অনেক আনন্দ সঙ্গী করে তোমরা কাটাচ্ছ বিদ্যালয় জীবন। এর মধ্যেই তোমরা দেখছ বড় হওয়ার স্বপ্ন। এর মধ্যেই তোমরা শুরু করেছ হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে তোমরা দেখতে পেলে দেয়াল। কী সেই দেয়াল? পরীক্ষা? তোমাদের বসতে হচ্ছে পরীক্ষার আসনে। একই সঙ্গে তোমরা শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থী।
এ পর্যন্ত কত পরীক্ষাই তো তোমরা দিয়েছ। তোমরা দিতে যাচ্ছ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। আমি এই পরীক্ষা নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই।
১. সব বিষয়ের গুরুত্ব সমান
সব বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক—এই তিনটি গ্রুপের প্রতিটিরই আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যসূচির সঠিক ও পরিষ্কার ধারণা রাখা দরকার। ভাসা ভাসা ধারণা দিয়ে ভালো উত্তর লেখা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর নিচে আন্ডারলাইন দিয়ে রাখলে রিভিশন দিতে সুবিধা হয়। মনেও থাকে বেশি। আবার আন্ডারলাইন দিতে গিয়ে যদি বইয়ের প্রায় পুরোটাই দাগিয়ে ফেলা হয়, তাহলে এই দাগানোর গুরুত্ব তেমন থাকে না।
২. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
সৃজনশীল যেকোনো প্রশ্নেরই জ্ঞানমূলক অংশ থাকে। এই প্রশ্নটির উত্তর বইয়ে সরাসরি দেওয়া থাকে। অবাক ব্যাপার হলো, অনেক শিক্ষার্থীই এই প্রশ্নের উত্তরে ভুল করে থাকে। ‘সংজ্ঞা’ বা ‘কাকে বলে’ জাতীয় প্রশ্নের উত্তরে যদি কেউ বানিয়ে বানিয়ে লিখে থাকে, তবে ভুল হয়। আমি সব শিক্ষার্থীকে বিষয়টি খেয়াল করার জন্য জোর দিয়ে বলি।
৩. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
এই প্রশ্নটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে হয়ে থাকে। এর মান ২। এই ২ নম্বরের মধ্যেও জ্ঞানমূলক অংশের জন্য ১ ও অনুধাবনমূলক অংশের জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ থাকে। সাধারণত ‘বলতে কী বোঝায়’ জাতীয় প্রশ্ন এই অংশে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রেও যথাযথ ও পরিমিত বাক্য ব্যবহার করা উচিত। অহেতুক অপ্রাসঙ্গিক তথ্য লেখা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
৪. প্রয়োগমূলক প্রশ্ন
প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট মান ৩। এই ৩ নম্বরের মধ্যেও জ্ঞান যাচাইয়ে ১, অনুধাবন যাচাইয়ে ১ ও প্রয়োগ অংশের জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ থাকে। একজন শিক্ষার্থী তার অর্জিত জ্ঞান কতটুকু বুঝতে পেরেছে, এই অংশে তা যাচাই করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তুর প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এই অংশে। কখনো কখনো গাণিতিক সমস্যা দেওয়া হয়ে থাকে।
৫. উচ্চতর দক্ষতা
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন বা সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ চাওয়া হয়। যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্তের সঠিকতা যাচাই করা হয়। ভুল হলে কেন ভুল, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যাকে কীভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করে, কীভাবে মূল্যায়ন করে, তা যাচাই করা হয় উচ্চতর দক্ষতার মাধ্যমে।
৬. উচ্চতর গণিত
গণিত বা উচ্চতর গণিতের সৃজনশীল প্রশ্নের প্যাটার্নে থাকে সহজ, মধ্যম, কঠিন মানের প্রশ্ন। একটি অঙ্ক বিভিন্ন নিয়মে করা যায়। যে নিয়মটি সহজ মনে হবে সেটি রপ্ত করে সমাধান করা ভালো। জ্যামিতিতে উপপাদ্যের চিত্রও যথাযথ হতে হয়। সম্পাদ্যে অঙ্কনের চিহ্ন অবশ্যই রাখতে হয়। ভেক্টরের ক্ষেত্রে তির চিহ্ন (g) দিতে হবে। মনে রেখো, আংশিক ভগ্নাংশে অভেদ ( ) চিহ্ন দিতে হয়।
৭. পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক সমস্যাগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করবে। বিভিন্ন অধ্যায়ে প্রচুর সংজ্ঞা আছে। সেগুলো সঠিকভাবে মনে রাখতে হবে। আলো ও তড়িৎসংক্রান্ত অংশে যথাযথ তির (g) চিহ্ন দিতে হবে। মনে রেখো, একক লেখার সময় আন্তর্জাতিক পদ্ধতির একক (mks) ব্যবহার করতে হয়।
৮. রসায়ন
রসায়নে প্রচুর সংকেত, রাসায়নিক বিক্রিয়া, গাণিতিক সমস্যা ইত্যাদি ভরা থাকে। বিক্রিয়াগুলো বারবার লিখে, সমতা বিধানের কৌশল প্রয়োগ করে সঠিক রাসায়নিক সমীকরণ লেখার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। কোনো কোনো যৌগের সংকেত একটু বড়সড়। সেগুলো বারবার লিখে অনুশীলন করবে।
৯. জীববিজ্ঞান
জীববিজ্ঞানের বিষয়বস্তু কেমন লাগে তোমাদের? জীববিজ্ঞানে প্রচুর চিত্র থাকে। অনেক সময় চিত্রগুলো পরীক্ষায়ও আঁকতে হয়। কম সময়ে চিত্রগুলো আঁকার জন্য বারবার অনুশীলন করবে। মনে রাখবে, চিত্র অধিক সুন্দরের চেয়ে অধিক শুদ্ধ হওয়া জরুরি। চিত্রের চিহ্নিতকরণ যেন সঠিক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবে। শ্বসন, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলোতে প্রচুর ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়া থাকে। সেগুলো বারবার অনুশীলন করবে।
১০. বিজ্ঞান
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান আবশ্যিক বিষয়। এখানে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলোর সমন্বিত অংশ বিদ্যমান। কিছু অধ্যায়ে গাণিতিক সমস্যা থাকে। সেগুলো যাতে শুদ্ধভাবে করতে পারো, সেদিকে খেয়াল রাখবে। আলো, তড়িৎ ইত্যাদি অধ্যায়ের কিছু প্রশ্নের উত্তরের চিত্রে তির চিহ্ন (g) দিতে হবে। বিভিন্ন সংজ্ঞা, সূত্র ভালোভাবে আয়ত্ত করবে।
শেষ কথা
এসএসসি তোমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার শিক্ষা ও ফল উচ্চশিক্ষায় কাজে লাগবে। অন্য সব বিষয়ে তোমাদের ভালো করতে হবে। শুধু পরীক্ষা পাসের জন্য নয়, প্রকৃত শিক্ষা অর্জনই যেন তোমাদের পড়াশোনার মূল লক্ষ্য হয়।
এই দেখো তো, কত ভারী ভারী কথা বলে ফেললাম। সবকিছুকে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। সুস্বাস্থ্যে থেকে প্রস্তুতি নাও। সময়ের কথা একটু শুনবে, দেখবে সাফল্যের সোনালি সূর্য তোমার হাতের মুঠোয়।