গ্রিক পুরাণের একটা গল্প বলি। নার্সিসাস ছিলেন এক সুদর্শন যুবক। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে তার এতই অহংকার ছিল যে অন্যদের অবজ্ঞা করত সে। ব্যাপারটাতে অসন্তুষ্ট হয়ে দেবতা নেমেসিস এমন ব্যবস্থা করলেন, যেন নার্সিসাসের একটা উচিত শিক্ষা হয়। একদিন নার্সিসাস পুকুরে তাঁর চেহারার প্রতিবিম্ব দেখতে পেলেন। নিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রইলেন। এরপর এমন হলো যে তিনি অন্য সবকিছু থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। অন্যদিকে নিজের প্রতিবিম্ব ধরতে গেলেই পানিতে মিলিয়ে যাচ্ছিল। একসময় হতাশ হয়ে পড়েন নার্সিসাস। অতিরিক্ত এই আত্মপ্রেমের জন্যই তাঁর মৃত্যু হয়। এ কারণেই আত্মপ্রেম শব্দটির ইংরেজি নার্সিসিজম। নিজেকে ভালোবাসা খুবই চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু যদি সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়? তখন সেটা বেশ সমস্যার কথা। তুমিও কি আত্মপ্রেমী? নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও, আর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও, তুমি কতটা আত্মপ্রেমী!
১. তোমার সঙ্গে কারও তর্ক চলছে। তুমি তার বক্তব্য শুনে মনে মনে এর মধ্যে কোনটি ভাবো?
ক. ‘এহহ্, এসেছে তর্ক করতে...যেন আমার থেকে বেশি জানে! হাহ!’ মনে মনে ভাবব কেন? সরাসরি এ কথা শুনিয়েও দেব।
খ.‘আরেহ্, তার বক্তব্য তো ঠিক। আমি এত গাধার মতো তর্ক করছি। মানুষ কত জানে! আর আমি?’
গ. মনে মনে ভাবব, কী করে আমার যুক্তিটা সহজ করে তাকে বোঝানো যায়।
২. ধরো, বন্ধুদের সঙ্গে চমৎকার আড্ডা মারছ। তোমার কোনো বন্ধু মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করতে সে সময়ের ছবি তুলল। ছবিটা নিয়ে প্রথমেই তোমার মাথায় যে চিন্তা আসবে—
ক. বাহ্, আড্ডার সুন্দর মুহূর্তটা ভাগ্যিস ফ্রেমবন্দী করে রেখেছে। ভবিষ্যতে এই ছবিটা দেখলে অতীতের কথা ভেবে ভালো লাগবে।
খ. ছবি? দেখি দেখি আমাকে সুন্দর লাগছে কি না?
গ. প্রথমে ভালো লাগবে, একটা সুন্দর স্মৃতির কথা ভেবে, তারপরই চিন্তায় আসবে আমাকে দেখলে ভূতের মতো লাগছে না তো? ঠিকঠাক থাকলেই হয়!
৩. ধরো, কেউ তোমার প্রশংসা করল। তা শুনে তোমার কী প্রতিক্রিয়া হয়?
ক. আমি আরও উৎসাহ দিতে থাকি, যেন প্রশংসা চালিয়ে যায়। আমি তো প্রশংসা করার মতোই মানুষ!
খ. হাসিমুখে ধন্যবাদ দিই। এর বাইরে তেমন কিছু বলার নেই তো!
গ. লজ্জায় লাল নীল হলুদ বেগুনি সবুজ...মানেহ যত রং আছে, সব হয়ে যাই। এত বিব্রত লাগে, ইচ্ছা থাকলেও কোনো উত্তরই দিতে পারি না।
৪. তোমার সমালোচনা করল কেউ। সমালোচনা কীভাবে সামলাও?
ক. প্রথমে বোঝার চেষ্টা করি ভুল না সঠিক সমালোচনা। যদি ঠিক হয়, তবে স্বীকার করে নিই আর ভুল হলে তার ভুল ধারণা ভাঙার চেষ্টা করি।
খ. আমার সমালোচনা করাই তো স্বাভাবিক। আমার মধ্যে প্রশংসা করার কিছু তো নেই। এখন আর মন খারাপও করি না এসব নিয়ে, সব মেনে নিই।
গ. কী? আমার সমালোচনা? কে? কার এত বড় সাহস যে আমার সমালোচনা করে? কিছু না, ওখানেই ধুয়ে দেব!
৫. তোমার সহপাঠী কোনো একটা কাজ বারবার চেষ্টা করেও পারছে না। তুমি বিষয়টি জানতে পেরে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে?
ক. নিজেকে ওর স্থানে কল্পনা করতাম। আমি হলেও হয়তো পারতাম না। ওর জন্য কষ্ট হতো, কিন্তু কি আর করা!
খ.যদি দেখি কাজটা আমার পক্ষে করা সম্ভব, তবে ওকে সহজ করে বুঝিয়ে বলব কীভাবে কাজটা করা সম্ভব।
গ. এত সহজ কাজ পারে না? হাহ্! এটা তো আমার বাঁ হাতের খেল!
৬. তোমাদের একটা দলগত অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। ফলে শিক্ষক একজন দলনেতা নির্বাচন করতে বললেন। তোমার এ ক্ষেত্রে মনোভাব কী হয়?
ক. আমিই হব দলনেতা। এটা আবার প্রশ্ন করার কী আছে?
খ. আর যে কেউ হোক, ভাই! আমি দলনেতা হতে চাই না। আমি তো কোনো কাজেরই না!
