পল্টু মিয়া ঢাকায় এসেছিল
ঢাকায় এসে পল্টু মিয়া কেঁদে দুচোখ বুজে
বলল, আমার দেহের ছায়া পাচ্ছি না তো খুঁজে!
পরশু দিনও ছিল ওটা ঢাকায় আসার আগে
নেই তা কোথাও বাড্ডা, মেরুল, মুগদা, আরামবাগে
কেউ করেছে চুরি সেটা, কিন্তু কে বেহায়া?
এই শহরে কোথায় এখন পাব দেহের ছায়া!
এমন খবর চতুর্দিকে ছড়ায় মুখে মুখে
উঠল নাকি পত্রিকাতে, এমনকি ফেসবুকে
ছায়া চুরি! ব্যাপারখানা নয় তো মোটে সোজা
বাটি চালান দিল এসে আসামফেরা ওঝা
বরফদেশের ছায়া মন্ত্রী লুবা ক্রুপোস্কায়া
হিন্দি ছবি সিআইডির সেই প্রাদুমন ও দায়া
খবর শুনে ছুটে এল অ্যারোপ্লেনে চড়ে
প্রমাণ ছাড়া তদন্তকাজ আছাড় খেল জোরে!
কেবা নিল, কোথায় গেল পল্টু মিয়ার ছায়া!
মুষড়ে পড়ে এই শহরের সব চেয়ারের পায়া
লোকটা বুঝি জ্ঞানই হারায় আপন ছায়ার শোকে
কাছেই দামি হাসপাতালে নেয়া হলো ওকে।
ব্যাপারটাকে ঘাঁটি আমি নাওয়া-খাওয়া ভুলে
খুঁজে পেলাম যেটুক এখন বলি সেটাই খুলে
শৈত্যপ্রবাহের কুয়াশায় সূর্য ঢাকা পড়ে
তাই দেখেনি পল্টু নিজের ছায়া মাটির ’পরে।
মানুষকে তা বোঝাতে যাই, কে কার কথা শোনে
‘গবেট’ বলে কতেক জ্ঞানী ধমক দিল ফোনে!
চুপসে গেলাম! তবু দ্রুত ট্যাক্সি ডেকে উঠি
সিরাজগঞ্জের মুন ও আমি হাসপাতালে ছুটি
মুন আমার এক খালাতো ভাই, বক্তৃতা দেয় মাঠে
সাতঘাটে জল খেয়ে বটে বুক চিতিয়ে হাঁটে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখি মানুষ চতুর্দিকে
পল্টু মিয়ার জন্য তাদের মুখের বরণ ফিকে
ভিড়ের ভেতর নানান কথা, সেখান থেকে জানি
পল্টু মিয়ার জীবন নিয়েই নাকি টানাটানি!
ওর জন্য আমার মনে জাগল ভীষণ মায়া
কী হয়, বলা যায় না, জানায় চিকিত্সক ও আয়া!
মুন আমাকে কানের কাছে বলল এসে, ভায়া
এমন দশা আমার, লাগে
হইছিল পাঁচ বছর আগে
গুলিস্তানে বাসের মধ্যি ডাবের পানি খায়া!