বিড়াল কেন টেবিল-চেয়ার আঁচড়ায়, আঁচড়ানো থামাব কীভাবে
দেশে বিড়াল পোষা মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। একসময় ঘরের ভেতরে আনাচে কানাচে বিড়াল থাকলেও বর্তমানে হরহামেশাই অনেককে কোলে বা ব্যাগে বহন করতে দেখা যায়। অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠা পোষা প্রাণীর যত্ন–আত্তিও বেড়েছে। গড়ে উঠেছে পোষা প্রাণীর প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। ঘরের আসবাবপত্র অনেক সময় খেলাচ্ছলে নষ্ট করে এসব পোষা প্রাণী। বিশেষ করে বিড়ালের নখের থাবা থেকে সুরক্ষা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে কীভাবে বিড়ালকে আসবাবপত্র আঁচড়ানো থেকে বিরত রাখবে, তা জানো এই লেখায়।
আঁচড়ানো বিড়ালের স্বাভাবিক আচরণ। বিড়াল আসবাবপত্র আঁচড়ায় নিজের মৃত নখের স্তর সরিয়ে ফেলতে। নিজের এলাকা চিহ্নিত করতেও এ কাজ করতে পারে। আবার শুধু শরীরের পেশি লম্বা করতেও এমন আচরণ করে বিড়াল। বিড়ালের আচরণবিদ এবং ‘বিং ইয়োর ক্যাট: হোয়াটস রিয়েলি গোয়িং অন ইন ইয়োর ফেলিনিস মাইন্ড’ বইয়ের লেখিক সেলিয়া হ্যাডন বলেন, বিড়ালের আঁচড় এর নিজের বসবাসের জায়গাকে আরও নিরাপদ অনুভব করাতে সাহায্য করে।
আঁচড়ানো একটি মৌলিক প্রবৃত্তি। এটি বন্য জীবনে বিড়ালদের সাহায্য করে। তাই প্রিয় বিড়ালটিরও এটি স্বাভাবিক আচরণ হিসাবে গণ্য করতে হবে। তবে এই প্রবৃত্তি পরিবর্তন ঘটানোরও কিছু উপায় আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিড়ালকে পুরোপুরি আঁচড়ানো থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। তবে আসবাবপত্র আঁচড়ানো থেকে অবশ্যই বিরত রাখা যেতে পারে।
হয়তো তোমার বিড়ালকে পুরোপুরি আসবাবপত্র আঁচড়ানো থেকে আটকাতে পারবে না, তবে এই পরামর্শ বাড়ির আসবাবপত্রের ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করবে।
১. বিড়ালের ডি-ক্লাউনিং করবে না
আসবাবপত্রে আঁচড় ঠেকাতে বিড়ালকে ডি-ক্লাউয়িং (নখ কেটে ফেলা) করা যাবে না। ডিক্লাউয়িং একটি সার্জিকাল পদ্ধতি, যেখানে বিড়ালের পায়ের আঙুলের শেষ অস্থি কেটে ফেলা হয়, যাতে নখগুলো আবার গজাতে না পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি একটি অমানবিক চিকিৎসা। এটি বিড়ালের আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন কামড়ানো, লিটার বক্স ব্যবহার না করা, এমনকি বিড়ালের মনে ভীতি তৈরি হতে পারে।
২. আঁচড়ানোর ব্যবস্থা করো
বিড়াল আট সপ্তাহ বয়স থেকে আঁচড় দেওয়া শুরু করে। তাই যখন বিড়াল ছোট, তখন একে প্রশিক্ষণ দাও। সঙ্গে দাও স্ক্র্যাচিং পোস্ট বা স্ট্যান্ড। বিড়াল নিজের প্রাকৃতিক আচরণ চালিয়ে যেতে পারবে, কিন্তু আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। হ্যাডন বলেন, পোস্টটি বিড়ালের পূর্ণ উচ্চতায় আঁচড়ানোর জন্য যথেষ্ট উঁচু হওয়া উচিত এবং এটি যথেষ্ট মজবুত হতে হবে, যাতে বিড়াল সহজে ভালো করে আঁচড়াতে পারে।
একটি ভালো নিয়ম হলো, পোস্টটি কমপক্ষে ১ মিটার উঁচু হবে এবং প্রস্থ হতে পারে ৩০ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার। বিড়ালের আকৃতি অনুযায়ী পোস্ট বড় হতে হবে।
৩. ক্যাট স্ক্র্যাচ স্প্রে ব্যবহার
এটি এমন একটি স্প্রে যা বিড়ালদের আসবাবপত্র, দেয়াল বা অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় স্থানে আঁচড়ানো থেকে বিরত রাখতে ব্যবহার হয়। এতে সাধারণত এমন গন্ধ বা উপাদান থাকে, যা বিড়াল পছন্দ করে না। ফলে এরা আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকে। ক্যাট স্ক্র্যাচ স্প্রে দোকান থেকে কিনতে পার। তবে এটি তৈরি করাও সহজ। ভিনেগার, সাইট্রাস তেল, এমনকি রসুন এবং পিপারমিন্ট দিয়ে স্ক্র্যাচ স্প্রে তৈরি করতে পার।
৪. স্যাক্স, বুট বা নেল ক্যাপ ব্যবহার
ডিক্লাউইংয়ের বিকল্প হিসাবে বিড়ালের জন্য স্যাক্স বা বুট (যাকে মিটেনও বলা হয়) ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বুটগুলো কিছু বিড়ালের জন্য ভাল কাজ করে। যদি বিড়াল এই বুট খুঁটে খুঁটে বের করার চেষ্টা করে, তবে নরম নখের ক্যাপ ব্যবহার করো। এই ক্যাপ নখে আঠার মতো করে লাগানো হয়। এটি বিড়ালের আঁচড়ানোর ক্ষতি সীমিত করে।
৫. ক্যাট স্ক্র্যাচ টেপ ব্যবহার করো
যদি ভাব, কীভাবে বিড়ালকে চামড়ার আসবাবপত্র আঁচড়ানো থেকে বিরত রাখবে, তবে ক্যাট স্ক্র্যাচ টেপ ব্যবহার করো। এটি ফ্যাব্রিক, কার্পেট এবং কঠিন পৃষ্ঠেও ভালো কাজ করে। দেয়াল ও দরজায় এ টেপ লাগানো যায়। এটি দুই পাশেই আঠালো টেপের মতো, সাধারণ টেপের মতো প্যানেল বা রোল আকারে থাকে। এটি যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই আটকে দিতে পারবে। পরে সহজেই সরিয়ে ফেলতে পারবে। বিড়ালরা নিজেদের পায়ে আঠালো অনুভূতি পছন্দ করে না, তাই এটি তাদের আঁচড় দেওয়া থেকে বিরত রাখে।
৬. ভিনাইল গার্ড ব্যবহার করে সুরক্ষা দিতে পারো
আরেকটি বিকল্প হলো যেখানে বিড়াল আঁচড়াতে পারে, আসবাবপত্রের সে অংশে পরিষ্কার ভিনাইল প্যানেল লাগাতে পারো। এই প্যানেল বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। এগুলোতে স্ক্রু পিন থাকে। যা প্যানেলকে সহজেই ইনস্টল করতে সাহায্য করে। বিড়ালের নখ শক্ত ভিনাইলের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। তাই এই কভারগুলো সোফা বা চেয়ারের জন্য সুরক্ষা প্রদান করে।
৭. বিড়ালকে আসবাব আঁচড়ানোর জন্য শাস্তি দেবে না
কেউ চায় না তার বিড়াল আসবাবপত্র আঁচড়াক। কিন্তু বিড়াল যদি সোফায় আঁচড়ায়, তবে একে শাস্তি দেবে না। বিড়ালের আচরণবিদ হ্যাডন বলেন, শাস্তি বিড়ালের অবসাদ বাড়িয়ে দেয়। ফলে আঁচড়ানোর সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।