গ. দলে সবচেয়ে যে দক্ষ, সে–ই হবে।
৭. ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন...’, আয়নাতে নিজের চেহারা দেখে কী মনে হয়?
ক. সত্যি বলতে তো দোষ নেই, একটু পরপর আয়না দেখি আমি। দেখব না-ই বা কেন? আমার চেহারাটা বেশ দেখার মতোই।
খ. প্রয়োজন হলে আয়না দেখি। দেখি ঠিকঠাক দেখাচ্ছে কি না। আর অন্য সময় আয়নাতে চোখে পড়লে বিশেষ কিছু মনে হয় না।
গ. ভূততত! বলে একটা দৌড় দিতে ইচ্ছা করে। নইলে ভাবি, আমি একটা আস্ত পটেটো!
৮. ধরো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে তোমার একটি ছবি পোস্ট করবে। সে ক্ষেত্রে তুমি কী ধরনের ছবি বাছাই করো?
ক. একটা ছবি বাছাই করলেই হয়। আমাকে দেখতে সব সময়ই বাজে দেখায়। তাই অতশত ভাবি না।
খ. আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে, এমন একটা ছবিই বাছাই করবে। বাকিদের হুতুম পেঁচা দেখালেও আমার মাথাব্যথা নেই, আমাকে ভালো দেখালেই হলো।
গ. সবাইকে ভালো দেখাচ্ছে আর আমাকেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে এমন ছবি পোস্ট করব।
৯. কেউ একজন গল্প করছে। তার গল্প শুনে তোমার নিজেরও সে–সম্পর্কিত একটা গল্প মনে পড়ে গেল। কিন্তু তার গল্প এখনো শেষ হয়নি। তুমি কী করবে?
ক. তাকে থামিয়ে দিয়ে আমার গল্পটা বলতে শুরু করব। আরেহ, আমার গল্প শুনতে সবাই ভালোবাসে। অন্যদের গল্প তো বোরিং হয়!
খ. তার গল্পটাই শুনব। আমার গল্প কি আর কারও ভালো লাগবে? না কেউ শুনবে? তাই ইচ্ছা হলেও নিজের গল্পটা আর বলব না।
গ. প্রথমে তার কথা শেষ করতে দেব। তারপর জমিয়ে নিজের গল্পটা করব।
১০. মানুষ বা সমাজ নিয়ে তোমার ধারণা কী?
ক. বেশির ভাগ মানুষই হতাশাজনক। মাথায় ঘিলু নেই। কাজের না। আমার সঙ্গে যায় না ওদের। আমি ওদের চেয়ে হাজার গুণে ভালো।
খ. আমার মনে হয়, মানুষ অনেক জটিল। কেউ ভালো আবার কেউ খারাপ। দুটোই সমানুপাতিক।
গ. আমার তো সবাইকে দেখলে হিংসে হয়, আফসোসও হয়। সবাই কত কী পারে, আর আমি? আস্ত একটা অপদার্থ!
নম্বর
১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
২. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৩. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৪. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৫. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৬. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৭. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৮. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৯. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
১০. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে
০–৪০: বিল গেটসের একটা কথা আছে, নিজেকে কখনো অন্যের সঙ্গে তুলনা কোরো না। তাহলে নিজেকেই অপমান করা হয়। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে তুমি বরাবরই হতাশ হও। মনে করো, ওরা সব সময়ই তোমার থেকে এগিয়ে। কাজেই, হীনম্মন্যতায় ভুগো। নিজেকে ভালো তো বাসোই না, আবার বিশ্বাসও করতে পারো না। তোমার মধ্যে অনেক প্রতিভা, সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকতে পারে। নিজেকে ভালোবাসতে শেখো। দেখবে, অন্যদের চেয়ে তুমিও কম কিছু নও
৪৫–৭০: তোমাকে ঠিক আত্মপ্রেমী বলা চলে না। তবে তুমি নিজেকে যথেষ্টই ভালোবাসো। ভালোবাসাও যে মেপেঝেপে করা যায়, তুমিই তার প্রমাণ। তোমার আত্মবিশ্বাস আছে, দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতাও আছে। এসব তুমি নিজেও জানো। তাই বলে সেসব নিয়ে অহংকার কোরো না। তবে মাঝেমধ্যে আবার অন্যের মতামতকে কম গুরুত্ব দাও। নিজেকে ভালোবাসো, পাশাপাশি অন্যদেরও গুরুত্ব দিয়ো।
৭৫–১০০: মঙ্গল গ্রহে কি এলিয়েন আছে? কিংবা পৃথিবীতে ভূত বলে কিছু? এসব নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু তুমিই যে প্রকৃত আত্মপ্রেমী, সেটা নিয়ে কোনো দ্বিধা বা বিতর্ক নেই। তুমি বেশ আত্মমগ্ন মানুষ। অন্যদের মতামতকে একেবারেই গুরুত্ব দাও না। আবার, তোমার চেয়েও যে অন্য কেউ জ্ঞানে ও মেধায় বিজ্ঞ হতে পারে, সেটাও তুমি ভাবতে পারো না। তোমার জগতে তুমিই রাজা। নিজেকে নিয়ে অহংকারও করো তুমি। নিজেকে ভালোবাসা বেশ জরুরি। তাই বলে যদি নিজেকে সেরা আর অন্যদের তুচ্ছ মনে করতে শুরু করো, তবে সেটা কি ভালো বলো? কাজেই তোমার আত্মকেন্দ্রিকতা কমানো জরুরি। তবে নিজেকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ো না।