প্রিয় মনোবন্ধু,
আমি একজন ভর্তিশিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই চঞ্চল ছিলাম। দুই বছর আগে আমার আম্মু মারা যান। হঠাৎ আম্মুর চলে যাওয়াটা আমি কিছুতেই মানতে পারিনি। ১ বছর ৪ মাস পর আব্বু আবার বিয়ে করেন। তখন থেকেই আমার সবকিছুর পরিবর্তনের শুরু। কিচ্ছু ভালো লাগে না। কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যাই। ভাইয়া ঢাকায় চাকরির জন্য চলে যায়। বাসায় সব সময় একা থাকি। ভয় হয় — এই বুঝি আব্বু বকা দিলেন বা উনি (আব্বুর স্ত্রী) কোনো ভুল ধরলেন। নিজের বাসাটা আমার নিজের লাগে না আর। নানুবাড়ির আত্মীয়দের কাছে গেলে শান্তি পাই। কিন্তু আব্বু কোথাও যেতে দেন না। আমিও আর কিছু বলি না। মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা ছিল। হয়নি। মানসিকভাবে আরও ছোট লাগে। আবার প্রস্তুতি নেবার মানসিক শক্তি পাই না। কেউ একটুকুও বোঝে না। সহ্য করতে করতে এখন মানসিকভাবে আর পারছি না। আমি যাদের কাছে ভালো থাকি (খালামণি, মামা, ফুফি), তাদের কাছেও আমাকে যেতে দেয় না। ইদানীং মনে হচ্ছে, কোথাও পালিয়ে যাই। আমাকে যেন কেউ না পায়। আমি কী করব এখন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: তুমি যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছ, তাতে মনের ওপর চাপ পড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু পাশাপাশি মনে রাখবে, এই পরিস্থিতিগুলো তোমাকে মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে। হয়তো তোমার মন খারাপ হচ্ছে বা তোমার মধ্যে বিষণ্নতা ভর করছে কিন্তু তুমি যদি কাউন্সেলিং আর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারো, তবে নিশ্চয়ই জীবনে সফল হতে পারবে। মেডিকেলে চান্স না পাওয়া মানে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়, তোমার সামনে আরও হাজারটা সুযোগ খোলা আছে, তুমি সেগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করো। নিজেকে গড়ে তোলাটাই তোমার এখন সবচেয়ে বড় কাজ। এটা মনে রেখে তুমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের বহির্বিভাগে সাক্ষাৎ করে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং সেবা নাও। যদি প্রয়োজন হয়, ওষুধ গ্রহণ করো। দেখবে তোমার বিষণ্নতা কেটে গেছে। সারা দিন মোটেই বিছানায় গড়াগড়ি করবে না। রাতে সময়মতো ঘুমাবে। প্রতিদিন একটু খেলাধুলা বা ব্যায়াম করবে। গান শুনবে, বই পড়বে। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবে। কারও প্রতি কোনো খারাপ ধারণা পোষণ করবে না। নিজেকে প্রতিদিন একবার করে ধন্যবাদ দেবে এ জন্য যে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও তুমি নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছ। চিঠি লেখার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।