এএএইইইইই...গরমে আরাআআআআম!
এই গ্রীষ্মে বেশি গরমে বেশি কাতর হলে সুইডিশ একটা প্রবাদ থেকে সান্ত্বনা খুঁজে নিয়ো, ‘ভালোবাসা ছাড়া জীবন যেমন, গ্রীষ্ম ছাড়া বছরও তেমন।’ তবে তুমি যেহেতু সুইডেনে থাকো না, তাই তোমার জন্য আমার বাকি লেখাটা লিখতে হলো।
—গায়ে কী তোমার?
—দামি ব্র্যান্ডের গেঞ্জি।
—আমি জিজ্ঞেস করছি, তোমার গায়ে কী?
—ও-ও...ঘামাচি...
—কোন ব্র্যান্ডের?
—জানি না তো!
তা সে যে ব্র্যান্ডের ঘামাচিই হোক না কেন, পাউডারটা যেন ভালো ব্র্যান্ডের হয়। অতি মেকআপ তোমাকে মেকি করে না তোলে যেন, সেটা মাথায় রেখে মুখ-গলা-হাতে যা লাগাচ্ছ লাগাও। আর না লাগালে তো বেশ হয়, কোনো ব্র্যান্ডের ধার না ধারলেও তখন ঠিকই চলে যায়।
সেরা ব্র্যান্ডের আলো, বাতাস, পানি তো আছেই। আর সঙ্গে থাকতে হবে প্রাকৃতিক তুলায় বোনা সাধারণ সুতি কাপড়।
প্রাকৃতিকে আস্থা রাখলে, প্রকৃতি প্রাকৃতিক রূপ সাধনেও কুণ্ঠা করবে না বলেই মনে হয়। আর এর বাইরে কী করবে সেই স্বাধীনতা তোমার। মেকআপ ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আপস করে না, এমন ব্র্যান্ডের কিছুই যেন হয়।
তোমাদের কাছাকাছি বয়সীদের সাধারণত মাথা, ঘাড়, বগল, শরীরের ওপরের অংশে, রানের ভাঁজে, কনুই ও হাঁটুর ভাঁজে ঘামাচি দেখা যায়। বড়দের সাধারণত বুকে-পিঠে-পেটে ঘামাচি হয়। কয়েক ধরনের ঘামাচি আছে। যেমন, মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা নামের ঘামাচি শিশুদের, এমনকি জন্মের পর দ্বিতীয় সপ্তাহেই দেখা দিতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে এটা কম দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ ছোট ছোট দানা হয়। এগুলো সাধারণত কিছুদিনের মধ্যে আপনা-আপনিই সেরে যায়। মিলিয়ারিয়া রুব্রা নামের আরেকটি ঘামাচিতে ঘর্মগ্রন্থির নালির গভীরে ব্লক বা বাধা তৈরি হয়। ফলে ত্বকে লাল লাল দানা হয়। এগুলো এক সপ্তাহ বয়স থেকে শুরু হতে পারে। ছোট-বড় সবারই এটা হয়ে থাকে। এই ঘামাচিতে খুব চুলকায় এবং জ্বালাপোড়া করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘামাচিতে পুঁজ জমতে দেখা যায়। আর মিলিয়ারিয়া প্রোফান্ডা নামের ঘামাচি ত্বকের গভীর স্তরে ঘাম নিঃসরণের কারণে জমা হয়।
অতিরিক্ত ঘামাচির কারণে অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া, শারীরিক দুর্বলতা, ঘামে অসহনশীলতা, ক্ষুধামান্দ্য, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা হতে পারে। পরবর্তী সময়ে ঘাম নিঃসরণ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঘামের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের ঘামাচি থেকে সংক্রমণ হতে পারে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঠান্ডা ঘরে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করলে ঘামাচি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ মেলে।
এই পরামর্শটা দিয়ে যেন অন্যায় করলাম। সবাই তো আর এসি ব্যবহার করে না। তবে সবাই চাইলে নিয়মিত গোসল করতে পারবে। আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি ও বরফ লাগানোর ব্যবস্থা করে নিতে পারবে। ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরার পরামর্শ আগেই দিয়েছি।
ট্যালকম পাউডার বা ক্যালামাইন লোশন এসব ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়। বেশি মারাত্মক সমস্যা হলে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে স্টেরয়েড ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্রিম ব্যবহার করতে হতে পারে। অবশ্যই ফার্মেসি দোকানির পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস করা যাবে না।
(.....”...’....;.......:.::;...:....:....”.’;.......;..”‘:;.......)
—ব্র্যাকেটের ভেতরে এগুলো কী ছিল ভাই?
—ব্র্যাকেটবন্দী ধুলাবালি। ধুলাবালি দিয়ে শরীরের অনেক ক্ষতিই হয়ে থাকে। তাই এদের ব্র্যাকেটবন্দী করার চেষ্টা করা হলো। এ দেশের এই রকম গরম আর বালুময় গ্রীষ্ম দেখলে ব্রায়ান উইলসন হয়তো বলতেন না, ‘গ্রীষ্ম মানেই সুখের সময়!’
ধুলাবালি সবার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমস্যা না করলেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা করতে পারে। আর কথায় আছে না, ছোট মরিচের ঝাল বেশি। সাধারণত যেসব ধুলা খালি চোখে দেখা যায় না, সেগুলো আরও বেশি ক্ষতিকর।
বড় আকারের ধুলা নাকে-মুখে জমা হয়, ফুসফুসে যেতে পারে না। তাই ক্ষতিও কম করে।
মাথা থেকে শুরু করে শরীরের ভেতর পর্যন্তও যাকে বলে আপাদমস্তক, সব বয়সী সব মানুষের, যাকে বলে আবালবৃদ্ধবনিতা ধুলাবালির কারণেই নানা রকম ক্ষতির শিকার হতে পারে। এই ধরো, খুশকির প্রধান কারণ মাথার বালি ভ্রমণ। ইন্দোনেশিয়ার বালি নয়, ধুলোবালি। এ ছাড়া মাথার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের কারণও এই ধুলাবালিই, ধুলাবালির সঙ্গে মিশে থাকা রোগজীবাণু। আমাদের ছোটবেলায় বাবা-মা ধুলাবালির কাছে গিয়ে মেশামেশি করলে খুব বকা দেন, আমি বুঝি না রোগজীবাণুর বাবা-মায়েরা করেটা কী! এদের সন্তানদের কী করে তারা ধুলাবালির সঙ্গে মিশতে দেয়?
এই জীবাণুরা সঙ্গে না থাকলে তো ধুলাবালির কারণে মুখের ত্বকের ক্ষতিটাও কম হতে পারত। ধুলাবালি শরীরে পড়ার কারণে আমাদের লোমের গোড়ার যে ছিদ্র থাকে, যা দিয়ে ঘাম বের হয়, সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আর এসবের কারণে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পাঁচড়ার সৃষ্টি হয়। মুখের ত্বকে এতে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয়, ব্রণ তার মধ্যে একটি।
ধুলাবালি কারও কারও অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জির বড় একটি কারণ। ধুলাবালির কারণে ফুসফুসের অনেক রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
ধুর, খালি সমস্যার কথা বলছি, এইটা কোনো কথা? বরং একটা সমাধানের কথা বলি, সহজ সমাধান। ধুলাবালি যদি বাতাসে প্রচুর পরিমাণে থাকে, তবে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে পারো। খানিকটা চোর-ডাকাতের ভয়ে নিজেই জেলে ঢুকে আশ্রয় নেওয়ার মতো একটা ব্যাপার।
তবে এতে বাড়তি লাভ হলো, রাস্তায় টিচার বা পাওনাদার দেখলেও তোমাকে চিনতে পারবে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও হঠাৎ করে মুখের সামনে একটি টিভি ক্যামেরা আর মাইক চলে আসবে না আর যখন-তখন মাইকের সঙ্গে ছুড়ে দেবে না সেই চিরচেনা প্রশ্ন, আপনার অনুভূতি কী?
যেহেতু গরমের কথা আসছে, সেহেতু শরমভাঙা গরমের কথাও আসতেই পারে! অতি গরমে হতে পারে সংক্রমণজনিত রোগ। ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ, চার বছরের কম বয়সী শিশু, বেশি মোটা এবং বিভিন্ন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি অতি তাপজনিত সমস্যার ঝুঁকিতে থাকে। অধিক ঘামজনিত পানিস্বল্পতা, রক্তে লবণের মাত্রা কমে যাওয়া, অতি দুর্বলতা, হাত-পা কামড়ানো, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। এ ছাড়া অতি তাপে হিটস্ট্রোক বা খিঁচুনি থেকে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। সুতরাং তোমার শিশু বা বয়স্ক আত্মীয়স্বজনের দিকে একটু খেয়াল রেখো।
গরম ঘাম জীবাণুতে সর্দি-কাশি, ভাইরাল জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, হাম, বসন্ত, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস, মেনিনজাইটিস, এনসেফ্যালাইটিস ইত্যাদিও দেখা যায়। কিন্তু একদমই ভয়ের ব্যাপার নেই, কারণ প্রতিরোধ খুবই সহজ। বিন্দাস থাকার কাছাকাছি লেভেলেই আছে।
এই গরমে আমাশয় ও রক্ত আমাশয় হতে পারে। দূষিত পানি ও খাদ্য থেকে কলেরার মাত্রা অনেক বেশি হতে পারে।
এসব রোগ প্রতিরোধে প্রচুর জীবাণুমুক্ত পানি পান করতে হবে। অতি গরমে তোমার যেটা ইচ্ছা করে সেটা হলো ছায়ায় যাওয়া, সেটাই এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা। বেশি ঘেমে গেলে পানি দিয়ে শরীর মুছে ফেলতে ইচ্ছা করে অথবা গোসল করতে ইচ্ছা করে। বিশ্বাস করো, এগুলোই করতে বলবে বড় ডাক্তারও। তোমার ইচ্ছার লেভেলটা কিন্তু ‘সেই’।
হালকা ও সুতি জামা পরিধান করতে বলতে হচ্ছে আলাদা করে। কেননা, ফ্যাশন রক্ষার স্বার্থে তোমরা আবার যেকোনো কিছুই করে ফেলতে পারো কি না। বসন্তে আক্রান্ত রোগীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। আর হ্যাঁ,
সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্ব তোমার ওপর থাকলে আলাদা কথা।
এই সময়ে জ্বর হলে পর্যাপ্ত পানি বা স্যালাইন পানি গ্রহণ করবে, না গ্রহণ করতে চাইলে খাবে, না খেতে চাইলে পান করবে, তবু তোমার দেহকে স্যালাইন-পানি দেবেই। জ্বর, পাতলা পায়খানা ছাড়াও ঘামলে লবণ-পানি কমে যায়, সুতরাং মীনা-রাজুর এই পরামর্শগুলো ভুলে যাবে না কখনো।
জ্বরের মাত্রা যদি বেশি হয় বা বমিসহ ডায়রিয়ায় পেট ব্যথা তিন দিনেও না কমলে গুগলে ওষুধ না খুঁজে গুগল ম্যাপে ডাক্তারের ঠিকানা খুঁজে নেবে, দয়া করে।
ভয় পেয়ো না, যা করছ তা-ই করো। ঘুমাও, খাও, পড়ো, বিশ্রাম করো, খেলো, পানি খাও, ঘাটতি হলে স্যালাইন দিয়ে পুষিয়ে নাও, মাঝে মাঝে আইসক্রিম-টাইসক্রিম খাও।
দুই বন্ধুতে গল্প জমেছে, ‘প্রচণ্ড গরম থেকে রক্ষার জন্য প্রতিদিন কী খাচ্ছিস দোস্ত?’
—শরমের মাথা!
—কী সব উল্টাপাল্টা বলছিস?
—আম্মু তো বলল, ‘গরমে কি শরমের মাথা খেয়েছিস? পরনের কাপড় কোথায় যাচ্ছে টের পাচ্ছিস না!’
শরমের মাথা খাওয়ার পাশাপাশি তুমি খেতে পারো হররোজ তরমুজ, বেলতলায় না গিয়েও খেতে পারো বেল, আমজনতার রসনার জন্য আসতে যাচ্ছে রসাল আম, গোঁফে তেল দিয়ে অপেক্ষা করতে পারো কাঁঠালের আঠার জন্য। ফল সেমিস্টারের গরমটা বেশি তীব্র হলে কাঁঠালের চেয়ে কলাচর্চার সঙ্গে সঙ্গে কলা খাওয়াও উত্তম। জ্যামে বসে জামভর্তা না খেয়ে সেটা বাসায় নিয়ে ধুয়েমুছে খাওয়াই শ্রেয় হবে। এই গরমেই তুমি পাচ্ছ একটা গরমের ছুটিও, এটাইবা কম কিসে?
মোটামুটি এই হলো গরমের আরামের জীবন! স্পনসরড বাই বাবা-মা আর মিডিয়া পার্টনার কিশোর আলো।