অনুশীলন করো প্রতিদিন

প্রিয় শিক্ষার্থীরা,

আজ তোমাদের কোনো গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে দেব না। বরং আজ বলব কীভাবে যেকোনো গাণিতিক সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়, তার উপায়। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বন্ধু ‘গণিত’কে একটি কঠিন বা দুর্বোধ্য বিষয় মনে করে। একটি অজানা আশঙ্কায় দিনরাত অতিবাহিত করে, যার প্রভাব অন্যান্য বিষয়ের ওপর আংশিকভাবে পড়ে। ফলে ওই সব বিষয়ের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয় না। নিজের প্রতি আস্থার জায়গায় সামান্য চিড় ধরে। মনোবল হারিয়ে শুরু হয় লক্ষ্যহীন ছুটে চলা। কিন্তু আমি তোমাদের বলব, কোনোভাবেই আশাহত হবে না বরং স্বীয় লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। এক মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে মনের গহিনে প্রবেশ করে নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করো:

  • ‘গণিত’কে ভয় না পেয়ে ভালোবেসে কতটা সময় দিয়েছ?

  • শুধু পরীক্ষা ভালো করার জন্য গণিত করো, নাকি গণিত শেখার জন্য বুঝে করো?

  • গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো ভালোভাবে ও নির্ভুলভাবে জানা আছে কি না?

  • ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে বারবার অনুশীলন করা হয় কি না?

  • অধ্যায়ভিত্তিক অনুশীলন শেষে টেস্ট পেপারস/প্রশ্নব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো সমাধান করেছ কি?

ওপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও অনেক প্রশ্ন করা যেতে পারে। প্রশ্নগুলোর উত্তর কোনো কোনো ক্ষেত্রে না–বোধক হলে বুঝতে হবে, গণিত শিখনে কার্যক্রমটি সঠিক হচ্ছে না। গণিত শিখনে বা গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই নিজের ইচ্ছা বা মনোবলকে হ্যাঁ–বোধক করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানির যেমন বিকল্প নেই, তেমনি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্থির মনোবল, বিষয়টির প্রতি ভালোবাসা ও কঠোর অনুশীলনের বিকল্প আজও সৃষ্টি হয়নি।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, এখন থেকেই তোমরা স্বপ্নপূরণের বিষয়বস্তু ঠিক করো এবং নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করো। আশা রাখি তোমার গণিতের ভয় বা দুর্বলতা কেটে যাবে। সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।

প্রতিদিন অনুশীলন

অন্যান্য বিষয় ও প্রাত্যহিক কাজ পর্যালোচনা করে গণিত অনুশীলনের জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করো। একসঙ্গে অধিক অধ্যায় অনুশীলন না করে একটি বা দুটি অধ্যায় একাধিকবার অনুশীলন করো। অধ্যায়ভিত্তিক অনুশীলন শেষে টেস্ট পেপারস/প্রশ্নব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো (সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি) সমাধান করো। প্রথমবারেই সব সমস্যার সমাধান নির্ভুলভাবে পারবে, এমনটি না–ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধৈর্য সহকারে পুনরায় চেষ্টা করো। প্রয়োজনে বিষয় শিক্ষকের সাহায্য নাও। পারোনি বলে ফেলে রাখা বা বাদ দেওয়া যাবে না।

বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর শেখায় বেশি গুরুত্ব

সত্যি বলতে, বছরজুড়ে শ্রেণি কার্যক্রমসহ বাসায় অনুশীলনের ক্ষেত্রেও তোমরা অধিকাংশ সময় সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান অনুশীলন করো। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর শেখায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ বোর্ড পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল অংশে আলাদা আলাদাভাবে ৩৩% নম্বর পেয়ে পাস করতে হয়। তা ছাড়া বিষয়ভিত্তিক গ্রেড পয়েন্ট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বহুনির্বাচনি অংশে পূর্ণ নম্বর পাওয়া অনেক জরুরি। ভালো ফলাফলের জন্য অধ্যায়ভিত্তিক মৌলিক ধারাণাগুলো বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে মনে রাখতে হবে। গণিত বিষয়ে বহুনির্বাচনি অংশের ৩০ নম্বরের বিভাজন দেখে নাও:

ক বিভাগ (বীজগণিত) থেকে ৯–১০টি প্রশ্ন থাকবে।

খ বিভাগ (জ্যামিতি) থেকে ৯–১০টি প্রশ্ন থাকবে।

গ বিভাগ (ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতি) থেকে ৭–৮টি প্রশ্ন থাকবে।

ঘ বিভাগ (পরিসংখ্যান) থেকে ২–৩টি প্রশ্ন থাকবে।

[প্রশ্নের কাঠামো: সহজ মান—৩০% (৯টি), মধ্যম মান—৫০% (১৫টি) এবং কঠিন মান—২০% (৬টি)]

সময়ের কথাও মাথায় রাখতে হবে। গণিত বিষয়টি প্রয়োগিক বিধায় কোনো কোনো প্রশ্নোত্তরের ক্ষেত্রে রাফ করার প্রয়োজন হতে পারে।

সৃজনশীল অংশ

সৃজনশীল অংশে প্রতিটি উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্প পাঠ্যপুস্তকে প্রদত্ত সমস্যার আলোকেই তৈরি হয়। তবে পাঠ্যপুস্তকের সমস্যাটি হুবহু উদ্ধৃত হয় না। মৌলিক ধারণা ঠিক রেখে বা গুণগত পরিবর্তন না করে শুধু কাঠামোগত বা অক্ষর ও সংখ্যাভিত্তিক পরিবর্তন করে উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্প তৈরি করা হয়। অনেক সময় একাধিক অধ্যায় থেকে সমন্বয় করে উদ্দীপক তৈরি হয়। পাঠ্যপুস্তকে প্রদত্ত তত্ত্ব, তথ্য, সূত্র ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো বারবার অনুশীলন করলে উদ্দীপক বুঝতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সৃজনশীল অংশে চারটি বিভাগ থাকে, তা নিচে দেওয়া হলো:

পরীক্ষার সময় যা খেয়াল রাখতে হবে

১. প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নে তিনটি প্রশ্ন থাকবে। ক নম্বর প্রশ্নটি উদ্দীপকের বাইরেও হতে পারে। তবে যে অধ্যায় থেকে উদ্দীপক তৈরি করা হবে, ওই অধ্যায় থেকেই সাধারণত থাকে।

২. খ এবং গ নম্বর প্রশ্নটি উদ্দীপকের আলোকে তৈরি করা হয়। সে জন্য খ এবং গ নম্বর প্রশ্নটির সমাধান উদ্দীপক ছাড়া করা যাবে না।

৩. ক, খ এবং গ নম্বর প্রশ্ন তিনটি সাধারণত নির্ভরশীল হবে না। নির্ভরশীল অর্থ—একটি প্রশ্নের উত্তর অন্যটি সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সুযোগ নেই।

৪. জ্যামিতিক চিত্র সঠিকভাবে আঁকতে হবে। যেমন একটি রেখাংশের দৈর্ঘ্য 11 সেমি। রেখাংশটি বর্গের পরিসীমা হলে বর্গটি আঁকো। এ ক্ষেত্রে রেখাংশের দৈর্ঘ্যকে ক্যালকুলেটর দিয়ে ভাগ না করে পেনসিল কম্পাসের মাধ্যমে সমান চার ভাগে ভাগ করতে হবে।

৫. বৃত্ত অঙ্কনের প্রয়োজন হলে বৃত্তের কেন্দ্র সঠিক স্থানেই চিহ্নিত করতে হবে।

৬. জ্যামিতিক সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিত্র আঁকতে হবে।

৭. ত্রিকোণমিতির দশম অধ্যায়ে দূরত্ব ও উচ্চতাবিষয়ক সমস্যা সমাধানে চিত্র প্রয়োজন হলে অবশ্যই পেনসিল কম্পাসের মাধ্যমে সঠিকভাবে আঁকতে হবে।

৮. প্রয়োজনীয় স্থানে একক লিখতে হবে। উত্তর আসন্ন মান হলে মানের শেষে (প্রায়) লিখলে ভালো হয়।

৯. সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। পরীক্ষার সময় একেবারে নতুন কোনো ক্যালকুলেটর ব্যবহার না করাই ভালো।

পরিসংখ্যান

পরিসংখ্যান থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিচের দুটি বিষয় বারবার অনুশীলন অতীব গুরুত্বপূর্ণ:

১. সারণি থেকে সূত্র ব্যবহার করে গড়, মধ্যক ও প্রচুরক নির্ণয় করতে হয়।

২. সারণি ব্যবহার করে লেখ কাগজে বর্ণনাসহ আয়তলেখ, গণসংখ্যা বহুভুজ ও অজিভরেখা অঙ্কন করতে হয়।

পরিশেষে বলা যায়, ‘গণিত’কে সহজভাবে নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিত চর্চা করলে কখনো মনে হবে না, এটাতে কোনো সমস্যা আছে। আর সমস্যা সমাধান করার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মাধ্যমে ‘গণিত’কে জীবনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। ‘গণিত’কে প্রাণের প্রিয় করে নিজের আত্মার আত্মীয় বানাতে পারলেই সাফল্য অনিবার্যভাবে অভাবনীয় আকর্ষণে ধরা দেবে হাতের মুঠোয়। তাই বলতে চাই—

‘ভয় ভীতি রাগ দ্বেষ ক্ষোভ আর নয়
গণিতকে দখলে নিয়ে করো বিশ্বজয়।’