সাক্ষাৎকার
সুযোগ পেলে ভারতের সঙ্গে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটা আবার খেলতে চাই — মুশফিকুর রহিম
স্টাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে মজার মজার কথা বলে পুরো দলকে উৎসাহ দেওয়া, সুপারম্যানের মতো উড়ে গিয়ে অসাধারণ সব ক্যাচ নেওয়া, দর্শনীয় সব ছক্কা হাঁকানো কিংবা শুধু ভুবনভোলানো একটা হাসি—বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার ও ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে চেনাতে এটুকুই যথেষ্ট। অনেকের কাছে তিনি ‘মুশি’ নামেও পরিচিত। বিকেএসপিতে পড়েছেন, পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে পড়ালেখা শেষ করেন। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় মুশফিকুর রহিমের। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ও সর্বোচ্চ ইনিংসটি তাঁর। সদা হাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটি ১৪ অক্টোবর মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হন কিশোর আলো সাক্ষাৎকার দলের। বলেন ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, পারিবারিক সহযোগিতাসহ ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকার দলে ছিল মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাহরিয়ার রহমান, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের ফাহিম শাহজাহান, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের মুশফিকা হাসান ও ঢাকা সিটি কলেজের তাসফিয়া তাবাসসুম।
ছোটবেলায় ‘বড় হয়ে’ কী হতে চাইতেন?
ছোটবেলায় ভাবিনি যে এটা হব বা ওটা হব না। খেলাধুলা করার ইচ্ছা ছিল প্রবল। পড়াশোনা খুব একটা ভালো লাগত না। তবে খেলোয়াড় হব, এ রকম ইচ্ছাও ছিল না। ছোটবেলা থেকে পাড়ায় ক্রিকেট খেলি। তখন শুধু ইচ্ছা ছিল যে খেলাধুলা করব, পাশাপাশি পড়াশোনা করব। তারপর কী হবে, সেটা পরের ব্যাপার। ২০০০ সালে ভর্তি হই বিকেএসপিতে। তখন থেকেই একটা স্বপ্ন ছিল যে আমি বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলব। আস্তে আস্তে স্বপ্নটা বড় হতে থাকে। তবে এর আগে আসলে শুধু খেলার জন্যই খেলা শুরু করেছিলাম।
আপনার জন্ম বগুড়ায়। ছোটবেলার দিনগুলো কেমন ছিল?
আমি বগুড়া জিলা স্কুলে পড়তাম ক্লাস থ্রি থেকেই। তার আগে পড়তাম আলোর মেলায়। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গেই আমার খেলাধুলার শুরু। আমাদের গ্রামের মাঠ থেকেই শুরু হয় আমার পথচলা। খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম সব সময়। ক্লাসের সময় ছিল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা। বাসায় এসেই হোমওয়ার্ক করতে হতো। একজন গৃহশিক্ষক আসতেন। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যেত উনি এসে বসে আছেন, কিন্তু আমি নেই। খেলতে গেছি বিকেলে। বিকেলে পড়াশোনা করব, এটা কখনো ভাবিনি। তাই অধিকাংশ সময় দেখা যেত যে স্যার এসে ঘুরে যেতেন এবং আমার বাসায় বলতেন যে, ‘ও তো নাই, খেলতে গেছে।’ তিনিও বলতেন, ‘আজ থাক, কালকে পড়াব।’ এভাবে অনেক সময়ই পড়তে যেতাম না। তবে পড়াশোনা করতে হবে, এ রকম চাপে ছিলাম না কখনো। খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। স্কুলেও ফাঁকি দিতাম মাঝেমধ্যে। আমার নানির বাসা ছিল স্কুল আর আমাদের বাসার মাঝখানে। বাসা থেকে জানত যে স্কুলেই যাচ্ছি। আর আমি গিয়ে নানির বাসায় থাকতাম। স্কুলের সময় শেষ হলে আবার চলে আসতাম।
এভাবে স্কুল পালাতে গেলে বাসায় সমস্যা হতো না?
খুব বেশি না। তখন ফেব্রুয়ারিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলত। ওই সময় অনেক খেলাধুলা হতো। আমিও নাম দিতাম খেলায়। খেলার নাম করে আমি ওই এক মাস যে কোথায় থাকতাম, নিজেও জানতাম না। খেলার জন্য ব্যাগে সব সময়ই একজোড়া জুতা আলাদা থাকত। যেন সময় পেলেই আমি খেলতে পারি। আমাদের খেলার শিক্ষক হজরত আলী স্যারও জানতেন যে আমি খেলাধুলার পেছনেই একটু বেশি সময় কাটাই। স্যারও সুযোগ পেলে আমাকে খেলার দিকেই নিয়ে যেতেন বেশি।
বিকেএসপির দিনগুলো কেমন ছিল?
আসলে বলতে পারো তখন থেকেই গুরুত্ব দিয়ে খেলতে শুরু করি। সপ্তম শ্রেণি থেকে ওখানে ভর্তি হওয়া। আর ভর্তি হওয়াটাও একটা অন্য রকম প্রতিযোগিতা। আমার এখনো মনে আছে, আমি ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাই আমার ছোট চাচার সঙ্গে। ওই দিনই হরতাল ছিল। বিকেএসপির ভর্তি পরীক্ষা হবে কি না, এ নিয়ে একটা সন্দেহ ছিল। পরে সন্ধ্যার সময় জানতে পারি যে পরের দিনই পরীক্ষা হবে। ফলে ওই রাতেই যেতে হবে। আমরা একটু দ্বিধায় ছিলাম। রাত আড়াইটা–তিনটার দিকে গিয়ে পৌঁছাই। রুমে কোনো জায়গা নেই। কারণ, অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলে এসেছে অন্যরা। বারান্দাতেই ছিলাম আমরা। পরদিন ভর্তি পরীক্ষায় খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ, আমরা যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম, তখন ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থী এসেছিল ভর্তি পরীক্ষার জন্য। ওখান থেকেই শুরু আমার যাত্রাটা। আর বিকেএসপির জীবনটা একটু অন্য রকম ছিল। নিয়মানুবর্তিতা বা সময় মেনে কাজ করাটা ওখান থেকেই শুরু হয়। তারপর আমার যে বন্ধুরা ছিল, তারা মিলে সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনুশীলনে যাওয়া বা ওখান থেকে স্কুলে যাওয়া কিংবা নিজে এসে নিজের কাপড় ধোয়া আর রুম পরিষ্কার করা। আবার দুপুরে সবাই লাইন ধরে ডাইনিং হলে যাওয়া, খাওয়া—সবকিছু ক্যাডেট স্কুলের মতো।
বাসা ছেড়ে দূরে থাকতে কষ্ট হতো না?
অনেক কষ্ট হতো। কারণ, আমি যৌথ পরিবার থেকে এসেছিলাম। এ রকম একটা হোস্টেলে একা একা থাকা অনেক কষ্টকর ছিল আমার জন্য। অনেক কান্নাকাটি করতাম। আমার রুমমেট ছিলেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। তিনিও পরে জাতীয় দলে খেলেছেন, তোমরা চেনো। আমি তাঁকে ধরে কাঁদতাম। তিনি আমাকে ধরে কাঁদতেন। তখন মোবাইল নিতে দিত না। তাই আমরা চিঠি লিখতাম। আমার বাসা থেকে চিঠি এলে ওটা ডাইনিং হলে জানানো হতো যে আমার চিঠি এসেছে। চিঠি পড়তে পড়তে দেখা যেত চিঠিই ভিজে গেছে চোখের পানিতে। এ রকম অনেক কষ্টই ছিল সে সময়টায়। তারপরও উপভোগ করতাম। আমাদের যাঁরা বড় ভাই, তখন নাঈম ইসলাম বা নাজমুল ভাই ছিলেন, তাঁরা সবাই অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলতেন। তখন দেখতাম যে এখানে যদি ভালো খেলি, আমারও ভালো কিছু করার সুযোগ আছে। এটা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিত। একটু একটু করে সামনে এগোতে এগোতে শিখেছি অনেক কিছু।
ইতিহাসে কেন পড়েছেন?
অধিকাংশ বিষয়ে দেখা যেত যে অনেক সময়ই সেশন–জট থাকে বা সমস্যা থাকে ওই ডিপার্টমেন্টের মধ্যে। একটু কঠিন হয় কোর্সটা শেষ করা। আর ইতিহাসে কয়েকজন বড় ভাই ছিলেন, যেমন সালাউদ্দিন স্যার, তিনিও ওখানে থেকে পড়তেন। শুভ্র ভাই আছেন, আরও আছেন সানোয়ার ভাই, যাঁরা জাতীয় দলে খেলেছেন। তাঁদের থেকেও শুনেছি যে ইতিহাসের বিভাগটা একটু সহজ। ওখানের স্যার–ম্যাম যাঁরা আছেন, তাঁরা অনেক সাপোর্টিভ। যেহেতু আমি মানবিক বিভাগে পড়েছি, তো আমি সহজে পারব। আমার ইচ্ছা ছিল অর্থনীতি বা অন্য কিছু নিয়ে পড়ার। তবে এগুলো পড়লে অনেক সময় ক্লাস করতে হবে। মিস করলে সমস্যা হয়। এগুলো একটু কঠিন। ইতিহাসটা একটু সহজ যে আমি নোট পেলেও পড়তে পারি এবং একা একা পড়া যায়। আর ওখানে মুখস্থ করার বিষয়। শুধু পড়ে লিখতে হয়। এদিক থেকে একটাই কারণ। আমি অনেক ভাগ্যবান যে স্যাররা বা বন্ধুরা সহযোগী হিসেবে ছিল, যারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আল্লাহর রহমতে কোনো সেশন–জট হয়নি। এবং আমি খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে পেরেছি।
শখ: অনেকগুলো আছে। আমি ডায়েরি লিখি—এটা আমার অনেক বড় একটা শখ। ক্লাস ফাইভ-সিক্স থেকেই ডায়েরি লিখি আমি। চেষ্টা করি নিয়মিত লেখার।
ক্রিকেটে কীভাবে আসা? পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন?
হ্যাঁ, এটা পুরোটাই পরিবারের সহযোগিতা বলে আমি মনে করি। বিকেএসপি নামে যে এমন একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে শুধু খেলাধুলাকেই অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়, এটা আসলে আমি জানতাম না। বাবাই এটার প্রথম খোঁজ নেন। বাবার কাছে অনেক অভিযোগ আসত, আমি পড়াশোনা কম করছি, শিক্ষকদের কথা শুনছি না। স্কুলে মাঝেমধ্যে যাই, আবার যাই না। তাই বাবা একটু চিন্তিতই ছিলেন আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এক আত্মীর মাধ্যমে তিনি যখন এই প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেলেন, বললেন, যেহেতু আমার ছেলে একটু পাগলই, খেলাধুলার পেছনে দৌড়াদৌড়ি করে বেশি, তাহলে দেখি একটু চেষ্টা করে কিছু হয় কি না। কারণ এইখানে তো ওর ভালো কিছু হচ্ছে না। পড়াশোনা করছে না। খেলাধুলাই করুক। বাবাই আসলে আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন। তারপর আমার পুরো পরিবারই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। শুধু বাবা না, আমার মা, বড় ভাইবোনেরা, আমার চাচা-চাচিরা। আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। প্রায় ৩০ জন একসঙ্গে থাকতাম। ওরাই অনেক সাহস জুগিয়েছে আমাকে। আর আমি মনে করি, যে কারোর জন্যই পরিবারের সহযোগিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন ছোটবেলায় আপনি নাকি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হওয়ার চেষ্টা করতেন। কেন?
ইচ্ছা ছিল আরকি। ব্রায়ান লারা আমার অনেক প্রিয় একজন খেলোয়াড়। তাঁকে সব সময়ই সেরা খেলোয়াড় মনে হয় আমার। তাঁর বড় ভক্ত আমি। আফসোস ছিল, কেন আমি বাঁহাতি হলাম না। সবাই তো আর চাইলেই কিছু হতে পারে না সব সময়। কিন্তু তারপর একসময় আমি তাঁর ব্যাটিংও অনুকরণ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু লারা তো তাঁর মতোই স্বতন্ত্র। আসলে কেউ কারও কোনো দক্ষতা হুবহু অনুকরণ করতে পারে না। লারার ব্যাটিং অনেক সময় আমি আয়নাতেও দেখেছি। কারণ দেখলে ওইটার প্রতিফলন ডানহাতির মতো লাগে। তো অনেকভাবেই চেষ্টা করতাম। কিন্তু কখনো হয়ে ওঠেনি।
উইকেটকিপার কেন হলেন?
এটার পেছনে একটা গল্প আছে। ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় খেলতে যেতাম বড় ভাইদের সঙ্গে। কৃষ্ণপুর নামের একটা জায়গা আছে বগুড়ায়। ওখানে খেলতে গিয়েছিলাম। যে ভাইয়া নিয়মিত কিপিং করতেন, তিনি সেদিন করতে পারেননি। তখন খোঁজা হচ্ছিল কিপিং কে করতে পারে। আমি বললাম, দেখি আমি একটু চেষ্টা করে। ওই দিন আবার আমি দুইটা ক্যাচ খুব ভালো নিয়েছিলাম। বলতে পারো গোড়াপত্তনটা ওইখান থেকেই শুরু। অন্তত কিপিংটায় ভালোই মজাই পেয়েছিলাম। এমন একটা কাজ, যেটা কিনা আমি করতে পারছি। কারণ, তখন আমার চেয়ে আমার ব্যাটই অনেক বড় ছিল। এই জন্য টিমে আমাকে নেওয়া হতো অন্তত যেন কিপিং করতে পারি। তখন থেকেই উত্সাহটা ওভাবে আসে। কিপিংয়ের ওপর জোরটা বেশি দেওয়া শুরু করি। কিপার–ব্যাটসম্যান হলে বা একটা অলরাউন্ডার হলে টিমে খেলার সুযোগটা খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। তো এটাই ইচ্ছা ছিল কোনো অলরাউন্ডার হওয়া যায় কি না।
আপনি তো ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গেছেন। একসঙ্গে দুটো কাজ করতে কোনো সমস্যা হয়নি?
সমস্যা তো অনেক হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষায় আমি সময় পেয়েছি খুব কম। বিকেএসপিতে ছিলাম ছয় বছর। তার চার বছরই কেটেছে বাইরে। কারণ, আমি অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে খেলা শুরু করি। তারপর ক্রমান্বয়ে অনূর্ধ্ব–১৭, ১৯ ও হাইপারফরম্যান্স, তারপর একাডেমি থেকে অনেক জায়গাতেই খেলতে হয়েছে আমাকে। পড়াশোনার জন্য খুব কম সময় পেয়েছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন পড়েছি। উচ্চমাধ্যমিকেও একই অবস্থা। তবে আমার বন্ধুদের অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি মানবিক বিভাগে থাকার ফলে তাদের দেওয়া নোটগুলো পড়েই ভালো করতে পারতাম। যখন বাইরে যেতাম, চেষ্টা করতাম ওই বই এবং নোটগুলো নিয়ে যেতে। অবসর পেলেই পড়ার চেষ্টা করতাম। এটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক, তা–ও আবার লর্ডসের মতো একটা ভেন্যুতে। প্রথম কীভাবে জানলেন যে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন?
স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া একটু অকল্পনীয়ই ছিল। কারণ, আমি তখন অনূর্ধ্ব-১৯–এর অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে। ওই বছরই প্রায় দেড়–দুই মাস আগে আমাকে বলা হয়। তখন আবার রিচার্ড ম্যাকিন্স আমাদের কোচ ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ জাতীয় দলের দেড় মাসের মতো একটা ট্যুর আছে। তোমাকে ওখানে যেতে হবে। তুমি দলে চান্স পেয়েছ। হয়তোবা ওখানে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ আছে তিন-চারটা তিন দিনের ম্যাচ আছে প্রথম শ্রেণির দলের সঙ্গে। পাইলট ভাই (খালেদ মাসুদ) আছেন, আর আমি কিপার। অনেক সময়ই দেখা যায় টানা চার-পাঁচটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেললে মূল ম্যাচের সময় ইনজুরড হয়ে যায় খেলোয়াড়েরা। আমাকে নেওয়া হয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর জন্য। আল্লাহর অশেষ রহমতে ওই দুইটা প্রস্তুতি ম্যাচে আমি এতই ভালো খেলি যে পরে আমাকে টেস্ট ম্যাচ খেলানোর জন্য নিয়ে নেয়। আমি কখনো ওই রকম চিন্তা করিনি। প্রস্তুতও ছিলাম না। একই সময়ে আমি অনেক ভাগ্যবান যে এ রকম একটা পরিস্থিতিতে লর্ডসের মতো ভেন্যুতে আমার অভিষেক ম্যাচ হয়েছিল।
তখনকার বাংলাদেশ দল এত শক্তিশালী ছিল না। এখন অনেক শক্তিশালী। দুই সময়েই আপনি খেলেছেন। এই পরিবর্তনটা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
স্বাভাবিক গ্রাফটা অবশ্যই উন্নতির দিকে, কিন্তু আমার মনে হয় উন্নতির শেষ নেই। ২০০৫ সালে আমরা যে জায়গায় ছিলাম, ওখান থেকে অবশ্যই অনেক উন্নতির দিকে বাংলাদেশ দল। তোমরা দেখেছ আমরা ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৬-এ ছিলাম। টেস্টেও তিন-চার বছর ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছি। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। এটা অনেক বড় অর্জন। টি-টোয়েন্টিতে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি। গ্রাফটা অবশ্যই উন্নতির দিকে এবং উন্নতির শেষ নেই। আশা করি, এই গ্রাফটা উন্নতির দিকেই থাকবে। আর আমি যখন শেষ করব, তার আগে আমরা যেন কোনো কিছুতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।
বেড়ানোর প্রিয় জায়গা: সুইজারল্যান্ড।
আপনার ব্যাটিং স্টাইলটা একটু অন্য রকম। বল আসার আগেই ব্যাট কয়েক সেকেন্ড হাই লিফট অবস্থানে রাখেন। এটা কি আপনি শুরু থেকেই করতেন, নাকি কারও আদর্শে অনুপ্রাণিত?
এটাও ব্রায়ান লারাকে দেখেই শুরু। কারণ, তিনি সব সময় হাই ব্যাক-লিফটে খেলতেন। আমিও তখন থেকে স্বভাবজাতভাবে এটাই করতাম। ভাগ্যক্রমে দুইটার সমন্বয়ে এটা হয়েছে।
যখন আপনি মাঠে খেলেন, তখন আপনার বাবা গ্যালারিতে বসে আপনার খেলা দেখেন। সেই সময়কার অনুভূতি সম্পর্কে যদি বলতেন...
আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যে আমাকে নিয়ে বাবা-মা অনেক গর্ব বোধ করেন। আমি তাঁদের সেই গর্ববোধের জায়গায় রাখতে চাই সব সময়। তো এটা একটা বড় অর্জন আমার জন্য। তাঁরা যখন মাঠে আসেন, তখন চেষ্টা থাকে যেন ওই সময়টা ভালো কিছু করি। যেন তাঁরা ওই রকমই খুশি থাকেন। আরেক দিক দিয়ে এটা অনেক আনন্দের বিষয় যে আমার বাবা শুধু আমার জন্য চিন্তা করেন না, আমি আউট হলেও তিনি দল জিতলে অনেক খুশি থাকেন। তাই আমি বলব যে এ রকম মা–বাবা পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।
বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান আপনি। সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল?
ভালো ছিল, আলহামদুলিল্লাহ। আমি কখনো চিন্তাও করিনি যে আমিই প্রথম হব। ইচ্ছা অবশ্যই ছিল। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে যখন কোনো দল ভালো করে, তখন অবশ্যই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলে। এ রকম আরও কয়েকটা ডাবল সেঞ্চুরি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমিই যে প্রথম ব্যক্তি হব, এটা কল্পনাও করিনি। কারণ, আশরাফুল ভাইয়েরই আমার আগে করার কথা ছিল। তিনি নটআউট ছিলেন। আমি বারবার চাইছিলাম যে তিনি আগে করুক। কিন্তু তিনি আউট হয়ে গেলেন। তারপর আমি করলাম। ভাগ্যক্রমে আমিই প্রথম হয়েছি।
আপনার জার্সি নম্বর ১৫ হওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে?
এটা বিসিবি থেকেই দেওয়া হয়েছিল। অভিষেকের সময় বোর্ড থেকেই নম্বরগুলো দেওয়া হয়। তবে আমার প্রিয় নম্বর ছিল ৯। যেহেতু লারাও ৯ পরতেন। আবার আশরাফুল ভাইও পরতেন ৯ নম্বর জার্সি। পরে আমিও একসময় ৯ নিয়েছিলাম। তবে প্রথম অভিষেকের সময় পাওয়া একটা নম্বর তো, ওটা নিয়ে এখন খেলাটার এটাই কারণ।
ড্রেসিংরুমে ‘আমরা করব জয়’ গানটা গাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল ঠিক কীভাবে?
আমরা অনেক দিন ধরেই চাইছিলাম এ রকম হওয়া উচিত। সব দলই মোটামুটি এ রকম একটা সেলিব্রেশন করে। মনে হয় এটা আমরা জেমি সিডন্সের সময় শুরু করেছিলাম। কয়েক দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পর এই গানটা ঠিক করি আমরা। কিন্তু কোন ম্যাচে, সেটা আমার মনে নেই।
যে ম্যাচটি আপনি কখনো ভুলবেন না...
২০০৭–এ ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচটি। আমার প্রথম বিশ্বকাপ। আমি অনেক উত্তেজিত ছিলাম। অপরাজিত অর্ধশতক করে সেবার অনেক ভালো খেলি। উইনিং শটটাও আমার ছিল। ওই ম্যাচটি কখনো ভুলব না।
দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ার আপনার। এই সময় অনেক ম্যাচই খেলেছেন। তো সুযোগ পেলে কোন ম্যাচটি আবার খেলতে চান?
