শীতের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট নিশ্চয়ই পেয়ে গেছ সবাই। অ্যাকসেপ্ট করো আর না করো, তোমাকে ফলো করতে কিন্তু ছাড়বে না সে। আর এখানে ফলো অপশন বন্ধ করারও জো নেই। শীত এলেই নতুন উদ্যমে উপদেশ দিতে শুরু করে বাবা মা। ‘কোথায় যাচ্ছিস? সোয়েটার পরে যা, গলায় মাফলার দে।’ কিংবা, ‘আশ্চর্য, হাত-পা এমন সাদা সাদা হয়ে গেছে কেন? একটু লোশন দিয়ে দিই...’ মাঝে মাঝে এই ভালোবাসার অত্যাচার বিরক্তই করে আমাদের। কিন্তু কিছু তো করার নেই, মা-বাবার এই মধুর ‘বকবক’ আসলে বন্ধ করা অসম্ভব। তার চেয়ে শীত মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলাটাই বরং বুদ্ধিমানের কাজ, তাই না? ইতিমধ্যেই আলমারি থেকে ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ জড়ানো সোয়েটার, মাফলারগুলো হয়তো বের করেই ফেলেছ কেউ কেউ। লেপ-কম্বল বের করে রোদে শুকাতে দেওয়ার কথা ভাবছেন মা-বাবারা। এসবের পাশাপাশি শীতে ত্বকেরও চাই বাড়তি যত্ন। আমরা তো সাপ নই যে চাইলেই খোলস বদলে ফেলতে পারব!
শীত এলে হাইড্রোফোবিক হয়ে যাও অনেকে। পানি দেখলেই অ্যাবাউটটার্ন নিয়ে দৌড়! দিনের পর দিন গোসল না করে থাকার অভ্যাসও আছে কারও কারও। এই নিয়ে আমার এক বন্ধু বলেছিল, ‘শীতে কীভাবে মানুষ এক মাস গোসল না করে থাকে? আমার তো ২৯ দিনের মাথায় গা চুলকাতে শুরু করে!’ কিন্তু এমনটা হলে ত্বকে ধুলাবালু, ময়লা জমে কী অবস্থা হবে, ভাবো একবার! তাই শীতে ত্বক ভালো রাখার প্রথম শর্ত হলো নিয়মিত গোসল করা। আলসেমি না করে একটু কষ্ট হলেও পানি গরম করে নিয়ো, তাহলে আর ঠান্ডার ভয় থাকবে না। দিনে অন্তত দুবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত। সাবান দিয়ে নয় কিন্তু এটি আবার মুখের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ফেসওয়াশের বদলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি করে নিতে পারো বিশেষ ক্লিনজিং প্যাক। এক চা-চামচ টক দইয়ের সঙ্গে সামান্য আটা খুব ভালো ক্লিনজিংয়ের কাজ করে। এ ছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এক চা-চামচ অলিভ অয়েল ও এক চা-চামচ মধুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে সপ্তাহে দু-একবার ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাবে।
শীতে ত্বক বেশ শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়, তাই ব্যবহার করতে হবে ক্রিম বা লোশন-জাতীয় ময়েশ্চারাইজার। তবে যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত বা অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা রয়েছে, তাদের সব সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলেও চলবে বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন। তিনি আরও বলেন, শীতের রোদ ও ধুলাবালু আটকাতে বাইরে বেরোনোর সময় সানব্লক ব্যবহার করা উচিত। বাজারে অনেক রকম সানব্লক পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে দুই ঘণ্টা পরপর সানব্লক বদলানো উচিত। তবে সানব্লক যদি পানিরোধী হয়, তাহলে চার ঘণ্টা পর বদলালেও চলবে। কখনো তাড়াহুড়ায় সানব্লক দিতে ভুলে গেলে ঘরে ফেরার পর ব্যবহার করতে পারো অ্যালোভেরা জেল। এটি রোদে পোড়া ভাব দূর করে। আর কোল্ড অ্যালার্জির কারণে কখনো কখনো ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে উচিত চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন খাওয়া।
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে হাত-পায়ের যত্ন নিতে হয় একটু বেশি। সপ্তাহে দুই দিন কুসুম গরম পানিতে একটু লবণ একটু শ্যাম্পু মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করলে এই ঠান্ডায়ও তোমার হাত-পা থাকবে মসৃণ। এ ছাড়া চিনি ও নারকেল তেলের মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে তৈরি স্ক্রাব প্রতি সপ্তাহে ম্যাসাজ করে হাত-পায়ের মরা চামড়া দূর করা সম্ভব। আর কালো দাগ দূর করতে চাইলে অর্ধেকটা পাকা কলার সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারো। পায়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার খুব উপকারী, এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং পা ফাটা প্রতিরোধ করে। যদি অযত্ন বা কোনো কারণে পায়ের পাতা ফেটেই যায়, তাহলে বাজার থেকে ভালো ফুটক্রিম কিনে ব্যবহার করতে পারো। আর তোমরা অনেকে গ্লিসারিন ব্যবহার করে থাকো, এটি তৎক্ষণাৎ ত্বক মসৃণ করলেও অনেক সময় ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না।
ওহ হ্যাঁ, সবচেয়ে জরুরি কথাটাই তো বলা হলো না। শীতে তেমন পিপাসা লাগে না বলে পানি খেতে ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু। প্রতিদিন পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি। আর শুধু জাঙ্কফুড খেয়ে যতই রূপচর্চা করো, তাতে কোনো লাভ হবে না। নিয়ম করে খেতে হবে শীতকালীন ফলমূল ও শাকসবজি। তবেই না ভেতর থেকে সুরক্ষিত থাকবে তোমার ত্বক!
ত্বক নিয়ে অনেক বকবক হলো, হাঁপিয়ে উঠলে না তো? মহারানি ক্লিওপেট্রা তাঁর সারা জীবনে ত্বকের যত্নে ব্যয় করেছেন কয়েক হাজার ঘণ্টা, সেই সঙ্গে কয়েক শ লিটার গাধার দুধ! তুমি অন্তত সারা দিনে কিছুক্ষণ ব্যয় করতেই পারো, তাই না?