নিজেকে জানো
তুমি কতটা ভোজনরসিক
পৃথিবীর সর্বসুখের অন্যতম উৎস যে সুস্বাদু খাবারদাবার, সে বিষয়ে অনেকেই একমত হবে। অনেক সাহিত্যিক, বিজ্ঞানীও খাবারদাবারকে তাঁদের পছন্দের তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে স্থান দিয়েছেন। রোয়াল্ড ডাল খাবার শুধু খেতেই ভালোবাসতেন না, তা নিয়ে লিখতেও পছন্দ করতেন। কাজেই তুমি যদি খাবারদাবারকে পছন্দের তালিকায় একেবারে শীর্ষে রাখো, তবে সেটা কোনো অপরাধ নয়। খাবারদাবার একটু বেশিই ভালোবাসো বলে যদি বন্ধুবান্ধবের টিপ্পনি শোনো, তবে সেটা নিয়েও মন খারাপ কোরো না। বরং, নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও, আর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও, তুমি কতটা ভোজনরসিক।
১. বেড়াতে গিয়েছ। কথাবার্তার একপর্যায়ে এল খাবারদাবার। খাবার আসার পর তুমি যা করো—
ক. আরেহ খাবার এসেছে, খেতে শুরু করব। কথাবার্তা পরেও বলা যায়। খাবারটাই তো মূল। বাকি সব তুচ্ছ!
খ. খাবার দেখে খেতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু ভদ্রতা করে খাব না। লক্ষ রাখব, অন্য কেউ আগে শুরু করে কি না। কিংবা কেউ খেতে বললে তখন খাব।
গ. খাবার এসেছে তো কী হয়েছে? আমার খাবারদাবার একদম ভাল্লাগে না। কেউ খেতে বললে হয়তো ভদ্রতা করে একটু মুখে দেব।
২. খাবার খেতে বসে দেখলে খাবারে লবণ বেশি। তোমার মনোভাব যা হয়—
ক. লবণ যে বেশি হয়েছে, ওটাই তো আমি বুঝব না! খাওয়ার দিকে এমনিতেই আমার খুব একটা মন নেই।
খ. লবণ বেশি হবে কেন? খাবারটাই যদি শান্তিতে না খেতে পারি, তাহলে আর কী আছে জীবনে? তবু বিরক্তি নিয়েই খাবার শেষ করব। খাবার তো আর নষ্ট করতে পারি না।
গ. যার রান্না, তাকে বিষয়টা জানাব। তবে এ নিয়ে আর বেশি কিছু ভাবব না। এমন তো হতেই পারে।
৩. খেতে ভালোবাসো বলে তোমার বন্ধুরা সব সময়ই তোমাকে খোঁচা মারে। তাদের ঠাট্টার ব্যাপারটা তুমি যেভাবে দেখো—
ক. সব সময় কি কারও ঠাট্টা ভালো লাগে, বলেন? আমার একটুও ভালো লাগে না খাবার নিয়ে খোঁচা মারলে। আমি তখন মন খারাপ করে আরও বেশি খাওয়াদাওয়া করি।
খ. উল্টো! খেতে ভালোবাসি না বলে আমাকে কথা শোনায়। সেসব এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিই।
গ. আমি একদম এসব কথা গায়ে মাখি না। আমার যা করতে ভালো লাগে, সেটাই করি। ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে আরও বেশি করে খাই!
৪. ধরো, তোমাকে একটা খাবার দিয়ে বলা হলো, এর মধ্যে কী কী উপকরণ আছে, সেটা বলতে। সে ক্ষেত্রে তোমার উত্তর যা হবে—
ক. আমি কেমন করে বলব কী কী দিয়ে রান্না করেছে, খাবারের স্বাদটাই বুঝি না ঠিকমতো, আবার খাবারের উপকরণ!
খ. আরেহ, এটা কোনো ব্যাপার? আমি তো খাবারের ঘ্রাণ নিয়েই বলে দিতে পারি, কী কী উপকরণ আছে এতে!
গ. সব পারব না, তবে কিছু পারব। উপকরণের নাম বলতে পারি বা না পারি, মজার খাবার হলে খেতে দিলে সেটা ঠিকই পারব।
৫. বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেতে যাবে। এ ক্ষেত্রে কোথায় খেতে যাবে, সে ব্যাপারে তুমি যে ধরনের পরামর্শ দাও—
ক. আমার থেকে কেউ পরামর্শ নেওয়ার কথা চিন্তাই করবে না। খাবারদাবার কোনো পড়ার বিষয় হলে, আমি মাইনাস শূন্য পেতাম! মানে, এ ব্যাপারে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত।
খ. সবাই কী ধরনের খাবার খেতে চাইছে, তার ওপর নির্ভর করে একটা পরামর্শ দেব।
গ. কোনটা রেখে কোনটা বলি? মানে, আমার তো পছন্দের খাবারের তালিকা ইয়াআআআ বিশাল, আবার কোথায় কী ভালো পাওয়া যায়, সেটাও জানা। সে জন্য নিজেই একটু দ্বিধান্বিত হয়ে যেতাম।
৬. এর মধ্যে যে বিষয়টা তোমার সঙ্গে একবার হলেও ঘটেছে—
ক. অতিরিক্ত গরম খাবার মুখে দিয়ে জিব পুড়েছে। বলে রাখা ভালো, এটা আমার প্রায়ই হয়।
খ. গরম খাবার একেবারে ঠান্ডা বরফ হয়ে গিয়েছে, কারণ খেতে মনে ছিল না।
গ. ওপরের দুটিই ঘটেছে। তবে কালেভদ্রে। রোজ রোজ এমন হয় না।
৭. বন্ধুরা খাবার নিয়ে গল্প করছে। সে সময় তোমার অবস্থান কী থাকে?
