ফাঁকিবাজি করে না, এমন মানুষ কি পৃথিবীতে আছে? কম–বেশি সবাই ফাঁকি দিয়ে থাকে। কিন্তু কেউ কেউ আছে, যারা এতই বেশি ফাঁকিবাজ যে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠিয়ে ফেলতে পারে যেকোনো সময়। তুমিও কি সেই তালিকায় পড়ো? ঠিক আছে, খুব বেশি ভাবতে হবে না। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। আর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও তোমার অবস্থান কী। দেখো, আবার এখানেও ফাঁকি দিয়ো না যেন!
১. গুনে গুনে একুশ দিন ছুটি পেলে। ছুটি পেলেই তো হবে না। বিশাল সিলেবাস, বাড়ির কাজ রয়েছে। তুমি ছুটিতে যা করবে—
ক. ছুটি দেয় কেন বলুন তো? ছুটি মানেই তো কাজকর্ম থেকে নিজেকে বিশ্রাম দেওয়া। কাজেই পুরো ছুটিটাই আরাম–আয়েশ করে কাটিয়ে দেব। কী আছে জীবনে?
খ. বিশাল সিলেবাস, বাড়ির কাজ এসব টেনশন মাথায় নিয়ে ছুটি আরাম করে কাটানো অসম্ভব! সেগুলো শেষ করব, যদি এরপর সময় পাই, তবেই হয়তো বিশ্রাম নেব।
গ. পুরো ছুটি কাজ করে কাটিয়ে দেওয়ার কোনো মানে নেই। অল্প অল্প পড়ালেখা করব, আর বেশি বেশি ছুটি উপভোগ করব।
২. বাসায় বড়দের জন্য পড়ালেখায় যে ফাঁকিবাজি করবে, তার কোনো উপায় নেই। আম্মু, না হয় আপু কিংবা ভাইয়া পেছনে লেগেই আছে তোমার। ধরো, দিন দুয়েকের জন্য তারা নজরদারি করবে না। এই সময় তুমি যেভাবে পার করবে—
ক. তারা পড়ালেখার খবর রাখুক আর না-ই রাখুক, দিনশেষে তো আমাকেই পরীক্ষায় বসতে হবে। কাজেই নিজের মতো পড়ালেখা করতে থাকব।
খ. সত্যি? তিন সত্যি বলুন! আমি মনে হয় দুটো দিন শুধু উড়ে বেড়াব। ওই গানের মতো, ‘এমন যদি হতো, আমি পাখির মতো, উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ…’
গ. দিন দুয়েক পরে যে এসে আবার খবর নেবে। তাই একদিন আরাম করব, আরেক দিন পড়ালেখা!
৩. নিজের ধোয়া কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখতে হবে। এ রকম কাজ হাতে থাকলে কী করো সচরাচর?
ক. পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজের একটা, তবে গড়িমসি করলেও শেষমেশ করে ফেলি বকা খাওয়ার আগেই।
খ. শুনেই তো ভয় লাগছে। একটা চেয়ারের মধ্যে কাপড়গুলো রেখে দেব। নইলে না ভাঁজ করেই আলমারিতে রেখে দেব।
গ. আগে হোক, পরে হোক। আমাকেই করতে হবে। তাই সঙ্গে সঙ্গেই করে ফেলব।
৪.পরীক্ষার আগে চার দিন বন্ধ। তোমার প্রস্তুতি নেওয়ার ধরন এ ক্ষেত্রে যে রকম—
ক. চার দিন? সে তো অন্নেককক সময়। দেখি কখন বসি...এ রকম করতে করতে একদম পরীক্ষার আগের দিন পড়তে বসব!
খ. মাত্র চার দিন? ভেবেই তো হাত–পা শক্ত হয়ে আসছে। প্রথম দিন থেকেই পড়ব। জিজ্ঞেস করার কী আছে?
গ. সহজ হিসাব। দুই দিন পড়া, দুই দিন বিশ্রাম!
৫. বেশ জমজমাট ছিল রাতের খাবারের মেনু। সব তোমার পছন্দের খাবারে ভর্তি। খাওয়া শেষে নিজের খাবারের প্লেটটি ধুয়ে রাখার পালা। তুমি কী করো?
ক. প্রথমে দেখি আমার হয়ে কেউ ধুয়ে দেবে কি না। যদি না দেয়, তবে নিজেই ধুয়ে রাখি।
খ. ওমা! নিজের কাজ নিজেই করব। সেটা নিয়ে আবার প্রশ্ন কেন? অন্যের ঘাড়ে কাজ চাপানো একদম ঠিক নয়।
গ. খাবার খাওয়াও ক্রিয়া। মানে কাজ। আমার কাজ ওটুকুই। প্লেট ধোয়া আমার কাজের তালিকায় পড়ে না।
৬. আজ বাদে কাল তোমার কোনো একটা কাজ জমা দেওয়ার শেষ সময়। এমন সময় তোমার বন্ধু বলল, চমৎকার কোনো মুভি দেখতে তার সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে তুমি কী করবে?
ক. কাজ তো মুভি দেখেও এসে করা যাবে। আমি আগে মুভি দেখব, তারপর কাজ করব।
খ. কাজের জন্য জীবন, নাকি জীবনের জন্য কাজ? মুভি দেখাটাকেই গুরুত্ব দেব। কাজ ওই সময়ে জমা দিতে পারলে পারলাম, না পারলে কী আর করা!
গ. আর যা–ই হোক, আমি ঠিক সময়ে কাজ করতে ভালোবাসি। মুভিটা তো দুই দিন পরেও দেখা যাবে।
৭. কাজের কথা শুনলেই তুমি যা করো—
ক. কাজ করতে শুরু করে দিই। আমাকে কাজপাগল মানুষই বলা যায়।
খ. গড়িমসি করি! শেষ মুহূর্তে কাজ করার রেকর্ড তো আমার এক দিনের নয়।
গ. আস্তে–ধীরে কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু ঠিক সময়ে শেষ করি।
৮. ধরো, কোনো একটা কাজ করছ। এর মধ্যে তোমার কোনো বন্ধুর ফোন পেলে। তুমি যা করবে—
ক. শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, কাজ ফেলে বন্ধুর সঙ্গে গল্প করব। কারণ, গল্প করাকে কাজের চেয়েও ঢের গুরুত্ব দিই আমি।
খ. বন্ধুকে বলব, পরে কথা বলব। হাতের কাজ শেষ করব আগে। কাজের চেয়ে তো গল্প আর বড় হতে পারে না!
গ. নির্ভর করবে কোনটা বেশি জরুরি। যদি দেখি কাজ পরে করলেও ক্ষতি নেই, তবে পরে কাজ করব। আগে বন্ধুর সঙ্গে আলাপ শেষ করব।
৯. কোনো কাজের দায়িত্বে আছ তোমরা ছয়জন। কাজটা এমন, তুমি কাজ না করে অন্যরা করলেও হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তুমি যা করো—
ক. ছয়জনের দলের নেতৃত্ব কে দেবে? আমাকেই তো দিতে হবে। পুরো কাজ না শেষ হওয়া পর্যন্ত বিষয়টা আমিই দেখব।
খ. যতটুকু কাজ আমার দায়িত্ব করা, তা নিশ্চিত করব।
গ. কাজ করার যখন কথা, তখনই ঠিকঠাক কাজ করি না। আর এখানে তো কাজ না করলেও চলে। করব না কাজ!
১০. ফাঁকিবাজি প্রতিযোগিতা হলে সেখানে তোমার অবস্থান যা হবে—
ক. চ্যাম্পিয়ন! আমাকে হারায় কে?
খ. আমি লাড্ডুগুড্ডু। মাইনাস একশতম হওয়া সম্ভব হলে সেটা হতাম।
গ. আমার অবস্থান একদম মাঝখানে।
নম্বর
১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
২. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৩. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৪. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৫. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৬. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৭. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৮. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৯. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
১০. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে
০–৪০: বিরল শব্দটা তোমার সঙ্গে বেশ ভালোই যায়। ভাবছ, কেন বলছি? তোমার বয়েসী সবার মধ্যেই কম–বেশি একটু ফাঁকি দেওয়ার স্বভাব থাকে। কিন্তু তুমি একেবারেই ফাঁকি দিতে পছন্দ করো না, বরং কাজ শেষ হয়ে গেলেও তোমার মনে হয় আর কী করা যায়। কিন্তু অনেক সময় অতিরিক্ত চাপ নিয়ে নাও, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানসিক অশান্তিতে ভুগতেই থাকো। কাজে ফাঁকি দেওয়া মোটেও ভালো কিছু নয়। তাই বলে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ো না।
৪৫–৭০: ফাঁকিবাজ নও তুমি। তবে তোমার মধ্যে ফাঁকিবাজির প্রবৃত্তি আছে। কী রকম? তুমি অনেক সময় নিজে কাজ না করে অন্যের ঘাড়ে কাজ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো। কিংবা কাজ করবে করবে বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে ফেলো। শেষ মুহূর্তে ঠিকঠাক কাজ করতে পারলেও অনেক চাপ নিয়ে কাজ শেষ করো। তোমাকে তাই পুরোপুরি ফাঁকিবাজ বলা যায় না। তোমার অবস্থান বৃত্তের একদম মাঝখানে।
৭৫-১০০: ফাঁকিবাজি যদি কোনো কাজ হয়, তবে তুমি এই কাজে সবচেয়ে কর্মঠ ব্যক্তি! তোমাকে ফাঁকিবাজদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। এত ফাঁকিবাজিও যে মানুষ করতে পারে, তা তোমাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। তুমি নিজের কাজ নিজে তো করোই না, অনেক সময় ফাঁকিবাজি করতে করতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষও করতে পারো না। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তোমাকে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও তোমার এখন থেকেই ফাঁকিবাজির অভ্যাসটা কমিয়ে আনা জরুরি।