সিন ও আনসিন প্যাসেজ পড়ে উত্তর দেবে

প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। কিছুদিন পরই তোমাদের পরীক্ষা শুরু হবে, তা–ই না? আশা করি তোমরা ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছ। তোমাদের ভালোভাবে ইংরেজি বিষয়ের অনুশীলন করতে হবে। পরীক্ষায় পাসের জন্য নয়, জীবনের প্রয়োজনে ইংরেজি ভাষার দখল থাকা আবশ্যক। ইংরেজি বিষয়ের জ্ঞান ছাড়া জীবনে কোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে পারবে না। তোমাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নের ধরন ও উত্তর লেখার কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

পার্ট-এ: রিডিং পার্ট

প্রথম অংশে (পার্ট-এ) ৫০ নম্বর থাকবে। এই অংশকে রিডিং টেস্ট বলা হয়। রিডিং টেস্টের জন্য ২টি জানা প্যাসেজ থাকবে। এই প্যাসেজ দুটি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ইংরেজি বই থেকে থাকবে। এই অংশে আবার একটি অজানা প্যাসেজও থাকবে। জানা অনুচ্ছেদ থেকে প্রশ্ন নম্বর ১, ২, ৩ ও ৪ থাকবে।

প্রথম জানা অনুচ্ছেদ (পাঠ্যবই সম্পৃক্ত) থেকে প্রশ্ন নম্বর ১ এবং ২ থাকবে

প্রশ্ন নম্বর ১–এ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। ৭টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের প্রতিটিতে ৪টি করে বিকল্প উত্তর দেওয়া থাকবে। বিকল্প উত্তরগুলোর মধ্য থেকে সর্বাপেক্ষা সঠিক উত্তরটি বাছাই করতে হবে। বাছাই করা উত্তরটি উত্তরপত্রে লিখবে। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর করে ৭টি প্রশ্নের জন্য ৭ নম্বর থাকবে।

প্রশ্ন নম্বর ২–এ প্রশ্নের উত্তর

এই প্রশ্নের মাধ্যমে তোমাদের স্মৃতিশক্তি পরীক্ষা, অনুধাবন ক্ষমতা, তোমাদের সৃষ্টিশীলতা আছে কি না, তোমরা তথ্য বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে পারো কি না ইত্যাদি দেখা হয়। তোমরা যথাযথ উত্তর লিখবে। উত্তরে নিজস্বতা বা মৌলিকত্ব থাকবে। প্রদত্ত প্যাসেজ থেকে সরাসরি বাক্য তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ২ করে ৫টি প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর থাকবে।

পাঠ্যবই সম্পৃক্ত দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

এই অনুচ্ছেদের ওপর ভিত্তি করে ৫টি শূন্যস্থান–সংবলিত একটি প্যারাগ্রাফ থাকবে। শূন্যস্থানগুলো পূরণ করার জন্য কোনো ক্লু দেওয়া থাকবে না। উত্তরপত্রে ধারাবাহিকভাবে শুধু উত্তরগুলো লিখবে। প্রদত্ত প্যাসেজ বা প্যারাগ্রাফটি লিখবে না। প্রতিটি শূন্যস্থানে ১ নম্বর করে মোট নম্বর থাকবে ৫।

আনসিন প্যাসেজ (পাঠ্যবই–বহির্ভূত অনুচ্ছেদ)

পাঠ্যবই–বহির্ভূত অনুচ্ছেদের ক্ষেত্র অনেক। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি অবলম্বনে এই অনুচ্ছেদ হতে পারে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, বিখ্যাত ঘটনাবলি ইত্যাদি থেকেও এই অনুচ্ছেদ তৈরি করে পরীক্ষার উপযোগী করা হয়। যেমন থাইল্যান্ডের গুহায় খেলোয়াড়দের হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি। সার্ক–সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ, আইনস্টাইনের জীবনের কোনো কাহিনি, ইউরি গ্যাগারিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জন মিলটন, কাজী নজরুল ইসলাম, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, মাদার তেরেসার মতো ব্যক্তিদের জীবনী অবলম্বনে তৈরিকৃত অনুচ্ছেদ, পাঠ্যবই–বহির্ভূত অনুচ্ছেদের উদাহরণ হতে পারে। এই অনুচ্ছেদ অবলম্বনে ৪ নম্বর প্রশ্নে ইনফরমেশন ট্রান্সফার আসে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন আঙ্গিকে তোমাদের তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। ৫টি শূন্যস্থান দেওয়া থাকবে। শূন্যস্থানগুলো যথাযথ তথ্যের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। প্রতিটি শূন্যস্থানের জন্য ১ নম্বর করে মোট ৫ নম্বর থাকবে।

অজানা প্যাসেজ (পাঠ্যবই–বহির্ভূত) প্যাসেজ থেকে ৫ নম্বর প্রশ্নে সারমর্ম লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তোমরা পরোক্ষ উক্তি ব্যবহার করবে। নিজস্ব শব্দমালা প্রয়োগ করবে। মূলভাব বুঝে এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাক্যগুলো শনাক্ত করবে। শনাক্ত করা বাক্যগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো নিয়ম অনুযায়ী বাদ দেবে। জটিল ও যৌগিক বাক্যগুলোকে সরল বাক্যে (সিম্পল সেনটেনস) পরিণত করবে। প্রদত্ত প্যাসেজের বাইরের কোনো বিষয় সারমর্মে অন্তর্ভুক্ত করবে না। তাহলে তা প্রাসঙ্গিকতাবর্জিত বলে গণ্য হবে। সরল বাক্য = বিষয় + ক্রিয়াপদ + অনন্য শব্দ।

প্রশ্ন নম্বর ৬

এই প্রশ্নে ৫ নম্বর থাকে। বাক্যগুলো ম্যাচিং করতে এই প্রশ্ন দেওয়া হয়। কাজটিকে জটিল করতে এই প্রশ্নে তিনটি কলাম থাকে। প্রতিটি কলামে পাঁচটি বাক্যাংশ থাকে। তিনটি কলাম থেকে বাক্যাংশ নিয়ে তোমাদের ৫টি অর্থপূর্ণ সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি করতে হবে। এই প্রশ্নে তোমাদের জন্য পাঠ্যবই–সম্পৃক্ত অথবা পাঠ্যবই–বহির্ভূত কোনো প্যাসেজ দেওয়া থাকবে না।

প্রশ্ন নম্বর ৭

৮টি এলোমেলোভাবে দেওয়া বাক্যকে ভালোভাবে পড়ে ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে। উত্তরপত্রে সম্পূর্ণ বাক্য লিখবে না। শুধু ধারাবাহিকভাবে বাক্যগুলোর বাঁ পাশের বর্ণমালা সাজিয়ে লিখবে। যতগুলো বাক্যের বাঁ পাশের বর্ণমালা সঠিকভাবে সাজিয়ে লিখবে, তত নম্বরপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারবে। এই প্রশ্নে ৮টি বাক্যের জন্য ৮ নম্বর বরাদ্দ থাকবে।

পার্ট-বি: রাইটিং পার্ট

দ্বিতীয় অংশকে রাইটিং পার্ট বলা হয়। এর জন্য ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে

রাইটিং পার্টের প্রশ্ন নম্বর ৮-এ একটি প্যারাগ্রাফ লিখতে হবে। একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে কয়েকটি প্রশ্ন থাকব। প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখার মাধ্যমে তোমাদের একটি প্যারাগ্রাফ লিখতে বলা হবে। ২৫০ শব্দের মধ্যে তোমাদের প্যারাগ্রাফটি লিখতে হবে। এর জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। প্যারাগ্রাফগুলো প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক, বিদ্যালয়ের বিষয়–সংক্রান্ত, জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয়, সহজেই চোখে পড়ে এমন বিষয় (যেমন একটি চায়ের দোকান), অতি সাধারণ মানুষের জীবন ও কর্মবিষয়ক (যেমন একজন রিকশাচালক, দিনমজুর), প্রিয় ব্যক্তিবিষয়ক ইত্যাদি হতে পারে।

প্রশ্ন নম্বর ৯

একটি অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণ লিখতে হবে। সূচনা অংশে পাঠ করে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যৌক্তিকভাবে লিখে গল্পটির চূড়ান্ত পরিণতিতে যেতে হবে। সবার উত্তর এক রকম না–ও হতে পারে। তাতে তেমন কিছু যায়–আসে না। কতটা নিজস্ব ভাষা প্রয়োগে গল্পটি লিখতে পারবে, তা দেখার বিষয় হবে। গল্পগুলো অনেক জানা গল্প, রূপকথার গল্প ইত্যাদি থেকে আসে। অজানা, বানিয়েও দেওয়া হয়ে থাকে। তোমাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে কল্পিত গল্প সম্পূর্ণ করে ফেলবে। এই প্রশ্নের উত্তরে একটি ধারণাকে পরিপূর্ণ করে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর জন্য ১০ নম্বর থাকে।

প্রশ্ন নম্বর ১০

এই অংশে কিছু তথ্য–উপাত্তসহকারে একটি গ্রাফ অথবা চার্ট থাকে। পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বই, ইন্টারনেট ইত্যাদি থেকে গ্রাফ অথবা চার্ট নেওয়া হতে পারে। চার্ট অথবা গ্রাফকে ব্যাখ্যা করতে আলাদা শব্দমালা ব্যবহার করতে হয়। কতটা সফলভাবে তোমরা গ্রাফের বা চার্টের বিষয় অংশগুলো যথাযথ শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে পারবে, তা-ই পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

প্রশ্ন নম্বর ১১

ব্যক্তিগত পত্র অথবা ই-মেইল লেখার জন্য এই প্রশ্ন। ব্যক্তিগত পত্র লিখতে ব্রিটিশ ও আমেরিকান স্টাইলের মিশ্রণ না করে যেকোনো একটি স্টাইলে লিখলেই চলবে। তোমরা যদি পত্রের ওপরে ডান পাশে ঠিকানা ও তারিখ লেখো, তাহলে পত্রের শেষ অংশে ডান পাশের শেষ করবে। আর ঠিকানা ও তারিখ যদি পত্রের ওপরের বাঁ পাশে লেখো, তাহলে শেষ করবে বাঁ পাশেই। পত্রটিতে ২০০ শব্দ বা তার কম-বেশি শতকরা ১০ ভাগ শব্দের সীমা রাখবে। অর্থাৎ, পত্রটি ১৮০ থেকে ২০০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হবে। পত্রে যথেষ্ট মার্জিন যেন থাকে। ই-মেইল লেখার ক্ষেত্রে আসল ই-মেইলের মতোই লিখতে চেষ্টা করবে। ই-মেইল আইডি, বিষয়, ইত্যাদি যথাযথভাবে লিখবে, যেভাবে বাস্তবজীবনে আমরা ই-মেইল করি। ই-মেইলের কনটেন্ট যেন সুন্দর হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবে।

প্রশ্ন নম্বর ১২

তোমাদের দৈনন্দিন জীবন ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে একটি ডায়ালগ লিখতে বলা হবে। একটি বিষয় দেওয়া থাকবে। তার ওপর ভিত্তি করে ডায়ালগটি রচনা করবে। হাই, হ্যালো, ইয়েস, নো, ভেরি গুড, থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাংকস, ওয়েলকাম, সি ইউ, বাই ইত্যাদির সমাহারকেই ডায়ালগ বলা হয় না। তোমাদের ডায়ালগে ৫টি পূর্ণ প্রশ্ন, বাক্য ও সেগুলোর উত্তর থাকতে হবে। কমপক্ষে ১০টি বক্তব্যের বিনিময় থাকবে, যা পূর্ণ বাক্যে হতে হবে। এগুলোর মধ্যে প্রশ্ন ও উত্তর বাক্য থাকবে। কমপক্ষে ১০ জোড়া পূর্ণ বাক্য তোমাদের রচিত ডায়ালগে থাকবে। ডায়ালগটি যেন বাস্তবজীবনে কথোপকথনের মতো হয়।

এই হলো তোমাদের ইংরেজি প্রথম পত্রের আলোচনা। তোমরা ভালো করে তোমাদের পরীক্ষার আগপর্যন্ত চর্চা চালিয়ে যাও। ভালো গ্রেড যাতে পাও, সে চেষ্টা করবে। গ্রেডের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের ইংরেজি ভাষার ওপর দখল সৃষ্টিরও প্রাণান্ত চেষ্টা করবে। গুড থেকে বেটার, বেটার থেকে বেস্ট হওয়ার চেষ্টা করবে ইংরেজি জানার ক্ষেত্রে। ভোকাবুলারি বাড়ানোর চেষ্টা করো। গ্রামার ঝালাই করে নাও। প্রতিদিন কোনো না কোনো আইটেম লেখো। শিক্ষককে দেখিয়ে নাও। ভুলত্রুটি শুধরে নাও। সারা দেশের যত প্রশ্ন, টেস্ট পেপার পাও, সমাধান করো। এমনভাবে চেষ্টা করো, যাতে ইংরেজি বিষয়ে গর্ব করার মতো নম্বর পাও। তোমাদের এই শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টা তোমাদের ভালো কলেজে এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ এনে দেবে। জীবনের চলার পথকে সুন্দর করে দেবে। অনেক সুন্দর ও সুগম করবে। আমাদের এ আলোচনা যদি তোমাদের জীবনে বিন্দুমাত্রও রেখাপাত করে, তোমরা যদি কিছুটা উপকৃতও হও, উৎসাহ লাভ করো, তাহলে আমরা ধন্য হব। তোমাদের জন্য শুভকামনা।