প্রতিদিন কীভাবে উদ্যমী মনে ঘুম থেকে উঠব

সকালে অ্যালার্ম বাজে, আর আমরা ঘুম ঘুম চোখে হাতড়ে বেড়াই স্নুজ বাটন। যেন আরও কয়েক মিনিট ঘুমের সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু বারবার স্নুজ বাটন চেপে দিন শুরু করা খুব ভালো কিছু নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক সফল ব্যক্তিত্ব একটি গোপন কৌশল অনুসরণ করেন, যা তাঁদের সাফল্যে সহযোগিতা করেছে। কী সেই গোপন কথা?

রাতে ঘুমানোর আগে জানালার পর্দা সরিয়ে রাখলে সকালে সহজে ঘুম ভেঙে যাবে। মডেল: অ্যাঞ্জেলাছবি: সুমন ইউসুফ

গোপন কথাটি খুব সামান্য। ভালোভাবে পরিকল্পনা করা সকালের একটি রুটিন। কারণ, সকালবেলা তুমি যা করো, তা পুরো দিন তোমার কেমন যাবে, তা নির্ধারণ করতে পারে। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো, যা একটি কার্যকরী সকালের রুটিন তৈরিতে সাহায্য করবে। তুমি এই রুটিন অনুসরণ করে সুন্দরভাবে সকাল শুরু করতে পারবে।

১. আগের রাতেই প্রস্তুতি নাও

বিশ্বাস কর বা না কর, সকালে কীভাবে ঘুম থেকে উঠবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে আগের রাতে তুমি কী করছিলে তার ওপর। বিছানায় যাওয়ার আগে একটু সময় বের করে দিনটি পর্যালোচনা কর। পরের দিনের পরিকল্পনা কর। কালকের কাজ কী হবে বা কোনো সমস্যা থাকলে তার খুঁটিনাটি লিখে রাখতে হবে। এমন সমস্যা লিখবে, যা তোমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কারণ, চিন্তাগুলো লিখে রাখলে মন হালকা হয়। ফলে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।

পরের দিন কী কী করতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি কর। এতে তোমার উৎপাদনশীলতা (Productivity) সকাল থেকেই বাড়বে এবং দিনজুড়ে তা বজায় থাকবে। স্কুলে কী নিতে হবে, তা ঠিক করে রাখো। খাবার বা লাঞ্চ প্রস্তুত করে রাখা উচিত। এমনকি পোশাকও গুছিয়ে রাখতে হবে যেন সকালে বের হতে ঝামেলা না হয়। এভাবে রাতে মন হালকা থাকবে এবং সকাল হবে সহজ ও ঝামেলামুক্ত।

২. ভালো ঘুম

ভালো লাগা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা এবং সকালের রুটিন সহজে অনুসরণ করার সাফল্য তৈরি হয় তোমার পর্যাপ্ত ঘুম হয়েছে কিনা তার ওপর। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আদর্শ বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তবে সবার ঘুমের প্রয়োজন এক নয়। তোমার কত ঘণ্টা ঘুম দরকার, তা নির্ধারণ কর এবং প্রতিদিন একই সময়ে সেই ঘুমটুকু ঘুমিয়ে নাও। ঘরের পরিবেশ শান্ত রাখতে হবে। আশেপাশে যেম শব্দ না হয়। ঘুমের মধ্যে মোবাইল যেন শব্দ না করে, ঘরে কোনো উজ্জ্বল আলো যেন না থাকে, এসব নিশ্চিত করো। কারণ এগুলো তোমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবে অন্ধকারে ঘুমাতে চায়। যদি তোমার ঘর যথেষ্ট অন্ধকার না হয়, তাহলে দরজা-জানালা পুরো ঢেকে দেয়, এমন পর্দা ব্যবহার কর। চোখ ঢাকার মাস্কও ব্যবহার করতে পারো। এভাবে তুমি ভালোভাবে বিশ্রাম নিতে পারবে।

আরও পড়ুন

৩. স্নুজ বাটন চাপবে না

অনেকেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অ্যালার্মের স্নুজ বাটন চাপে এবং তারপর তাড়াহুড়া করে দিনের কাজ শুরু করে। তবে অ্যালার্ম প্রথমবার বাজলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়। এই পদ্ধতি শরীরের জন্য বেশি কার্যকর। আর একবার উঠে পড়লে আর বিছানায় ফিরবে না। তোমার শরীর কয়েক মিনিটের ঘুম থেকে বিশেষ কোনো লাভ পাবে না।

৪. কীভাবে ভোরে ঘুম থেকে উঠবে?