ক. কিছু বলার থাকলে বলি, না থাকলে বলি না। আলোচনার ওপর নির্ভর করে।
খ. খাবার নিয়ে আলোচনা তো শুরুই করি আমি! এমনও হয়েছে, কথা শুরু করলে আমি আর শেষই করতে চাই না।
গ. মনে মনে ভাবতে থাকি, বিরক্তিকর আলোচনাটা শেষ হবে কখন।
৮. কোথাও খেতে গেলে তোমার খাবার অর্ডার করতে আনুমানিক কেমন সময় দরকার হয়?
ক. মেনু দেখি। বুঝি কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন, তার ওপর নির্ভর করে অর্ডার দিয়ে দিই। বেশি সময় দরকার হয় না।
খ. এক থেকে দশ গুনতে থাকুন, এর মধ্যে আমার খাবার অর্ডার দেওয়া শেষ হয়ে যাবে। একটা পানি অর্ডার করতে আর কত সময় লাগে? অন্য খাবার তো খেতেও পারি না, তাই অন্যরা যেটা অর্ডার করে, সেটাই করে দিই।
গ. ধরুন, মেনুর এ মাথা থেকে ও মাথা সবটাই অর্ডার করতে পারি, কারণ আমার সব খাবারই পছন্দ। এ জন্যই একটু সময় লেগে যায় বাজেট ভেবে খাবার ঠিক করতে।
৯. শুনলে নতুন একটা খাবারের দোকান হয়েছে এলাকায়। এ নিয়ে তোমার মনোভাব যেমন হবে—
ক. খবরটা শুনব বলতে? নতুন খাবারের দোকান হলে সেটা আমার আগে অন্য কেউ জানবে, ভাবলেন কেমন করে? অন্য কেউ জানার আগেই আমার ওই দোকানের খাবারের রিভিউ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে যাবে, হুমম...!
খ. তো? নতুন খাবারের দোকান হয়েছে তাতে আমার কী? গুরুত্বহীন তথ্য, তাই পাত্তা দেব না।
গ. সময় পেলে হয়তো খাবার কেমন, সেটা দেখতে যাব।
১০. তোমার প্রিয় খাবারের তালিকা—
ক. নেই। আমার কোনো প্রিয় খাবার–টাবার নেই। কিছু একটা হলেই হয়।
খ. হাতে গোনা কিছু খাবার আছে তালিকায়। অত দীর্ঘ কোনো তালিকা নয়।
গ. আমার প্রিয় খাবারের তালিকা নিয়ে আমি রীতিমতো একটা বই লিখতে পারি। শুধু প্রকাশক পাচ্ছি না বলে সেটা লিখছি না। তালিকা এতই বিশাল।
নম্বর
১. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
২. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৩. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৪. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৫. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৬. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৭. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৮. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৯. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
১০. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে
০–৪০
বাংলায় একটা শব্দ আছে, দা-কুমড়া। তোমার সঙ্গে খাবারের সম্পর্কটা ঠিক সে রকম। মানে একদম বৈরী অবস্থা। খাবার দেখলেই তোমার গা গুলিয়ে আসে, মাঝেমধ্যে খাবার খেতে হবে, এই ভয়েই তুমি আধমরা হয়ে যাও। তুমি খাওয়াদাওয়া নিয়ে এতই উদাসীন যে খাবার খেতে মাঝেমধ্যে ভুলেও যাও। তাই অসুখ–বিসুখেও পড়ো। নাহ, ভোজনরসিক হতে হবে না। অন্তত ঠিক করে খাওয়াদাওয়াটা তো করো? মনে রেখো, সুস্থ থাকা সবচেয়ে জরুরি।
৪৫–৭০
তুমি আছ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায়। তুমি পরিমিত খাওয়াদাওয়া করো। তবে কোনো বিশেষ উৎসব হলে কবজি ডুবিয়েই খাও। তখন আবার একেবারেই অন্য সবকিছুর কথা ভুলে যাও। তোমার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কেউ কিছু বললে তুমি তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবো না। তোমার সুখাদ্যপ্রীতি আছে। তোমাকে বেশ ভালোই ভোজনরসিক বলা চলে।
৭৫-১০০
মানুষ বইকে প্রিয় বন্ধুর স্থান দিয়েছে, আর তুমি খাবারকে! খাওয়াদাওয়া করাকেও যে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, সেটা তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। খাবার গরম হলেও তুমি অপেক্ষা না করে গপাগপ খেয়ে নাও। আবার খাবারে পান থেকে চুন খসলেই তোমার মুখ ভার হয়ে যায়। কেউ যদি তোমার খাওয়া নিয়ে কিছু বলে, তবে তুমি বেশ কষ্ট পাও। তোমার মন ভালোও করতে পারে মজাদার খাবার। আসলে তুমিই প্রকৃত ভোজনরসিক! তবে একটা ছোট উপদেশ, অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা ভুলে গেলেও হবে না কিন্তু। খাবারকে ভালোবাসতে থাকো।