কিশোর আলোর এবারের জন্মদিনের সূচনা হয় একটু ভিন্নভাবে। ‘কিআর ৯, করব বিশ্বজয়!’—এ স্লোগান নিয়ে কিআ দল পাড়ি জমায় ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে। উদ্দেশ্য—সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সঙ্গে কিআর নবম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন। কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক আর সাফ চ্যাম্পয়িন দলের সানজিদা, মারিয়া, দুই শামসুন, মারজিয়া, তহুরা, সাজেদা, শিউলিরা ওই স্কুলের নতুন ফুটবলার মেয়েদের সঙ্গে মিলে কেক কাটেন।
ধোবাউড়া উপজেলার ওই এলাকা বেশ অবহেলিত। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেয়েরা আসে। তাদের অনেকেই এসেছে প্রতিকূল পরিবেশ থেকে। চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের একজন বলেছিলেন, তিনি আট-দশ বছর আগে খেলতে আসতেন, কারণ খেলার পর তাঁদের ডিম কলা খেতে দিতেন মফিজ স্যার। এখনও মেয়েরা অনেক কষ্ট করেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাই, কলসিন্দুরের এখনকার খেলোয়াড় কিশোরীদের জন্য কিশোর আলো শুরু করেছে বিশেষ বৃত্তির কার্যক্রম।
২৯ অক্টোবর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কলসিন্দুর গ্রামের একজন ক্রীড়াশিক্ষক, ৩৩ জন অদম্য ফুটবলারসহ মোট ৩৪ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমেই শুরু হয় কিআর বৃত্তি কার্যক্রমের। বৃত্তি গ্রহণের পর অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে ফুটবলার রূপা আক্তার জানায়, ‘হঠাৎ টাকা পেয়ে অবাক লাগল। বুঝতে পারছিলাম না কেউ ভুলে পাঠাল কি না। পরে দেখলাম, কিশোর আলো থেকে দেওয়া বৃত্তি। তখন খুবই ভালো লাগল।’ মাহমুদা খাতুন তার মতোই আরেকজন। সে জানায়, ‘টুকটাক জিনিসপত্র কিনতে আর বাড়ি থেকে টাকা নিতে হবে না। বৃত্তির এই টাকা দিয়ে খেলাধুলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনব।’
বৃত্তি প্রদান সম্পর্কে কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘টাকার অঙ্কের দিক থেকে এই বৃত্তি খুব বেশি কিছু নয়। কিন্তু ওদের প্রতিদিনকার জীবনে এটি সামান্য ভূমিকা রাখতে পারলেও আমরা আনন্দ অনুভব করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যার সামর্থ্য যতটুকু, সে ততটুকু দিয়েই সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবীদের সহযোগিতা করলে এই মেধাবীরা আরও এগিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে আমাদের দেশটাই এগিয়ে যাবে।’
বৃত্তিপ্রাপ্তরা হলেন কলসিন্দুর গ্রামের ফুটবলার নাজমা খাতুন, আকলিমা খাতুন, রূপা আক্তার, বালশ্রী মানকিন (ময়না), সেলিনা খাতুন, পূর্ণিমা বাস্পর, শীতা বাস্পর, মাহমুদা খাতুন, সাজেদা খাতুন, আমেনা খাতুন, কল্পনা আক্তার, সালমা খাতুন, জানিরা মান্দা, মেঘবতী দাংগ, জমিলা খাতুন, রনি আক্তার, মুন্নী দালবৎ, রোজিনা আক্তার, মিমি দফো, তসলিমা আক্তার, শারমিন আক্তার, রোবিনা আক্তার, সাথী আক্তার, প্রিয়া রংদী, ঝিমি দফো, মিতালী মান্দা, সাদিয়া আক্তার, প্রাপ্তি হিসিম, পিংকী দাস, শশীকলা দাংগ, চৈতি রাজভর, জীম আক্তার, হাসিনা খাতুন, আফরোজা খাতুন এবং তাঁদের শিক্ষক ক্রীড়াশিক্ষক জনাব জুয়েল। আগামী এক বছর এই বৃত্তি কার্যক্রম চলবে। এরপর যারা খেলা অব্যাহত রাখবে, তাদের রেখে নতুন তালিকা করা হবে।
কিশোর আলোর এই তহবিলে অনুদান দিয়েছেন শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক পিপলু আর খান (অ্যাপলবক্স) এবং ফিলাটেলিক সোসাইটি বাংলাদেশ। আমাদের স্বপ্ন, মারিয়া-সানজিদাদের দেখানো পথে এগিয়ে যাবে এই নতুন ফুটবলররা।