জেন–জিদের নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ কেমন হবে
আধুনিক যুগে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম জেন–জি। এই প্রজন্মের সদস্যরা এমন একটি সময়ে বেড়ে উঠেছে, যেখানে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট খুব সাধারণ একটা বিষয়। শৈশব থেকেই তারা এসব প্রযুক্তির সঙ্গে বড় হয়েছে। এমনকি তাদের একটা নিজস্ব ভাষাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু কারা এই জেন জি? তাদের বৈশিষ্ট্য কী?
শুরুতে জানা যাক, জেন–জি কারা। এ প্রশ্নের উত্তর সহজে দেওয়া কঠিন। কারণ, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ১৯৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তিরাই প্রথম প্রজন্মের জেন–জি। আবার কারও মতে, ১৯৯৬ সাল ও এর পরে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা জেন–জি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা জেন–জি। সে হিসেবে বর্তমানে যাঁদের বয়স ১২-২৭ বছর, তাঁরাই জেন–জি।
এই প্রজন্মের সুবিধা হলো, পৃথিবীর বয়স কত, তা জানার জন্য তাঁদের কোনো শিক্ষকের কাছে ছুটে যেতে হয়নি। অথবা কোনো বই বা এনসাইক্লোপিডিয়া নিয়েও বসতে হয়নি। বরং মোবাইল গুগল সার্চ অপশনে গিয়ে প্রশ্নটি লিখে সার্চ করার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেয়ে গেছে।
তাদের সামাজিক ন্যায়বিচার, পরোপকার ও পরিপক্বতার অনুভূতি রয়েছে।
বর্তমানের অনেক কিশোর কারও সঙ্গে কথা বলার চেয়ে টেক্সট করতে পছন্দ করে। এই প্রজন্মের হয়তো চিঠি লিখে বার্তা পাঠাতে হয়নি। এখন তো ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো জনপ্রিয় মাধ্যমে টেক্সট মেসেজ পাঠানো যায়। উত্তরও পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে। এ কারণে তারা টেক্সট করতে বেশি পছন্দ করে। তা ছাড়া মেসেজের মাধ্যমে একই সময়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলা যায়। মানে মাল্টিটাস্কিং সুবিধা বজায় থাকে। কমন সেন্স মিডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএস মট চিলড্রেনস হাসপাতালের মতে, ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর-কিশোরীরা তাদের ফোন থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৩৭ বা তার চেয়ে বেশি মেসেজ আদান-প্রদান করে।
এই প্রজন্মের সদস্যরা সবকিছু দ্রুত সময়ে করতে চায়। নিউটন কোন দেশের বিজ্ঞানী, তা জানতে একদিন অপেক্ষা করে শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞেস করার চেয়ে তারা গুগল করতে বেশি পছন্দ করে। আবার আজ জীববিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষক কী পড়া দিয়েছেন, তা ভুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে একজন বন্ধুকে টেক্সট করলেও সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এ জন্য বন্ধুর কাছে যাওয়ার কোনো দরকার হয় না।
তবে মজার ব্যাপার হলো, জেনারেশন জির অনেক ডাকনাম রয়েছে। যেমন জেনারেশন নাও (সবকিছু সঙ্গে সঙ্গে করতে চায়), গুগল জেনারেশন (যেকোনো তথ্যের জন্য গুগল করে), আই-জেনারেশন (আইফোন ও আইপ্যাডের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে) ও ইন্টারনেট প্রজন্ম (সব সময় ইন্টারনেটে সেবা পেয়েছে)।
জেন–জিদের সাধারণত কোনো সমস্যা সমাধান করতে বললে, তারা নিজেরা তা দ্রুত সমাধান করে না। বরং সমাধান খুঁজে বের করে। সে সমাধান ইন্টারনেট থেকেও পেতে পারে বা আশপাশের কারও থেকে। তারা জীবনে এমনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যে সবকিছুতে রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। হাঁটা-চলা, খাওয়া, বিনোদন, যাতায়াত—সবকিছুতে কোনো না কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার থাকে।
এখন মাথায় একটা প্রশ্ন আসতে পারে। জেন–জিদের নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ কেমন হবে? কারণ, ওরাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
চাকরি ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন দেখা যাবে। এখনকার বয়স্ক মানুষেরা যেমন দিনে আট ঘণ্টা করে সপ্তায় ছয় দিন কাজ করে অভ্যস্ত, জেন–জিরা তা পছন্দ করে না। বরং তারা সময়ের চেয়ে কাজের দিকে বেশি ফোকাস দেয়। প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজের চেয়ে তারা নিজেদের পছন্দমতো সময়ে ফ্রিলান্সিং করতে বেশি পছন্দ করে।
এই প্রজন্ম যেহেতু বেশি প্রযুক্তির মধ্যে বেড়ে উঠেছে এবং তারা প্রযুক্তিকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করে, তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা সমাজকে আরও উন্নত করে তুলতে পারে। তারা আগের প্রজন্ম থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করতে পছন্দ করে। ফ্লেক্সিবল পরিবেশে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের নেতৃত্বে ভবিষ্যতের কাজের পরিবেশ আরও ফ্লেক্সিবল এবং স্বতন্ত্র হতে পারে। তারা সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার জন্যও পরিচিত। নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে এবং সৃজনশীল সমাধান খুঁজতে ভালোবাসে। তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের মাত্রা বাড়তে পারে এবং নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তির প্রয়োগ হতে পারে।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস