প্রতিদিন সকালে উঠেই কাক–চড়ুইদের কিচিরমিচির শুনতে পাই। বেশ কদিন ধরেই শেষের ঘরটাতে পড়তে বসছিলাম। বড় যে জানালাটা আছে, তার পাশে খাটের ওপর পড়তে বসে একটা জিনিস খুব নজরে পড়ল, পাখিদের আবদার। তবে এটা খুব বেশি নতুন নয়। বাবা প্রায় প্রতিদিনই জানালার জায়গাটাতে খাবার দেয়। পাখিরা জানে, ওরা আমাদের নিত্য অতিথি।
আজকে যখন পড়তে বসলাম, জানালা বন্ধ করেই বসেছিলাম। নভেম্বর মাস, একটু একটু শীতের বাতাস আসছে। জানালা খোলার জন্য একপ্রকার আন্দোলন শুরু করল পাখিরা। অবশেষে জানালা খুলে ওদের চাল দিয়ে আবার মনোযোগ দিলাম পড়ায়। প্রতিদিনের এই অতিথিদের সঙ্গে খুব জানাশোনা হয়ে গেছে। আমাকে বসে থাকতে দেখেও নির্ভয়ে চাল খেতে আসে ওরা। আর আমি মূর্তি সেজে থাকার চেষ্টা করি, যেন ওরা আমাকে দেখে ভয় না পায়। কখনো পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে। আবার কখনো বইয়ের দিকে। ওদের কেউ কেউ আবার আমাকে মোটেই বিশ্বাস করে না। আমাকে দেখামাত্রই পালিয়ে যায়। এদের কেউ সুশৃংখল, কেউ ভীতু, কেউ সাহসী, কেউ দুষ্টু প্রকৃতির। তবে সবার মিল একটাই—এরা চুড়ুই জাতি।
পড়া থেকে ওঠার অনেকক্ষণ পর আবার ওই ঘরটাতে গেলাম, দেখি মা–বাবা ও তাদের বাচ্চা মিলে একটা পরিবার এসেছে। বাবা আপন মনে খাচ্ছে আর মা নিজের বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে। বাচ্চাদের মধ্যে যে বড়, সে নিতান্তই স্বনির্ভর। কিন্তু ছোট বাচ্চাটা মায়ের মুখ থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছিল। আবার কিছুক্ষণ পর একটা জুটি এল, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করে দিল তারা। শেষে আমি তাদের ঝগড়া থামিয়ে দিলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারলাম, আমাদের জানালায় আসা এই অতিথি চড়ুইয়ের দল বেশ সামাজিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা একে অপরের প্রতি যত্নশীল, তাদের মধ্যে ঝগড়া, ভালোবাসা—সবই আছে। পরিবার আছে তাদেরও। তারা বন্ধুসুলভও বটে!
সামিয়া জাহান
দশম শ্রেণি, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম