসটা কী। তারপর সেখানে যে উদাহরণগুলো দেওয়া আছে, সেগুলো আগে চেষ্টা করো। সেগুলো সমাধান করো। এরপর অনুশীলনীতে যাও।
এরপরের পরামর্শটা হলো, চর্চা করো। অনুশীলন করো। গণিতে ভালো নম্বর পাওয়ার এক নম্বর উপায় হলো, প্র্যাকটিস করা। গণিত যত প্র্যাকটিস করবে, ততই তুমি পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে।
ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। শিক্ষকেরা যা বলেন, মন দিয়ে শুনতে হবে। আর যেদিনকার পড়া, সেদিনই পড়ে ফেলতে হবে। এটা যদি কেউ করে, তাহলে তার পরীক্ষার আগে রাত জেগে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না। হোমওয়ার্ক শিক্ষকেরা যা দেবেন, সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলা ভালো।
পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়তে নেই। পরীক্ষার দিন সকালেও পড়ার দরকার নেই। তোমার মনটা ভালো থাকতে হবে। শরীরটা ভালো থাকতে হবে। সে জন্য পরীক্ষার আগের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাবে। বেশি দুশ্চিন্তা করবে না। দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের পড়া কোনো কাজে আসে না; বরং ফুরফুরে মন নিয়ে পরীক্ষার হলে গেলে পরীক্ষা ভালো দেওয়া যায়।