সাতটি তারার ঝিকিমিকি
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাতটি তারা এসে
এক আকাশে জ্বলল সবাই, মিলল কোথায় শেষে?
সাতটি তারাই জীবন দিল দেশকে ভালোবেসে।
সাতটি তারার চিন-পরিচয় দেশের সবার জানা
একাত্তরে পাকবাহিনী যখন দিল হানা
ওরা লড়ে উৎসর্গ করল জীবনখানা।
সাতটি তারার ঝিকিমিকি, উজ্জ্বলতায় ভরা
প্রত্যেকটি তারার জীবন হৃদয় আকুল করা।
ওদের নিয়ে ভালোবাসায় লিখতে বসি ছড়া…
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ
বুড়িঘাটের চেঙ্গিখালের দুই পাড়ে দুই ঘাঁটি
মুক্তিসেনার পাহারাতে মুক্ত আছে মাটি।
শত্রু যাবে জলপথে তা অত্ত সোজা নাকি!
বীর রউফের বীরত্বতে নিশ্চিন্ত থাকি।
শত্রু এল লঞ্চ-স্পিডবোট-মর্টার-রাইফেলে
প্রতিরোধে রউফ আছে, বাংলা মায়ের ছেলে।
দামাল ছেলে মুক্তিসেনা ভয় করে না কিছু
সাত স্পিডবোট ডুবল সবই, লঞ্চ হটল পিছু।
সঙ্গীসাথি দেড় শ জনের প্রাণ বাঁচানো লাগে
আব্দুর রউফ লড়ল একা, শহীদ হওয়ার আগে।
বীর রউফের আত্মদানে স্বাধীন দেশের মাটি
আমরা বীরের জাতি বলে বুক ফুলিয়ে হাঁটি।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান
স্বাধীন হওয়া ছাড়া দেশের পথ নেই আর খোলা
আটকাবে কে? পাকিস্তানি মেশিনগানের গোলা!
হামিদুরের সামনে কি আর ওসব বাধা টেকে?
গ্রেনেড হাতে যায় এগিয়ে দ্রুত এঁকেবেঁকে।
বুকে হেঁটে পৌঁছিয়ে যায় পথটা দিয়ে পাড়ি
গ্রেনেড ছুড়ে উড়িয়ে দেয় শত্রুসেনার ফাঁড়ি।
হামিদুরের জীবনদানে বিজয়ীদের ছোটা
তাই এ বীরের স্থান হয়েছে হৃদয় মণিকোঠা।
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
বুদ্ধি এবং বীরত্বতে শত্রুসেনার ঘাঁটি
ধ্বংস করে মুক্ত করা বাংলাদেশের মাটি।
বাংলাদেশের মুক্ত হয়ে, স্বাধীন হয়ে আসা
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বীরত্বতে ঠাসা।
শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করে যুদ্ধটাকে জিতে
জীবন দিয়ে থেমেছে বীর বিজয় সুনিশ্চিতে।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এই একটি প্রিয় নামে
মহানন্দা নদীর চলা শ্রদ্ধাতে প্রায় থামে!
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
‘পদ্মা’ ‘পলাশ’ বিশ্বস্ত এই দুটি গানবোটে
বাংলাদেশের বিজয় নিশান সমুখপানে ছোটে
অস্ত্র হাতে এই দুটিকে রক্ষা করার কাজে
রুহুল আমিন রুখে দাঁড়ায়, ভয় নেই তার মাঝে।
নিজের জীবন থেকেও প্রিয় দেশকে ভালোবেসে
ধ্বংস পলাশ, শহীদ রুহুল এক হয়ে যায় শেষে।
জানিয়ে যায় রুহুল আমিন, যায় না স্বপন খোয়া
রূপসা নদীর পাড়ে আছে এই সেনানী শোয়া।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান
বাংলার আকাশ মুক্ত হবে, বাংলা মায়ের ডাকে
সত্যিকারের সন্তান কি চুপটি বসে থাকে!
রক্ত ছাড়া স্বাধীনতা যায় না কভু কেনা
জানত এটা বীর মতিউর, দক্ষ বিমানসেনা।
আকাশটাকে স্বাধীন করে, নিজের করে নিতে
বীর মতিউর তৈরি হলো নিজের জীবন দিতে।
পাক বাহিনীর জঙ্গি বিমান দখল নিয়ে তাতে
চেয়েছিল বাংলাদেশে খুব দ্রুত পৌঁছাতে।
বাদ সাধল অন্য বিমান, আক্রমণের জেরে
বিধ্বস্ত বিমান নিল বীরের জীবন কেড়ে।
জীবন দিল বীর মতিউর, সেই জীবনের টানে
মুক্তিসেনা বের করেছে স্বাধীনতার মানে।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
জীবনটাকে তুচ্ছ করে বিজয় আনার পথে
যে যায় তাকে কে ছাড়াবে শৌর্য-বীরত্বতে?
সোনার ছেলে কামাল হলো সেই বীরদের দলে
স্বাধীন দেশের স্বপ্ন যাদের রোজ তাড়িয়ে চলে।
শত্রু মেরে, এলএমজির শেষ করে সব গুলি
বীর কামালের শরীর ছুঁলো বাংলা মায়ের ধূলি।
তাজা খুনে ভিজল মাটি, স্বপ্ন হলো বোনা
দেশ বলল, জিতব এবার, হারব না, হারব না।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ
নিজের জীবন তুচ্ছ ভাবা নূর মোহাম্মদ শেখ-এ
সঙ্গীসাথির জীবন বাঁচায় নিজের জীবন রেখে।
যুদ্ধ চলে যশোর জেলায়, গোয়ালহাটি গ্রামে
শত্রু যদি না হটে তো নূর কখনো থামে?
নূরের সহযোদ্ধা যারা নিরাপদে সরে
না গেলে নূর গোলাগুলি থামায় কেমন করে!
নূরের বাহাদুরি এবং আত্মত্যাগের নূরে
বাংলাদেশের বীর সেনানী আবার দাঁড়ায় ঘুরে।
বীরশ্রেষ্ঠ এই সাত জন উজ্জ্বল সাত তারা
বাংলাদেশের জন্মকথা হয় না তাঁদের ছাড়া
বীরশ্রেষ্ঠ যাঁদের প্রাণে পেলাম স্বাধীনতা
ছড়ায় ছড়ায় বলে গেলাম সেসব বীরের কথা…