শীতের সকালে ঘুম থেকে ওঠা বেশ কষ্টের ব্যাপার
ছবি : প্রথম আলো

অ্যালার্ম সেট করতে হবে তোমার স্বাভাবিক ঘুম থেকে ওঠার সময়ের চেয়ে একটু আগে। এভাবে তুমি দিনের প্রস্তুতি নিতে এবং সকালের পরিকল্পিত কাজগুলো করতে সময় পাবে। যদি যথেষ্ট সময় না থাকে, তবে দিনটি শুরু থেকেই বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। তাড়াহুড়ো করে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তোমার স্ট্রেস তৈরি হবে। তাই এমনভাবে ঘুম থেকে উঠবে, যেন তুমি যথেষ্ট সময় পাও। প্রয়োজনে এক গ্লাস পানি ও এককাপ চা খেতে পারো। তবে তোমার চা খাওয়ার উপযুক্ত বয়স হয়েছে কিনা, তা এই লেখা থেকে দেখে নাও।

আরও পড়ুন

৫. সকালের জন্য একটি পরিকল্পনা করো

সকালের জন্য একটি পরিকল্পনা ঠিক কর এবং সেটি অনুসরণ কর। যে কোনো কিছু হতে পারে। একটি বই পড়া, ই–মেইল বা মেসেজ চেক করা, ঘর গোছানো, একটু ব্যায়াম করা। এমনকি কোনো একটি খেলাও খেলতে পার (অফলাইন গেম)। সকালে একটি লক্ষ্য স্থির করা থাকলে তোমার শরীর ও মন অনুপ্রাণিত হবে।

স্কুলে যাওয়ার আগে সকালবেলা পছন্দের কোনো শারীরিক কার্যক্রম শুরু কর—এক মাইল দৌড়াও, সাইকেলে চড়, হাঁটতে বের হও। এতে তোমার রক্ত সঞ্চালন ও হৃৎস্পন্দন বাড়বে। পুরো দিনটি উদ্যমে কাটানোর জন্য এটি একটি ভালো কৌশল।

৬. ঘুম থেকে উঠে পানি খাও

চা-কফির দিকে ঝোঁকার আগে এক গ্লাস পানি খাও
ছবি: প্রথম আলো

তুমি প্রায় আট ঘণ্টা খাওয়া-দাওয়া ছাড়া কাটিয়েছ, তাই তোমার শরীরের সতেজতার জন্য একটু পানির প্রয়োজন। তবে চা-কফির দিকে ঝোঁকার আগে এক গ্লাস পানি খাও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে পানি পান করলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া শুরু হয় এবং সারা দিনের হাইড্রেশনেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুন

৭. ধ্যান বা ইয়োগা কর

অনেকে মনে করেন, সকালে ১০-১৫ মিনিট ধ্যান বা ইয়োগা করলে দিনটি শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করা সম্ভব। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর ওপর মনোযোগ দেওয়া তোমাকে অনুপ্রাণিত এবং চ্যালেঞ্জিং দিনের জন্য প্রস্তুত করবে।

৮. প্রিয়জনকে ফোন কর

সকালে পরিবারের প্রিয়জন বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা তোমার দিনটি ইতিবাচকভাবে শুরু করার জন্য দারুণ উপায় হতে পারে। এটি তোমাকে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে এবং জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা বোধ করাবে। আর মন ভালো রাখার বিষয়টি তো আছেই।

সূত্র: থটকো ডটকম

আরও পড়ুন