প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো।
১০০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির জন্য। নির্মিতি অংশে ৭০, যার মধ্যে অনুচ্ছেদ লিখনে ১০; সারাংশ/সারমর্মে ১০; ভাবসম্প্রসারণে ১০; চিঠিপত্রে ১০; প্রতিবেদন তৈরিতে ১০ ও রচনায় থাকবে ২০। পুরো ব্যাকরণ অংশ থেকে এবার ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ভালো করার সুযোগ রয়েছে, সেহেতু এ বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে আগ্রহের সঙ্গে।
অনুচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ রচনা লেখকের চিন্তাশক্তি ও রচনাশৈলীর উত্কর্ষ সাধন করে। অনুচ্ছেদ লিখনের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলা প্রথমপত্র বইয়ের গদ্য-কবিতার মূল বিষয়গুলোকে ও সাম্প্রতিক বা সমাজে বহুল প্রচলিত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবে। অনুচ্ছেদ উত্তরের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ভাষা ও গঠনমূলক বাক্য ব্যবহার করবে, উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সূচনা বাক্য ও উপসংহার বাক্যটি গঠনমূলক, আকর্ষণীয় ও নান্দনিক হতে হবে। এখানে বিষয়বস্তুর সম্প্রসারণ সম্পর্কে ধারণা বিশ্লেষণ এবং ভাষার উপস্থাপনশৈলীই অন্যতম আকর্ষণ। পৃষ্ঠা অনুযায়ী নয় অনুচ্ছেদ মান অনুযায়ী লিখলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। বাংলায় অনুচ্ছেদ লিখনে নির্দিষ্ট শব্দসংখ্যা বলা না থাকলেও প্রদত্ত বিষয় অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবরণ প্রদান করেই তার সমাপ্তি করতে হবে। অনুচ্ছেদে কোনো বক্তব্যের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনুচ্ছেদের দৈর্ঘ্য যাতে অযথা দীর্ঘ না হয় এবং অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা যোগ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অনুচ্ছেদ একটি চিন্তামূলক শৈল্পিক কর্ম। অনুচ্ছেদ রচনায় একটি কেন্দ্রীয় বা মূল ধারণা একটি অনুচ্ছেদের (এক প্যারা) মধ্যেই শেষ করতে হবে।
চিঠিপত্র
ক. ব্যক্তিগত পত্র : পত্র রচনার একটি প্রচলিত কাঠামোকে সবাই মেনে নিয়েই পত্র রচনা করে থাকেন। প্রচলিত কাঠামোতে চিঠিপত্রে সাধারণত ছয়টি অঙ্গ রয়েছে। মঙ্গলোচ্চারণ বা ধর্মীয় সংস্কার (বর্তমানে প্রায়ই ব্যবহৃত হয় না), ঠিকানা ও তারিখ, সম্বোধন, মূল পত্র, পত্রলেখকের নিবেদন ও স্বাক্ষর, শিরোনাম (প্রেরক ও প্রাপকের নাম-ঠিকানাসংবলিত এবং ডাকটিকিটযুক্ত খাম)। প্রেরকের নাম-ঠিকানা ও প্রাপকের নাম-ঠিকানা চিঠিপত্রের খামের গায়ে বাধ্যতামূলক লিখতে হবে।
ঠিকানা ও তারিখ: চিঠিটি কত তারিখে এবং কোথা থেকে লেখা হচ্ছে, তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। এটি আধুনিক নিয়মে বাঁ পাশে লেখা শ্রেয়, তবে সনাতন পদ্ধতিতেও লেখা যাবে। সম্বোধন: লেখকের কাছ থেকে প্রাপকের জন্য কীরূপ মর্যাদা প্রত্যাশিত, তার ওপরই নির্ভর করে সম্বোধনের রূপরীতি। মূল পত্র: পত্রের বক্তব্য বিষয় এই অংশে থাকবে। প্রাপকের সঙ্গে প্রেরকের সম্পর্কের ওপরও এই প্রথাসিদ্ধতার একটা সম্পর্ক বিদ্যমান। পত্রলেখকের নিবেদন ও স্বাক্ষর: স্বাক্ষরের আগে পত্রলেখক এ ধরনের বিনয় প্রকাশ করে থাকেন। খাম: খামের মাঝামাঝি ডান পাশে প্রাপকের নাম–ঠিকানা এবং বাঁ পাশে প্রেরকের নাম, ঠিকানা লিখতে হবে। ভাষা: সাধারণত আমাদের ব্যবহারিক জীবনের চিঠিপত্রের ভাষা সহজবোধ্য ও সরল হবে, এটাই কাম্য।
খ. আবেদনপত্র : আবেদনপত্র শুদ্ধ, সুলিখিত এবং তথ্যসংবলিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই যেকোনো আবেদনপত্র বা দরখাস্তে প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকা দরকার। দরখাস্ত লেখার সময় নিম্নলিখিত দিকগুলোর প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে।
তারিখ: ওপরের বাঁ পাশে লিখবে। প্রাপকের নাম-ঠিকানা: প্রাপকের অংশে নিয়োগকর্তার নাম, পদ বা নিয়োগকারী সংস্থার নামের বানান সঠিক এবং ঠিকানা নির্ভুল হতে হবে। বিষয়: এ অংশে কাঙ্ক্ষিত বিষয় বা পদের কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। সম্বোধন: আনুষ্ঠানিক সম্বোধন হবে: মহোদয়, মহাত্মন ইত্যাদি। আবেদনের সূত্র : সাধারণত পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাকরির নিয়োগের কথা জানা যায়। তাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখসহ সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সূত্র উল্লেখ করে অথবা বিশ্বস্ত সূত্রের কথা জানিয়ে আবেদনপত্রের বক্তব্য শুরু করতে হয়।
আবেদনপত্রে প্রয়োজনীয় মার্জিন থাকতে হয়। পৃষ্ঠার ওপরে এবং বাঁয়ে প্রয়োজনীয় মার্জিন রেখে দরখাস্ত লিখতে হবে। চিঠিপত্র পুরোনো ও আধুনিক—যেকোনো নিয়মেই লেখা যায়, তবে বোর্ডের রচনা সম্ভার বইটি অনুসরণ করবে। ব্যক্তিগত, আবেদনপত্র ও পত্রিকায় প্রকাশের পত্র—এ তিনটি নিয়ম অবশ্যই আত্মস্থ রাখবে। পত্রিকায় প্রকাশের পত্র এসএসসি পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করে থাকি। বোর্ড প্রশ্নে নাম ও স্থানের নাম দেওয়া থাকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই তা খেয়াল করবে।
সারাংশ/সারমর্ম
সারাংশ বা সারমর্ম হলো ‘কোনো ব্যাখ্যামূলক অংশের মূল অংশ বা মূল বক্তব্য।’ কোনো লেখা ছোট আকারে প্রকাশ করার নামই সারমর্ম বা সারাংশ। মূল রচনা থেকে অনাবশ্যক ও বাহুল্য কথা বাদ দিয়ে আসল কথাটিকে নতুনভাবে রূপ দেওয়া যায়। মূল রচনার যুক্তি, উপমা, অলংকার, উদাহরণ প্রভৃতি বাদ দিয়ে সারাংশ ও সারমর্ম লিখতে হবে। এখানে মূল অংশটুকু নির্ভুল ও সঠিক উচ্চারণ দ্বারা বারবার পড়তে হবে, মূল অংশের কথাগুলো দ্বারা কোনো রূপক বা উপমা সৃষ্টি করা হয়েছে কি না, তা ভালোভাবে বুঝতে হবে, সারবস্তুটুকু কখনোই মূল অংশ থেকে বর্ধিত হবে না। মর্মকথার মধ্যে কোনো অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য বা একই বাক্যের পুনরুক্তি কিংবা বাহুল্য প্রয়োগ ঘটানো যাবে না, মূল অংশটুকুর লেখক, লেখিকা কিংবা রচনাকারীর নাম প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকবে না।
ভাবসম্প্রসারণ
ভাবসম্প্রসারণ হলো কোনো সংক্ষিপ্ত, অর্থপূর্ণ বক্তব্যকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা। কোনো একটি বিশেষ ভাবকে সম্প্রসারিত করার নামই ভাবসম্প্রসারণ। তবে কোনো গদ্যাংশ বা পদ্যাংশের ভাবকে বিস্তর পরিসরে সাজালেই সেটা ভাবসম্প্রসারণ হয় না। মনে রাখতে হবে, সম্প্রসারিত বাক্যগুলো সর্বদা মূল ভাবটিকে কেন্দ্র করেই বর্ধিত হবে। ভাবসম্প্রসারণ করতে হলে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে—
ভাবসম্প্রসারণের জন্য চিহ্নিত মূল অংশটি একাধিকবার পড়তে হবে এবং তার অন্তর্নিহিত নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝতে হবে, মূল অংশটিকে অবশ্যই যুক্তিতর্কের দ্বারা সম্প্রসারিত করতে হবে, অসংগত বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা লেখা যাবে না। সম্প্রসারিত ভাবের ভাষা সহজ, সরল ও শ্রুতিমধুর হতে হবে। সম্ভব হলে উপমা, রূপক প্রভৃতিযোগে উদাহরণ না দেওয়া শ্রেয়; সম্প্রসারিত ভাবধারা অহেতুক দীর্ঘ করা যাবে না। অর্থাৎ একটি ভাবসম্প্রসারণ কখনো একটি রচনার মতো দীর্ঘ হবে না। ভাবসম্প্রসারণ তিন প্যারায় লেখা শ্রেয়। প্যারার নাম উল্লেখ করবে না। মূল ভাব নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা দেবে, সম্প্রসারিত ভাব ও মন্তব্য অংশ প্যারা করবে।
প্রতিবেদন
প্রতিবেদন নির্দিষ্ট কাঠামো ও নিয়মানুযায়ী প্রণয়ন করতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয় অবলম্বনে প্রতিবেদনটি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর হতে হবে। প্রতিবেদনের বক্তব্য হবে সহজ-সরল, নিরপেক্ষ, যুক্তিযুক্ত ও বাহুল্যবর্জিত। প্রতিবেদকের কাছে বিশেষভাবে প্রত্যাশিত যে তাঁর সংবাদে পারতপক্ষে এমন কোনো বিশেষণ ব্যবহার করা যাবে না, যার ফলে তাঁর রচনাকে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়। প্রতিবেদনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
ক. সংবাদ প্রতিবেদন: সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো ঘটনাসম্পর্কিত প্রতিবেদনকে সংবাদ প্রতিবেদন বলে। নিজস্ব সংবাদদাতা বা প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে এসব সংবাদ সংগ্রহ করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনে তোমরা শিরোনাম ব্যবহার করে, প্রতিবেদকের নাম, স্থান, তারিখ উল্লেখ করে লিখলেই ভালো করবে।
খ. দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন: দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন এমন একধরনের প্রতিবেদন, যাতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ঘটনা, স্থান, অবস্থা প্রভৃতি বিষয় যাচাই করে সে সম্পর্কিত তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্ত তুলে ধরা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানপ্রধান বরাবর বিষয় ও সূত্রসহ প্রতিবেদন পেশ করবে। প্রতিবেদকের নাম–ঠিকানা ব্যবহার করবে এবং শেষে খাম ব্যবহার করা যেতে পারে (ঐচ্ছিক)।
রচনা
‘রচনা’ শব্দের অর্থ কোনো কিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তোলার নামই রচনা। রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা, চিন্তার ধারাবাহিকতা, সংযত বর্ণনা, ভাষার প্রাঞ্জলতা ও যুক্তির সুশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে। লেখকের চিন্তা, কল্পনা ও বুদ্ধির মিলিত প্রয়াসে রচনা উত্কৃষ্ট হয়ে ওঠে। প্রবন্ধ বা রচনা লেখার সময় কতগুলো বিষয়ের দিকে গভীরভাবে লক্ষ করতে হবে। যেমন রচনার ভাষা সহজ ও নির্ভুল হওয়া বাঞ্ছনীয়, রচনার মধ্যে ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করা উচিত, এক একটি ভাব নিয়ে এক একটি অনুচ্ছেদ রচনা করতে হয়, রচনার ভাষা সাধু বা চলতি উভয়টাই হতে পারে। তবে মিশ্রণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে, রচনার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে প্রচলিত বাগ্ধারা, প্রবাদবাক্য, উদাহরণমূলক গল্প বা বিখ্যাত লেখকের উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে। রচনা অতিশয় দীর্ঘ বা অতিশয় সংক্ষিপ্ত যাতে না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে, রচনার মধ্যে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে, সংকেতের সাহায্যে রচনা লেখা একটু সহজ। কারণ, সংকেত অনুসারে বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করা যায়।
ব্যাকরণ অংশ
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর হলো বেশি নম্বর পাওয়ার সিঁড়ি। পাঠ্যবইয়ে রঙিন কলম দিয়ে সম্ভাব্য বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলোয় দাগ দিয়ে রেখেছ আশা করছি। অনুশীলন হলো বহুনির্বাচনি শিক্ষার ভিত্তি। যত বেশি পড়বে, মনে তত বেশি ধারণ করবে। মনে রাখা দরকার, ব্যাকরণ বই থেকেই প্রশ্ন হবে, অহেতুক বাজারের বড় বড় ব্যাকরণ বই বা গাইড পড়ার প্রয়োজন নেই। ব্যাকরণ চর্চা করবে যত পারো ততবার। বহুনির্বাচনি অংশে বৃত্ত ভরাট করবে, কোনো প্রকার টিক চিহ্ন দেবে না।
ভুল উত্তর দেওয়া ও অপ্রাসঙ্গিক উত্তর পরিহার করতে হবে। তুমি মনে করতে পারো, যত বেশি লেখা যাবে তত বেশি নম্বর পাবে, আসলে তা ঠিক নয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকবে। মনে রাখবে, গঠনমূলক লেখা ছোট হলেও পুরো নম্বর পেতে সহায়ক হয়। সাধু-চলিত ভাষা একই প্রশ্নের উত্তরে ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো বর্ণনামূলক রচনায় এ ব্যাপারটি অবশ্যই খেয়াল রাখবে।