এক যে গভীর বনে।
পশুপাখি সবাই মিলে
থাকেন আপন মনে।
আলোছায়ায় গভীর মায়ায় মুক্ত পরিবেশ
বনবাদাড়ের গল্প শোনাই, গল্পের নেই শেষ।
বনের ভেতর ছোট বড় নাম না জানা গাছ
নদীর জলে ভেসে বেড়ায় কুমির এবং মাছ।
ঘুরে বেড়ায় হরিণ চিতা ডোরাকাটা বাঘ
খাবার যদি না খায় তবে সবার ভীষণ রাগ।
এক যে ছিল হরিণ
শিংয়ের ওপর নাচত বসে
রং-বেরঙের ফড়িং।
হরিণ ছিল মিষ্টি
সরল সোজা দিষ্টি।
বনে বনে ঘুরে বেড়ায়
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়।
খায় সে কচি লতাপাতা শিং নাচিয়ে ঘোরে
ওরে আমার মিষ্টি হরিণ কোথায় রাখি তোরে?
একদিন এক দুপুরবেলা
পাতায় পাতায় রোদের খেলা।
ঘুরতে ঘুরতে হরিণছানার পিপাসা পায় খুব,
হরিণ ভাবে নদীর জলে এবার দেব ডুব।
এই নদীতে কুমির অনেক
হরিণছানা দাঁড়ায় ক্ষণেক—
জল পিপাসায় নামলে নিচে কুমির যদি ধরে
মন কেমন করে আহা মন কেমন করে!
কান নাচিয়ে শিং নাচিয়ে হরিণ হঠাৎ ভাবে
বুদ্ধি চাই। কুমির তার নাগালটি না পাবে!
হরিণ তখন চেঁচিয়ে কয়, কুমির আছ যত
এই নদীতে নামব আমি আমায় করো ক্ষত।
ড্যাড্যাং ড্যাডাং ড্যাং
এই তো আমার হঠ্যাং।
এই না বলে হরিণ একটা শুকনো গাছের ডাল
নদীর জলে নামিয়ে দিল কাণ্ড বেসামাল।
কুমির এসে ছিনিয়ে নিল গাছের শুকনো ডাল
হরিণছানার পা এটা ঠিক পায় না তারা তাল।
কোনটা যে ডাল কোনটা যে ট্যাং হরিণ তখন হাসে
কুমিররা যায় গভীর জলে ডালটা রাখে পাশে।
হরিণ তখন চুমুক চুমুক জল খেল প্রাণভরে
তার পরে সে বনের ভেতর আপন মনে ঘোরে।
কদিন বাদে—হরিণ দ্যাখে বনের মধ্যে অভাব
পায় না ফল, পায় না পাতা বদলে গেল স্বভাব।
নামল বনে খরা
হরিণছানা ভাবল বুঝি
খেলাম এবার ধরা।
কোথায় পাবে খাবার
গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে
কম্মো বুঝি কাবার।
পেট শুকিয়ে জিব শুকিয়ে হরিণ মরো মরো
এক যে টিয়া বলল তখন নতুন কিছু করো।
নদীর পাড়ে সবুজ বনে রয়েছে ফুল-ফল
নদী পেরিয়ে যাও যদি ভাই হাসবে ঝলোমলো।
খাবার পাবে অনেক তুমি থাকবে অনেক সুখে
পাখির কথা শুনে হরিণ সাহস পেল বুকে।
কিন্তু নদী কেমনে পেরোয় হাজার কুমির বাস,
নদীর জলে নামলে আমার ঘটবে সর্বনাশ!
নামলে পরে ভাই
কুমিরগুলো খাবে আমায়
বাঁচার উপায় নাই।
কেমন করে পার হব এই
নদী—
যদি—
কুমিরগুলো ধাওয়া করে
বাঁচার উপায় কী?
ভাবতে বসেছি!
বনে বনে আপন মনে হরিণ শুধু ভাবে
কেমন করে পেরিয়ে নদী ওই পারে সে যাবে?
ওই পাড়েতে গাছে গাছে ফল পাকুড়ের মেলা
পেটটি ভরে খাব আমি জমবে তখন খেলা।
একটা শুধু উপায়
হরিণ নাচে দুপায়।
ভোর সকালে হঠাৎ করে বুদ্ধি আসে মাথায়
হরিণ তখন ঘুমিয়ে ছিল একটা ছেঁড়া কাঁথায়।
যেই না ভাবা অমনি হরিণ ছুটল নদীর ধারে
মগজ ঠাসা বুদ্ধি খাসা কান দুটো সে নাড়ে।
নদীর ধারে দাঁড়িয়ে হরিণ চেঁচায় তখন জোরে
ওরে কুমির ওরে
শোন জলদি করে।
রাজার হুকুম পেয়ে আমি ছুটেই এলাম ভোরে
কুমিরগুলো পানির তলায় উঠল নড়েচড়ে।
রাজার হুকুম রাজার হুকুম ভয় পেয়ে যায় তারা
ভোর সকালে উঠল জেগে নীরব কুমির পাড়া।
কী করে কী করে তারা ভয়েই দিশেহারা।
রাজার হুকুম কেমনতরো
জলদি রাজার হুকুম পড়ো।
হুকুম আগে শুনি
হরিণছানা হরিণছানা
তুমি অনেক গুণী।
রাজার হুকুম—সহজ হুকুম রাজা জানতে চান
এই নদীতে কয়টা কুমির হচ্ছে পেরেশান।
এই নদীতে কয় কুমিরের হচ্ছে থাকা-খাওয়া
রাজার শুধু আমার কাছে এটুক হিসাব চাওয়া।
কুমিররা হাঁক ছাড়ে—
সহজ হিসাব, আরে—
সংখ্যা জেনে রাজা যদি
করেন উপকার
চাই না কিছু আর!
সেই জন্যেই জানতে রাজা চায়
কুমিরগুলো নদীর জলে
কেমন অসহায়।
কেমন করে গুনবে বলো কুমির কতগুলো
একটা যেন কম না হয় দেয় না চোখে ধুলো।
এপার থেকে এপার নদী জলের ওপর আসো
লাইন ধরে দাঁড়াও সবাই মনটা খুলে হাসো।
এপার থেকে ওপার লাইন গুনতে গুনতে যাব
কুমিরগুলো পুল বানাল কী মজাটাই পাব!
এক দুই তিন গুনতে গুনতে হরিণ তখন হাঁটে
কুমিরগুলো চুপ করে রয় কেউ না সাঁতার কাটে।
কেউ করে না নড়াচড়া হয় যদি ভাই ভুল
রাজার হুকুম না মানলে হবে হুলুস্থুল।
একেক জনের পিঠের ওপর হরিণ যে দেয় লাফ
কুমিরগুলো বলতে থাকে ওরে বাপ রে বাপ!
হরিণ তখন গুনতে থাকে এক দুই তিন
কুমিরগুলো চুপটি করে তাক ধিনা ধিন ধিন।
হরিণ তখন এপার থেকে ওই পারে যায় সুখে
খুশির নূপুর বাজতে থাকে হরিণছানার বুকে।
বোকার হদ্দ কুমিরগুলো বুঝতে কি আর পারে?
চালাক হরিণ আপন মনে পৌঁছাল ওই পাড়ে।
কুমিরগুলো বুঝতে পেরে করল হাহাকার
চালাক হরিণ ততক্ষণে হলেন পগার পার।
হরিণ আবার আপন মনে ঘুরে বেড়ায় বনে
খুশির ঝিলিক খেলে বেড়ায় হরিণছানার মনে।
গাছে গাছে ফল ধরেছে ফুল ফুটেছে লাল,
পুকুর ভরা জল রয়েছে দিচ্ছে হরিণ ফাল।
ল্যাজ দুলিয়ে ঠ্যাং উঁচিয়ে দারুণ খুশি হরিণ
শিংয়ের ওপর নাচতে থাকে রং-বেরঙের ফড়িং।
সেই সে বনে সুয্যি ওঠে খুশির পরশ হিয়ায়
ছড়ায় ছড়ায় গল্প লিখে পাঠিয়ে দিলাম কিআ’য়।
শেষ হবে যেই পড়া
কেই বা তখন বুঝবে এটা
গল্প নাকি ছড়া?