অসহায় মানুষকে টাকা দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে সাহায্য করেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ঈদ, পূজা বা এ রকম কোনো উৎসবের আনন্দ গরিবদের মধ্যেও যেন ছড়িয়ে যায়, এ জন্য সবাই দান করেন দুহাত খুলে। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ও এতিমখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় মানুষ সাহায্য করে থাকেন নিয়মিত। আসলে দান করা আমাদের জীবনের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।
কিন্তু কখনো কি তোমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন আমরা এভাবে দান করে থাকি? আবার দান করলেও, ঠিক যত টাকা আমরা দান করতে চাই, সব সময় তত টাকা কিন্তু আমরা দান করি না। এর পেছনে কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে?
গবেষণায় উঠে আসে, তিন ধরনের মানুষ মূলত দান করে থাকেন। একধরনের মানুষ দান করেন শুধু অন্যের উপকার করার জন্য। তাঁদের টাকা সমাজের ভালোর জন্য ব্যয় করা হচ্ছে, সন্তুষ্টি পান এই ভেবে। দ্বিতীয় প্রকার মানুষের দান করার উদ্দেশ্যটা খুব একটা সৎ, তেমন বলা যায় না। তাঁরা সমাজের ভালোর জন্য দান করছেন, এমন প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নিতে চান। আর বাকি যে এক ভাগ মানুষ থাকেন, তাঁদের দান করার কারণ বেশ অদ্ভুত। এ ধরনের মানুষ দান করে থাকেন সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীকে মুগ্ধ করার জন্য!
কেন মানুষ দান করেন, সেটা নাহয় বোঝা গেল। কিন্তু ঠিক কী পরিমাণ টাকা মানুষ দান করেন, সেটা জানার জন্য এই তিনটি কারণ যথেষ্ট নয়। অনেক মানুষ টাকা দান করতে চাইলেও, যত নিয়মিত তাঁরা দান করবেন বলে ভাবেন, শেষ পর্যন্ত তত নিয়মিত করেন না। বেশির ভাগ বিত্তশালী মানুষই চান নিজেদের উইলে দান করার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রেখে যেতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমনটা করতে ভুলে যান প্রায় সবাই।
দান করা অনেকের সহজাত অভ্যাস হলেও, টাকা বা সম্পদ দান করার ক্ষেত্রে একেক মানুষ অগ্রাধিকার দেন একেক বিষয়ে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, যেখানে দান করলে প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি, মানুষ আকৃষ্ট হন সেখানেই। গ্রহীতা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবার হলে, দান করার হার বেড়ে যায় বহুগুণ। কারণ, এসব ক্ষেত্রে কেউ না কেউ যে উপকৃত হচ্ছেন, তা প্রত্যক্ষ করা যায় সরাসরি। তবে দানের টাকা ঠিকঠাক কাজে লাগছে, এমন প্রমাণ দেখালেই যে দাতব্য সংস্থায় মানুষ বেশি বেশি টাকা দেওয়া শুরু করবেন, এমনটাও নয়। দানের ক্ষেত্রে মানুষ মূলত যুক্তিকে নয়, প্রাধান্য দেন আবেগকে।
সামাজিকতার খাতিরেও মানুষ অনেক সময় দান করে থাকেন। এক গবেষণায় দেখা যায়, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়কার রুমমেট সাহায্য চান, তখন পিছপা হন না কেউই। অপর দিকে, অনলাইনে দান করার সময় লক্ষ করা যায় আরেক ধরনের বিষয়। ‘জাস্ট গিভিং’ নামের একটি অনলাইন ডোনেশন প্লাটফর্মে দেখা যায়, কে কত টাকা দান করছেন, তা অনেকটা নির্ভর করছে এর আগে যাঁরা দান করেছেন, তাঁদের ওপর। যদি আগের মানুষেরা বেশি টাকা দিয়ে থাকেন, তাহলে দেখা যায়, পরে যাঁরা আসছেন, তাঁরাও দান করছেন বেশ বড় অঙ্কের টাকা। পাশাপাশি যিনি দান করছেন, তাঁর পরিচয়ও অনেক সময় অন্যকে দান করতে উৎসাহিত করে; গবেষণায় উঠে এসেছে এমনটাও। যেমন কোথাও যদি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে অনুদান দেওয়া হয়, সেখানে অন্য মানুষদের দান করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বেশ কয়েক গুণ।
দান করাটা বেশ ছোঁয়াচেও বটে। অন্যরা দান করছেন, এমনটা দেখে দান করতে আগ্রহী হন বহু মানুষ। আবার খুব কাছের কোনো মানুষের উৎসাহেও অনেকে বিভিন্ন স্থানে দান করে থাকেন। অভ্যাসও এখানে বেশ বড় একটা ভূমিকা পালন করে। এক জরিপে দেখা যায়, যাঁরা জীবনের কোনো না কোনো সময় স্বেচ্ছাসেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের দান করার প্রবণতা থাকে অনেক বেশি।
নিজের পেছনে খরচ করার চেয়ে অন্যকে দান করাতেই আনন্দ বেশি পাওয়া যায়, এ বিষয়ও উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। তাই দিন শেষে মানুষ দান করেই থাকেন। কথায় আছে, ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান