শীতের চড়ুইভাতি
পরীক্ষা শেষ। স্কুল ছুটি। তারউপর আবহওয়াটাও ঠান্ডা! বই পড়ে কিংবা মুভি দেখে আর কতক্ষণ কাটানো যায়? বন্ধুবান্ধব মিলে একটা চড়ুইভাতি করলে কেমন হয়? শীতের আসল মজাটাই তো চড়ুইভাতি বা পিকনিক! কুয়াশাটা কেটে গেলেই পিকনিক করতে বেরিয়ে যাওয়া। কোথায়? কোনো একটা বিল্ডিংয়ের ছাদে কিংবা বাসার পাশের মাঠটাতে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেকেই চলে আসবে ততক্ষণে। বাসা থেকে নিয়ে আসা হাঁড়ি-পাতিল কারও হাতে, কারও হাতে আবার তেলের বোতল। কেউ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুরগির ডিম! যদিও কে কী নিয়ে আসবে আগে থেকেই ঠিক করা থাকে সেটা। তারপরও দেখা যায় যার ডিম নিয়ে আসার কথা সে নিয়ে এসেছে ভিম। কেউ হয়তো বলেই বসলো, ‘খুন্তি যেন কোনটা?’ ‘আরে অংকে খারাপ করলে আন্টি যেটা দিয়ে তোকে ভয় দেখায়, ওটা।’ পাশ থেকে বলল আরেকজন। এভাবেই হাসিঠাট্টায় চলে প্রস্তুতি। অবধারিতভাবে দু-একজন ঘুম থেকে উঠবে না। বাসায় গিয়ে পানি ঢেলে তাদের ওঠানোর কাজ করতে স্বেচ্ছাসেবকের অভাব হবে না একেবারেই।
তারপর ইট দিয়ে চুলা বানানো। সবজি কাটা থেকে শুরু করে পানি গরম করা, এটা সেটা এগিয়ে দেওয়াসহ সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। রান্নার দায়িত্বে যে, তার তো মহাটেনশন। একটু এদিক-ওদিক হলেই সর্বনাশ! মাঝেমধ্যে অবশ্য দু-একজন মুরব্বি এসে দেখে যাবেন সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কি না।
আর বেশি পিচ্চিরা তো খেলা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে একটা না একটা ঝামেলা বাধাবেই। দেখা যাবে সেদ্ধ আলুর বাটিতে ঘাপটি মেরে আসে একটা টেনিস বল! কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে চলবে লুডো-দাবা-উনো খেলা। ফলে রান্না হতে দেরি হবেই। এর মাঝে অবশ্য সাউন্ড বক্স মাল্টিপ্লাগ এনে গানের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
রান্না হতে হতে তো সবাই ক্ষুধায় একদম অস্থির। খিচুড়ি আর ডিমের ঝোল যেন সাক্ষাৎ অমৃত। মহাতৃপ্তি নিয়ে খাবে সবাই। খাওয়াদাওয়া শেষ হতে হতেই বিকেলটা প্রায় শুরু! তারপর শুরু গল্প। লুডু খেলা আরও জমবে, একপাশে জমবে গানের কলি খেলা।
সন্ধ্যা শুরুর আগমুহূর্তে যখন চারদিকে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব তখন এক কাপ চায়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে পিকনিক! তবে সবাই মিলে কাটানো সময়ের রেশটা থেকে যাবে পরের বছরের পিকনিকের আগ পর্যন্ত।