কেন কাউকে বারবার ফোন করা উচিত না
কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে এখন শুধু ফোনের পর্দায় এক-দুটো ক্লিক করা লাগে। পৃথিবীর যে প্রান্তে তোমার বন্ধু থাকুক, যোগাযোগ করা খুব সহজ হয়ে গেছে। ক্লিকও করতে হবে না, ফোনটা হাতে নিয়ে তোমার ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টকে যদি শুধু বলো, হেই সিরি প্লিজ কল অমুক, সঙ্গে সঙ্গে সিরি তাঁকে কল করে দেবে। কিন্তু ধরো যাকে কল করলে, সে ফোনটা ধরল না। হয়তো ব্যস্ত আছে অথবা তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। তুমি এ ক্ষেত্রে কী করবে? একটানা কয়বার কল করবে?
যত ভালো বন্ধু হোক, বা খুব জরুরি কাজ হোক কল করতে একটা সীমা তো তোমাকে মানতেই হবে। কল না ধরলে বিকল্প হিসেবে তুমি তাকে মেসেজ লিখে রাখতে পারো। যদি তোমার কল না ধরে, তখন তোমার মনে হতে পারে, কেন ধরছে না। কথা আমাকে এখনই বলতে হবে। তখন তুমি যদি কল করতে থাকো, কিছু অসুবিধা হতে পারে। একাধিকবার কল করলে, খুব জরুরিভাবে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে, তার জন্য এটা বিরক্তি ও বিব্রতকর হতে পারে।
কেউ ফোন না ধরলে ঠিক কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমে চেষ্টা করতে হবে, একটা ছোট্ট মেসেজ পাঠাতে। মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে তিনি যখন সময় পাবেন, তখন উত্তর দেবেন। মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে তাঁর চাপ অনুভব হবে না।
কল করার ক্ষেত্রে অনেকে খুব সহজ একটা নিয়ম মেনে চলে—কাউকে একটানা দুবারের বেশি কল না করা। যদি সে কল না ধরে, যাকে আমরা বলি রিসিভ না করা, তবে তোমাকে মেনে নিতে হবে সে হয়তো ব্যস্ত। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে আছে।
ফোন না ধরার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সে হয়তো ক্লাসে আছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। কথা বলার অবস্থায় নেই। বারবার ফোন করাটা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে ব্যাহত করতে পারে। ভাবো তো, তোমাকে একজন বারবার কল করছে। বারবার কল করায় তুমি বিরক্ত হচ্ছ, কারণ তুমি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করছ। অথবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছ। হয়তো অনেক ক্লান্তিতে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছ। এমন সময় বারবার কল এলে বিরক্ত লাগবে।
যাঁরা বয়সে বড়, তাঁরা কাজের জন্য বেশি বেশি যোগাযোগ করে অভ্যস্ত। তবে কিশোর বয়সীদের জন্য বিষয়টি সাধারণ নয়। কারণ, তাঁর জীবনে অনেক কিছুতে ব্যস্ত থাকতে হয়, যেখানে ফোনে যোগাযোগের বিষয় তেমন একটা নেই। যেমন স্কুল, খেলাধুলা, কোনো শখ বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, এসব জরুরি কাজে বারবার ব্যাঘাত ঘটলে কিশোর বয়সীদের মন খারাপ হতে পারে। কিশোর বয়সীরা বিরক্ত হতে পারে।
কেউ ফোন না ধরলে ঠিক কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমে চেষ্টা করতে হবে, একটা ছোট্ট মেসেজ পাঠাতে। মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে তিনি যখন সময় পাবেন, তখন উত্তর দেবেন। মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে তাঁর চাপ অনুভব হবে না। কাজ শেষ হলে এমনিতেই সে যোগাযোগ কবে। মেসেজ পাঠালে জবাবে তিনি সহজেই কল না ধরার কারণ জানাতে পারবেন। বলতে পারবেন, তিনি কী কাজে ব্যস্ত বা কোথায় কী পরিস্থিতিতে আছেন। হয়তো কোনো মিটিংয়ে আছেন, হয়তো অসুস্থ, হয়তো একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন।
এ পদ্ধতি অনুসরণ করে তুমি তাঁকে স্পেস দেবে, তাঁর প্রতি সম্মান দেখাতে পারবে। তাঁকে জানাতে পারবে যে তুমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাও। তো ফোন করার নিয়ম মেনে চললে বা একটা সীমারেখা টেনে দিতে হবে। এতে শুধু অন্যের প্রতি সম্মান দেখানো হয় না, ভালো যোগাযোগের অভ্যাসও তৈরি হয়। যখন তুমি অন্যকে জায়গা দেবে, সম্মান জানাবে, তখন তিনি তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। তোমার কাজে বা প্রয়োজনে মনোযোগ দিবে। তোমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এটি শুধু কাজের সূত্রে যোগাযোগ বা বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজ করে এমন না, জীবনের সব জায়গায়, এমনকি পরিবারের মধ্যেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
তবে অতি জরুরি অবস্থা বা ব্যতিক্রম থাকতে পারে। যদি সত্যিই কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তুমি জানো যে এ মুহূর্তে যোগাযোগ না করলে ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হবে, জীবন থমকে যাবে, তখন দুবারের বেশি কল করার নিয়মটি ভাঙা যেতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতি সব সময় তৈরি হয় না। যদি সব সময় এমন জরুরি পরিস্থিতি থাকে, তবে সেটাকে আর জরুরি পরিস্থিতি বলা যায় না। তুমি নিজেকেই মনে মনে জিজ্ঞেস করে নিতে পারো, এটা কি জরুরি পরিস্থিতি? উত্তর যদি ‘না’ হয়, তবে দুবারের বেশি একাধারে কল কোরো না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো, যদি অপেক্ষা করা সম্ভব হয়।
অন্যদের সময়ের প্রতি সম্মান না দেখালে তারা তোমাকে গুরুত্ব না–ও দিতে পারে। বিষয়টি খুব ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু ফোন করার আগে একটু ভেবে নিলে সম্পর্কগুলো ইতিবাচক হয়। ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই পরেরবার কাউকে বারবার ফোন করতে ইচ্ছে করলে একটু বিরতি নিয়ে, একটু বিবেচনা করে নিতে পারো। এভাবে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক জীবনযাপন সহজ হবে।
সূত্র: আই অ্যাম এ মাদার ও নিউইয়র্ক টাইমস