বন
বনের ভেতর ওলট–পালট, কী যে ভীষণ অন্ধকার
অহরহ হচ্ছে শিকার বিশাল বপুগণ ধোঁকার
আগের মতো পান না তাঁরা ননি, মাখন, ক্ষীর, ঘি-টি
ভাগ বসাতে জোট বেঁধেছে পিঁপড়ে, বিছে, গিরগিটি।
মিলেমিশে থাকার নীতি, এসব বটে মান্ধাতার
কে যে কাকে ল্যাং মারবে, সেটাই আসল ধান্ধা তার
সুযোগ পেলেই শিয়াল বেটার কলজে চিবোয় বনমোরগ
এটা নাকি এই প্রাণীদের নতুনধারা জন্মরোগ।
কার সীমানা, উঠান, বাড়ি, ঘর বা মেঝে, কার বা দোর
সাপসমূহের সঙ্গে ঢুকে নাচছে ভালুক আর বাঁদর
কার ফাঁদে যে পড়ছে কেবা, রাখছে পা কে কার ঘাড়ে
সিংহ নিজের মাংস ছিঁড়ে দেয় শিয়ালের বার্গারে।
মাকনা হাতির ধমক খেয়ে মস্ত হাতি কাঁপছে রে
বিছের তাড়ায় ভালুকসকল দৌড়ে বাঁচে হাঁপ ছেড়ে
ধেড়ে ইঁদুর আর শজারু সাপের লেজে কান খোঁচায়
স্যুপ খাবে তাই বাগডাশারা শঠ কুমিরের কানকো চায়।
সব পশুকে বুদ্ধিবলে নাকাল করার ফর্দ বের
করি যদি, দেখবে একক কৃতিত্ব সেই গর্দভের
হেসেই মরি কাণ্ড দেখে তুলতুলে সেই খরগোশের
মাংসাশী সব পশুর জন্য ঠিক করে দেয় দর গোশের।
সিংহ ছিল পশুপতি, কোথাও বনের বাঘ রাজা
এখন দেখি ওদের চেয়েও বিড়াল, খটাশ তাগড়া যা!
বেজির মনে জমে থাকা প্রচণ্ড বারুদ-দোষে
সাপকে ছেড়ে হাতির সাথেই করছে এখন যুদ্ধ সে।
ভাবতে পারো, দখল করে বনের পুব ও দক্ষিণে
ন্যাংটো বাঁদর নিচ্ছে হেলায় জ্যান্ত বাঘের চোখ কিনে!
বাঘকে যদি শের বলো আজ হাসবে বটে চামচিকাও
তাই তা বলে মিছেই কেন বনবিড়ালের খামচি খাও?
থাবার জোরই শেষ কথা নয়, টের পেয়েছে সিংহ তা
সব কাজে তো সাজছে দেখি মোষ, হরিণের শিং হোতা
এই তো সেদিন শান্ত হরিণ, হাবাগোবা মোষ তাদের
শিঙের জোরেই খেতাব পেল নাটের গুরু, ওস্তাদের।
বলবে, তবে বিপুল বনে এখন আসল কর্তা কে
যার ভয়ে সব বনের পশুর থত্থরি কাঁপ, জ্বর থাকে?
‘হালুম’ এখন বাতিল আওয়াজ, বাঘের গুহার ঘোগ-রা শের
সেখানটাতেই ভিড়লে শুধু অংশ পাবে গোগ্রাসের।
ঘোগের পিঠেও কিন্তু আবার খবরদারি কচ্ছপের
এমনতরো বন সহসাই হবে কি আর স্বচ্ছ ফের?