ভূতের পায়ে অস্ত্রোপচার
মতিঝিলের মুন্না মিয়ার ভায়রা আবু হেনা
নানান রকম ব্যবসা করেও ব্যর্থ; বহু দেনা
মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি এল, জ্বলে সুখের বাতি—
ক্লিনিক খুলে ধনী হয়ে উঠল রাতারাতি
অল্প দিনে বিপুল আয়ে ধারদেনা যায় মিটে
সোনাদানা, গাড়ি-গরব; ইলিকঝিলিক ভিটে!
ভাঙা পরিত্যক্ত প্রাচীন দালান ভাড়া নিয়ে
ক্লিনিক চালু করেছে সে মোগলটুলী গিয়ে
নিজেই তাতে করল শুরু অস্ত্রোপচার করা
যন্ত্রপাতি-সরঞ্জামে ঘরগুলো প্রায় ভরা
যন্ত্র মানে দেশি অনেক ছুরি-করাত-কাঁচি
ছেনি বাটাল হাতুড়ি আর কুড়াল দড়ি কাছি
অপারেশন থিয়েটারে শীতাতপের ছোঁয়া
নিঝুম নিটোল, গা ছমছম, নেই ধুলো বা ধোঁয়া
আবু হেনার ক্লিনিক খোলা রাত বারোটার পরে
এই শহরের সবাই যখন ফেরে যে যার ঘরে
মজার ব্যাপার এই ক্লিনিকে যায় না মানুষ কোনো
যায় শুধু ভূত! অবাক হলে? বলছি পুরো, শোনো—
মানুষ এবং ভূতের তফাত, নয় তা বেশি মোটে
মানুষ খেটে কামাই করে, ভূত সেগুলো লোটে
মানুষ চলে সমুখ দিকে বাঁ অথবা ডানে
ভূত কেবলই যায় পেছনে, কে না সেটা জানে!
এটাই ভূতের দুঃখ, পা তার পেছন দিকে বাঁকা
মনে হলেই ওদের পরান জ্বলতে থাকে খাঁ খাঁ
বাঁকা পায়ের জন্য শুধু ভূত পড়ে যায় ধরা
আর তা নিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি ব্যঙ্গ গান ও ছড়া!
ভূতের পায়ে অস্ত্রোপচার করার ধারণাটি
এখান থেকেই আবু হেনার মাথায় গাড়ে ঘাঁটি
শান্ত মনে একাকী সে দ্যাখে হিসাব কষে
ব্যবসা যদি লাগে, খাবে চৌদ্দ পুরুষ বসে!
ক্লিনিক খোলার জন্য নিল বাতিল দালান ভাড়া
খবর শুনে ভূতের পাড়ায় সে কী মহা সাড়া!
লম্বু মোটা হোঁতকা ঢাউস—নানান ভূতের আকার
তাদের তো নেই অভাব কোনো খামচে নেয়া টাকার
লাগুক টাকা, জন্ম-বাঁকা পা যদি হয় ভালো
লোকের মুখে শুনবে না আর নিন্দা, পচা গালও
আবু হেনার প্রকল্পটি ঘেঁটে চুপে চুপে
সকল ভূতই পা সারাবার সুযোগ নিন লুফে
উল্টো-পায়ের অভিজ্ঞতা সবারই তো তিতে
দলে দলে ভূত আসে রোজ শল্য-সেবা নিতে।
আবু হেনা পাস করা নয়, স্বশিক্ষিত ওঝা
ছেনি বাটাল ঠুকে ভূতের পা করে দেয় সোজা
তা দেখে ভূত উল্লসিত, সুখে দুচোখ বোজে
অঢেল টাকা আবু হেনার পকেটে দেয় গুঁজে
আর এভাবেই আবু হেনা জিরো থেকে হিরো
জাঁক দেখে তার মুখ লুকোবে বাদশাহ জাহাঙ্গীরও!
দিন প্রতিদিন বাড়ছে ক্যাচাল এই শহরের ভিড়ে
সাপ ঢুকিয়ে দিচ্ছে কারা শান্ত পাখির নীড়ে!
কোনটা মানুষ, কোনটা যে ভূত যাচ্ছে না আর চেনা
তাই বলে ভূত পার পাবে কি? মাফ করবেন; জে না!