আহা!...শীত! অনেকে শীত পড়তেই মনে মনে দেখে ফেলছ কত-কী! যে একটু কবি কবি, সে ভাবছ, ওহ! পাখির চোখের মতো ধূসর সব বিকেল গড়িয়ে আসবে, হলুদ পাতার মতো ঝরে যাবে! যার খুব ঘোরাঘুরির শখ, সে ভেবে ফেলেছ এই শীতে কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়! সাজেকের মেঘ কুয়াশার ভেলা দেখতে, নাকি কক্সবাজারের উত্তাল সমুদ্র! যারা ভূরিভোজের কাঙাল তাদের সামনে যে থরে-বিথরে পিঠাপুলির ভান্ডার ভাসছে তা আমি এখানে বসেই দেখতে পাচ্ছি। পিঠা আমারও ভীষণ পছন্দ কিনা! এদিকে আমার জেএসসি শেষ করা ছোট বোন, কিংবা তোমার আরও অনেক অনেক বন্ধু কি ভাবছে জানো?
ইইইহহ...শীত? সেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, খসখসে হাত-পা! ফাটা গোড়ালি, মাথায় খুশকি, ত্বকে খুশকি, কালো কালো ফেটে যাওয়া ঠোঁট, উঠে আসা চামড়া! কেন যে শীত আসে! আসেই যখন, এত সমস্যা যে কেন হয়? অনেকে আবার ভারি বিপ্লবী টাইপের। তাদের ভাবটা যেন, এসেছে শীত, চলেও যাবে। তাই বলে সারাক্ষণ পকেটে ভ্যাসলিন নিয়ে ঘুরব নাকি? সময় কোথায় এত? পড়া, খেলা, বই পড়া, বাসার কাজ, টিউশনি আর সবচেয়ে বড় বিষয়, শীতের সকালে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার আরামের চেয়ে বড় আর কিছু আছে নাকি? থোড়াই কেয়ার করি এসব সমস্যার।
মজার ব্যাপার হলো শীতকে যতই কাঁচকলা দেখাও, লাভ নেই। এই সময়টাই যেন কেমন। বাতাসে আর্দ্রতা কমে আর শুকিয়ে আসতে থাকে ত্বক। গাছের হলুদ পাতা বা বাকলের মতোই আমাদের শরীরেও জমতে থাকে মৃত কোষের দল। খুশকি হয়, চুল রুক্ষ হয়ে যায়, হাত-পায়ে খড়ির মতো সাদা সাদা দাগ হয় একটু ঘষা খেলেই। অনেকের ঠোঁট ফেটে রক্তারক্তি কারবার। সবচেয়ে বড় ঝামেলা, যখন বাসায় আম্মা বা অন্য কেউ বাগে পেলেই ‘গোসল করো না কেন, চেহারা এমন কেন, দেখে কেমন লাগছে, হাতে-পায়ে লোশন-ভ্যাসলিন দাও না কেন’ বলে চিল চিত্কারে বকাবকি শুরু করে, তখন মনে হয় এর চেয়ে বুঝি লোশনের গামলায় ডুবে লুকিয়ে থাকতে পারলেই ভালো হতো!
অনেক কারণেই বাড়তে পারে শীতের এই সমস্যাগুলো। যেমন কড়া রোদে দীর্ঘ সময় থাকা। থাকতেই হবে, নইলে স্কুল-কলেজ-গলির ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন ম্যাচ-পাড়ার আড্ডা কে দাবড়ে বেড়াবে? পানিশূন্যতা। হতেই পারে। কে সারাক্ষণ পানির বা জুসের বোতল নিয়ে ঘোরে বলো? বছরের পর বছর গভীর রাত জেগে থাকা। সে আর বলতে? হোমওয়ার্ক-সিনেমা-ফেসবুক-পিডিএফে বই পড়া...এসব সামলে উঠতেই তো সকাল হয়ে যায়। ওহ্! আরেকটি কারণ আছে, সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবারের অভাব। এসব গেল বেখেয়ালে শীতে কী কী হতে পারে তার বিবরণ।
তিন গোয়েন্দা পড়ে কিশোর পাশা হতে চেয়েছিলে কখনো? তার কিন্তু একটা ভারি মুদ্রাদোষ আছে। খুব বেশি চিন্তায় পড়ে গেলে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটে সে। ঠিক সে রকমটা না হলেও অনেকেই আবার নিচের ঠোঁট থুতনি পর্যন্ত টেনে এনে ছেড়ে দেয়! মোটেই তা কিশোরের মতো বুদ্ধি পেতে নয়, বরং মরে আসা চামড়া তোলার স্বভাবে। ফলাফল হয় ভয়াবহ। অনেকে রীতিমতো রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটায়, কেউ বারবার জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজায় আর হাসতে গেলেই ঠোঁটে টান পড়ে ব্যথায় কঁকায়। পুরো একটা শীতকাল হাসি থাকা ছাড়া! কিংবা হাসতে গেলেই ঠোঁটের অস্বস্তিতে ভোগা! ভাবতে পারো? কল্পনা করলেও তো শীত ছাড়াই হাড় জমে যাচ্ছে! হাসি ছাড়া কীভাবে থাকে? তার চেয়ে একটু একটু করে নিজের যত্ন নেওয়াই ভালো, কী বলো? এই নিয়ে বিশেষজ্ঞ কী বলেন শোনো একবার।
স্কয়ার হাসপাতালের পরামর্শক চিকিত্সক সৈয়দা ইশরাত জাহান বলেন, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা না থাকলেই দেখবে মুখ, চোখের নিচে ও ঠোঁট উজ্জ্বল দেখাবে। আর যাদের ঠোঁট বেশিই শুকিয়ে যায়, তারা অবশ্যই একটা ভ্যাসলিন বা লিপবাম রাখবে সঙ্গে। লেবেলে দেখে নিয়ো ওটার এসপিএফ উপাদানের পরিমাণ ১৫ বা ২০ যেন হয়। তোমাদের অনেকেই হয়তো একটু পরিশ্রমের পরেই অতিরিক্ত ঘেমে যাও। কিংবা কোনো দিন ধকলটা একটু বেশিই হতে পারে। সেদিন অবশ্যই মনে করে বাসায় ফিরে লবণপানিসমৃদ্ধ শরবত, গ্লুকোজ বা একটা ডাবের পানি খেয়ে ফেলতে পারো। এই শীতের রঙিন সবজিগুলো যদি একটু বেশি বেশি খেতে পারো, তবে তো আর কথাই নেই। তোমার আনন্দ আর স্বাস্থ্য, দুটোই মেলবে পাখা। হাসিখুশি থাকার বয়স এখন, শীতে কাবু হয়ে থাকার মানে নেই তো। বরং নিজের প্রতি একটু যত্ন নিয়েই শীতকে কাবু করে ফেলা যাক, কী বলো?