রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায়, কিছু মানুষ আনমনে চলাফেরা করছে। কানে ইয়ারফোন। কানে হয়তো বাজছে তাদের প্রিয় প্লে লিস্ট। একের পর এক গান শোনার অভ্যাস হয়তো তোমারও আছে। তবে আজকের এই লেখা রাস্তায় চলতে–ফিরতে গান শোনার ঝুঁকি নিয়ে নয়। কানে ইয়ারফোন কতক্ষণ রাখা উচিত, আজকের আলাপ তা–ই নিয়ে।
পড়ালেখা বা কাজ হোক, সাউন্ড বক্সে উচ্চ শব্দে গান বাজলে তোমার মনোযোগ মাঝেমধ্যে ছুটে যাবে। তুমি যদি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে অঙ্ক করতে চাও, করতে পারো। নানা রকম হইচইয়ের মধ্যে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে হয়তো তোমার পক্ষে মন দিয়ে অঙ্ক করাও সম্ভব। তবে ইয়ারফোনে গান শোনা তোমার কানের জন্য নিরাপদ কি না, তোমাকে বিবেচনা করতে হবে। কানের ভেতরে ইয়ারবাডটি ‘এয়ারটাইট’ থাকে। এয়ারটাইট ইয়ারফোনের কারণে কানে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। দীর্ঘ সময় বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়, যা কানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাইরে থেকে আসা শব্দ গ্রহণের জন্য কাজ করে কানের বাইরের অংশ। একে বলা হয় পিনা। পিনা শব্দ গ্রহণ করে মস্তিস্কে পাঠালে আমরা তা শুনতে পাই। কানের একদম ভেতরে বা শেষ অংশে থাকে কানের পর্দা বা ইয়ার ড্রাম। এটি উচ্চমাত্রার শব্দে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। ইয়ারফোন বা ইয়ারবাডের তুলনায় হেডফোন ব্যবহার করা কানের জন্য নিরাপদ। এতে কানের বাইরের অংশ, অর্থাৎ পিনা ব্যবহার করে শব্দ গ্রহণ করা যায়। কিছু বাতাস থাকে। কান তুলনামূলক ভালো থাকে।
সাধারণত আমরা ৭০ থেকে ৮০ ডেসিবলের শব্দ স্বাভাবিকভাবে শুনতে পাই। কিন্তু হেডফোন বা ইয়ারফোন আমাদের কানে ১০০ বা এর বেশি ডেসিবলের শব্দতরঙ্গ পাঠায়। দীর্ঘ সময় ধরে বেশি মাত্রায় গান শুনলে কানের লোম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে।
সহজ সমাধান আছে। হেডফোন বা ইয়ারফোনের শব্দ তৈরির সর্বোচ্চ ক্ষমতার থেকে ৪০ শতাংশ শব্দ কমিয়ে গান শুনতে পারো। মানে সাউন্ড কিছুটা কমিয়ে দেওয়া। তবে দিনে এক ঘণ্টার বেশি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শোনা ঠিক হবে না। এর বদলে নিজের রুমে স্পিকারে গান ছেড়ে শোনা যেতে পারে। উচ্চ শব্দে না শুনে শুধু তুমি শুনতে পাও, পাশের ঘরে যেন শুনতে না পায়, এমন শব্দেই গান শোনা উচিত।
দীর্ঘ সময় উচ্চ শব্দের ইয়ারফোন ব্যবহার করলে ইয়ারফোন খোলার পর আবার স্বাভাবিকভাবে কোনো কিছু শুনতে খানিকটা সময় লাগে। নিয়মিত এমন উচ্চ শব্দ শুনলে কানে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। ইয়ারফোন বা হেডফোন খোলার পর তোমার যদি কানে ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে সেটি ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিত। লম্বা সময় ব্যথা থেকে গেলে বা কানে কম শুনতে পেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিও।