প্রিয় কিআ,
জানো, এই চিঠির আগে আমি তোমাকে একবার মেইল করেছিলাম। সত্যি বলতে কি, কিআতে আমার চিঠি না দেখে হতাশও হয়েছিলাম একটু। ভেবেছিলাম, তাহলে কি আমার ই–মেইল তোমার কাছে পৌঁছায়নি? নাকি তুমি আমার ই–মেইল পড়োনি? তবু আরেকবার সাহস সঞ্চয় করে তোমাকে চিঠি পাঠিয়ে দিলাম। আমি তোমাকে চিঠি লিখছি বলে আবার ভেবো না শুধু আমিই তোমার বন্ধু। তুমি আমার বোনেরও অনেক ভালো বন্ধু। প্রতি মাসে আম্মু যখন তোমাকে বাসায় নিয়ে আসে, তখন আমরা দুই বোন তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। তোমাকে আগে পড়ার জন্য রীতিমতো টানাটানি শুরু করি। যে আগে ছিনিয়ে নিতে পারে, সে জয় করে ফেলে তোমাকে। অন্যজন অধীর আগ্রহে তোমাকে পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তবে টানাটানি করতে গিয়ে কিন্তু তোমাকে আমরা একটুও ব্যথা দিই না। একটা অংশও ছিঁড়ে যেতে দিই না। তুমি হয়তো বলবে, দুজনের জন্য দুটি কিআ কিনে নিলেই তো হয়। তাহলে আর টানাটানি করতে হয় না। কিন্তু আরেকটা কিআ কিনলে তো আর দুই বোন এই মজা পাব না। প্রতিবার তোমাকে পড়া শুরু করি এই মিষ্টি খুনসুটির মধ্য দিয়ে। তুমি আমাদের দুজনেরই সব সময়ের খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু গত বছরের করোনা বিধিনিষেধে এই প্রিয় বন্ধুকে পাশে পাইনি আমরা। ভেবেছি, করোনা বিধিনিষেধে আমাদের মতো তুমিও বুঝি বের হচ্ছ না। তবে এই বছর থেকে আবার নিয়মিত তোমাকে পাশে পাচ্ছি। সেপ্টেম্বর সংখ্যার সব কটি লেখাই দারুণ ছিল। নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস রোবটের দীর্ঘশ্বাস খুব ভালো লাগছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের প্রতি আমার বোনের অনেক আগ্রহ। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে এত সুন্দর লেখা ছাপানোর জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। রকিব হাসান আমার প্রিয় লেখক। তাই তাঁর লেখাটা পড়তে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আর আমি তিন গোয়েন্দার অনেক বড় ভক্ত। তোমার ‘তিন গোয়েন্দা’ সংখ্যাটা পড়ার খুব ইচ্ছা। তাই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি। তুমি কি বলতে পারবে, আমি সংখ্যাটা কীভাবে পেতে পারি?
জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা তোমাকে। এভাবেই সব সময় পাশে থেকো, কেমন?
মেহনাজ নওমী
দশম শ্রেণি, নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
কিআ: ভালো তো, টানাটানি করার এই অভ্যাস তোমাদের পরে কাজে লাগবে। কোথায় জানো? স্কুলের দড়ি–টানাটানি খেলায়। তোমাদের দুই বোনকে অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা। দেখি, এবার এটা কীভাবে টানাটানি করো!
প্রিয় কিআ,
এটা তোমাকে লেখা আমার প্রথম চিঠি। অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম তোমাকে একটা চিঠি লিখব। এবার লিখেই ফেললাম। আমি তোমাকে পড়ে একটা বইয়ের সন্ধান পেয়েছি। বইটির নাম তিন গোয়েন্দা। বইটি আমার প্রিয় ও নিত্যদিনের বন্ধু হয়ে উঠেছে। আমি চাই, চরম রোমাঞ্চকর এই বই তুমিও পড়ো। আমি তোমার মতো এতটা গুছিয়ে লিখতে পারিনি, তবু আমি চাই, তুমি আমার চিঠিটা পড়ো। আমার চিঠিটা কি তোমার ভালো লেগেছে? আরেকটা কথা বলে রাখি, আমার বন্ধুরাও তোমাকে পড়ে বেশ আনন্দ পায়। আমি চাই, তুমি আরও খ্যাতি অর্জন করো। অভিনন্দন তোমাকে কিআ। ভালো থেকো।
সানজানা ইসলাম
সপ্তম শ্রেণি, শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা
কিআ: খুব ভালো লেগেছে তোমার চিঠি। তিন গোয়েন্দা আমারও খুব প্রিয় বই। টেরর ক্যাসল, কঙ্কাল দ্বীপের পাপালো হারকুস কিংবা রূপালী মাকড়সার সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কথা ভাবলে এখনো মন কেমন করে। যারা পড়োনি, পড়ে ফেলো আজই। সানজানার মতো তোমাদেরও জানা হয়ে যাবে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ। ভালো থেকো, সানজানা। নিয়মিত লিখবে।
প্রিয় কিআ,
অষ্টম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এটা তোমার কাছে আমার প্রথম চিঠি। ২০১৬ সালে আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। ইংরেজি মাধ্যমে পড়তাম বলে বাংলা বইয়ের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। আমার কয়েকজন সহপাঠীর কাছে তোমাকে প্রথম দেখি। ওরা ক্লাসে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে পড়ত। তখন আমিও প্রথম তোমাকে খুলে দেখি। এত গল্প ও ফিচার দেখে আমি তোমার ভক্ত হয়ে যাই। বাসায় এসে বাবাকে বলি তোমাকে কিনে দিতে, কিন্তু বাবা কোথাও তোমাকে খুঁজে পায়নি। এভাবে দিন যায়, এরপর একদিন চলে আসে সমাপনী পরীক্ষা। আমাদের বাসায় তখন থেকেই প্রথম আলো পত্রিকা রাখা শুরু হলো। তখন তোমার জন্মদিনে একটা ছোট বই, বইও নয়, সেটা কী ছিল, আমি নিজেও জানি না, তো সেটা খুঁজে পাই। সেখানে গুড্ডুবুড়ার একটা ছোটগল্প ছিল। সেটাও আমার ভালো লাগে। তখন আবার তোমাকে খোঁজার যুদ্ধ শুরু করি, কিন্তু তখনো পাইনি। এরপর ২০২০ সালে এক সহপাঠীকে দেখলাম তোমাকে কিনতে। তখন তাকে বলে আমি নিজের টাকা দিয়ে প্রথম তোমাকে কিনি। সেই সময় এমন ছিল, যা লিখে বোঝানো যাবে না। এভাবেই চলছিল, কিন্তু গত এপ্রিল মাসে লাইব্রেরিতে কিআ না আসায় আমার সংগ্রহে বালু পড়ে গেল। আমার কাছে এপ্রিল ও মে মাস ছাড়া এই এক বছরের বাকি সব সংখ্যা আছে। নিজের টাকা খরচ করছি বলে পরের সংখ্যাগুলো বাবা নিজেই হকার আঙ্কেলকে বলে কিনে দিয়েছে। এখন আমিও সবাইকে বলতে পারি, ‘আমার পৃথিবী অনেক বড়।’ ভালো থেকো।
সৈয়দা রাইসা আফসানা
অষ্টম শ্রেণি, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা, ঢাকা
কিআ: অনেক ধন্যবাদ রাইসা। তোমাদের এই চিঠিগুলো যে আমাদের কত অনুপ্রাণিত করে, লিখে বোঝাতে পারব না। আমাদের সঙ্গেই থেকো। শুভকামনা তোমার জন্য।
প্রিয় কিআ,
আসলে করোনা বিধিনিষেধের কারণে আমাদের শহরে হুট করে দু-তিন মাসের জন্য কিশোর আলো আসা বন্ধ হয়ে গেল। তারপর আমার অবস্থা তো খারাপ। তখন বুঝলাম, কিশোর আলোর গুরুত্ব আমার জীবনে ঠিক কতটা! যখন সেপ্টেম্বর সংখ্যাটা হাতে পেলাম, এত আনন্দ হলো, তা লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
আসলে কিআর সঙ্গে আমার পথচলা ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে। প্রায় পাঁচটি বছর। তখন আমি সবে ফাইভে উঠেছি। আমার আম্মু আবার বিজ্ঞানচিন্তা পড়ত। একদিন দেখি, হকার আঙ্কেল সোফায় ভুল করে বিজ্ঞানচিন্তার বদলে কিআ নামের একটি ম্যাগাজিন রেখে গেছেন। আমি প্রচণ্ড কৌতূহলী। ম্যাগাজিনটা একটু নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে সবার প্রথমে কুইজটা মেলাতে গেলাম। তারপর ‘নিজেকে জানো’। এরপর আস্তে আস্তে সেদিনই পুরো কিআ শেষ করে ফেললাম! শুরু হলো অদ্ভুত মুগ্ধতা। পরদিন যখন আম্মু ম্যাগাজিনটা হকার আঙ্কেলকে ফেরত দেওয়ার জন্য আমার কাছ চাইল, স্রেফ বলে দিলাম, ‘আমি একদমই ম্যাগাজিনটা দেব না। তুমি হকার আঙ্কেলকে বলে দাও, এখন থেকে যেন প্রতি মাসে আমায় কিআ দিয়ে যান!’
ব্যস, তারপর তো শুধুই পথচলা। একে একে প্রতিটা সংখ্যা জমানো, কিআর সেই প্রিয় গন্ধ, বাসার কেউ বকা দিলে কিআ হাতে নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকা। আমার মা–বাবা দুজনই চাকরিজীবী। ছোটবেলা থেকেই একা একা থাকতে হয় আমায়। তখন ভয় লাগলে আমার একমাত্র সঙ্গী হয় কিআ—আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! অবসরে আমরা বন্ধুরা গোল হয়ে বসে প্রতি মাসে কিআর ‘নিজেকে জানো’টা পরীক্ষা করি। কত্ত কিছু জানতে পারি কিআ পড়ে প্রতি মাসে! আমার পুরো চরিত্রটাকে পাল্টে দিয়েছ তুমি, কিআ। আমার মাইলস্টোন তুমি!
অনেক ভালোবাসি তোমাকে, কিআ। সব সময় পাশে থেকো। আরও ৮০০টা জন্মদিন হোক তোমার। আমি কিন্তু বুড়ো হয়ে গেলেও তোমায় পড়ব! ভালো থেকো।
আর হ্যাঁ, হকার আঙ্কেলকেও অনেক ধন্যবাদ। ভাগ্যিস তিনি ভুলটা করেছিলেন! শুভ জন্মদিন, কিআ।
অনেক ভালোবাসি!
তাছমিয়া জাহান
নবম শ্রেণি, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঝালকাঠি
কিআ: বাপ রে! এত সুন্দর করে লিখেছ, এখন নিজেকেই হিংসা হচ্ছে। আহা, কী ভালো আমি! কিন্তু তার চেয়েও ভালো লেখো তুমি। অনেক ধন্যবাদ, তাছমিয়া। নিয়মিত লিখবে—এই প্রত্যাশা রইল।