বালিকাবধূয়া

অলংকরণ: সারা তৌফিকা

ধরো আমি যদি কোনো দিন মাগো বালিকাবধূয়া সাজি,
যদি চলে যাই পরের বাড়িতে, তুমি কি মা হবে রাজি?
আমি চলে গেলে কী করে আমায় দোলনায় দেবে দোলা?
উড়বে না আর বাতাসে আমার ওড়নাটা ফুলতোলা।
বাড়ির উঠোনে সকালের রোদ খেলে যদি ঝিলিমিলি,
আমার চুলে মা দোরে বসে তুমি কী করে কাটবে বিলি?
আমি চলে গেলে করবে কি খাঁ খাঁ, সারা বাড়ি, সারা ঘর?
আমাকে না পেয়ে মা তুমি নীরবে কাঁদবে কি দিনভর?

আমি যদি সাজি বালিকাবধূয়া, ঘোমটায় মুখ ঢাকি,
কী করে তাহলে ইস্কুলে যাব? কত পড়া আছে বাকি।
গল্প, কবিতা কী যে ভালো লাগে, কী করে তোমাকে বলি,
দেখিনি তো পড়ে রবিঠাকুরের বলাকা, গীতাঞ্জলি।
পড়া হয়নিকো কবি নজরুল, বই তাঁর নামীদামি,
বঙ্কিম আর শরতের লেখা কখনো পড়িনি আমি।
এখনো আমার হয়নি তো পড়া কত না হাজারো বই,
ইচ্ছে করে মা বই পড়ে যেন বেগম রোকেয়া হই।

চন্দ্রাবতীর কবিতা পড়িনি, চিনি নাকো তাঁর গ্রাম,
শুধু জানি তিনি মহীয়সী কবি, শুনেছি কেবল নাম।
মনের ভেতরে মহান কবির আঁকা আছে জলছবি,
কত সাধ জাগে একদিন মাগো হতে চাই আমি কবি।
পড়াশুনো করে বড় হই যদি, কী এমন বলো ক্ষতি?
বড় হয়ে ঠিক হতে চাই মাগো আমিও চন্দ্রাবতী।
শুধু মিছেমিছি আমি যদি সাজি বালিকাবধূয়া তবে,
তোমার মেয়ের ইচ্ছে তাহলে কী করে পূরণ হবে?

ইলা মিত্রের নাম তো শুনেছি, কখনো দেখিনি তাঁকে,
দূর থেকে তাঁর মায়াভরা মুখ হাতছানি দিয়ে ডাকে।
কৃষকের তিনি বন্ধু-স্বজন তেভাগা আন্দোলনে,
তাঁর মতো মাগো মিছিলে দাঁড়াতে ইচ্ছেটা জাগে মনে।
বড় সাধ জাগে হতে চাই আমি প্রীতিলতা সাহসিনী,
এই বাংলার শত্রু তাড়াতে প্রাণ দিয়েছেন যিনি।
তোমরা সবাই বলবে আমাকে, এ কেমন বাড়াবাড়ি,
যত খুশি বলো, হতে চাই আমি সাহসী যোদ্ধা নারী।

বালিকাবধূয়া যদি হয়ে যায় তোমাদের প্রিয় খুকি,
বুকজুড়ে তার কী করে তাহলে স্বপ্নেরা দেবে উঁকি?
মামণি আমার স্বপ্নগুলোকে বন্দী করো না তুমি,
স্বপ্নবিহীন জীবন যেন মা শূন্য বিরানভূমি।
বিরানভূমিতে চাই মা ফোটাতে সাদা সাদা কাশফুল,
যেতে চাই দূরে মাড়িয়ে দুপায়ে গোলকধাঁধার ভুল।
বালিকাবধূয়া করো না আমায়, এই আমি বেশ আছি,
তোমাদের খুকি পৌঁছোবে দেখো স্বপ্নের কাছাকাছি।