ভালো প্রশ্ন! (হাসি) অবশ্যই ভারতের সঙ্গে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটা, যেখানে ২ রান দরকার ছিল। আমি আউট হয়ে যাই, পরে রিয়াদ ভাইও আউট হয়ে গিয়েছিলেন। এবং আমরা হেরেছিলাম। যদি আরেকবার সুযোগ পেতাম! যদিও আর পাব না। পেলে ওই ম্যাচটা খেলতে চাই। এ রকম পরিস্থিতি পরে আবার আসবে। আশা রাখছি, ইনশা আল্লাহ, এবার এ রকম কিছু হবে না।
প্রিয় বই ও লেখক: আত্মজীবনীমূলক বই পড়তে বেশি পছন্দ করি। ক্রিকেট–সম্পর্কিত কোনো বই হলে সেগুলো আমি পড়ি।
উইকেটকিপার হিসেবে খালেদ মাসুদ পাইলটের যোগ্য উত্তরসূরি আপনি। আপনার উত্তরসূরি কে?
আমার মনে হয় আমার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। শুধু কিপার হিসেবে নয়। এখন যেমন লিটন, মিঠুন, জয় আছে, জাকির আছে। অনেকেই ভালো। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবশ্যই অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা আমাদের যে জায়গাগুলো ফাঁকা হয়ে যাবে, সেখানে এসে ভালো করতে পারবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে থাকাকালে অনেকের নেতৃত্বেই খেলেছেন। আপনি নিজেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। কার নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন?
আমি অনেক ভাগ্যবান, আমার অভিষেক হয়েছে সুমন ভাইয়ের (হাবিবুল বাশার) নেতৃত্বে। আমি মনে করি, আমার ক্রিকেট খেলার পেছনে তাঁর অবদান অনেক। তিনি যেভাবে আমাকে গাইড করেছিলেন, যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন বা সমর্থন করেছেন, তা অনেক বড় পাওয়া ছিল আমার জন্য। অভিষেকেই ওই রকম দলনেতা বা ওই রকম একজন মোটিভেটর পাওয়া না গেলে হয়তো আমার জন্য একটু কঠিন হয়ে যেত। আমি তাঁকে অবশ্যই অনেক ধন্যবাদ জানাই। তারপর, মাশরাফি ভাই তো অবশ্যই আছেন। এ ছাড়া সাকিবও অসাধারণ। আমি মোটামুটি সেই তিন-চারজনকে পেয়েছি, যাঁরা সবাই অসাধারণ দলনেতা।
যদি আলাদিনের চেরাগ হাতে পান, তবে কোন তিনটি ইচ্ছা পূরণ করবেন?
চেরাগ না পেলেও কিছু ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। প্রথমটা হলো একটা মসজিদ করে যাওয়া। দ্বিতীয়টা হলো এতিমদের জন্য একটা জায়গা করে যাওয়া, যেখানে তারা সব সময় থাকতে পারবে। আর তৃতীয়ত, একটা হাসপাতাল করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সেখানে যেন সবাই বিনা মূল্যে চিকিত্সাসেবা পাবে।
ক্রিকেটের বাইরে অন্য কোনো পেশাকে বেছে নিতে হলে কোনটা নেবেন?
ফুটবল।
ফুটবলের প্রিয় খেলোয়াড়?
আমার প্রিয় খেলোয়াড় ডেভিড বেকহাম ছিল। সে এখন খেলে না। এখন প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি।
সাধারণ মানুষ ফুটবলে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সাপোর্ট করে। কিন্তু আপনি এর ব্যতিক্রম। পছন্দের দেশ হিসেবে নেদারল্যান্ডস কেন?
নেদারল্যান্ডসের অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা খুব ভালো খেলে। ওদের খেলা দেখে ভালো লাগে, এই আরকি। কিন্তু আমি বার্সার সমর্থক। মেসির খেলা খুব ভালো লাগে।
প্রিয় খাবার: ভুনা খিচুড়ি, স্ত্রীর হাতের শাহি টুকরা।
কখনো কোনো অদ্ভুত ফ্যানের সঙ্গে দেখা হয়েছে?
ঠিক তা হয়নি, তবে যখন চিনেও মানুষ আমাকে বলে যে ‘ভাই, আপনিই মুশফিক!’ তখন বেশ মজা লাগে।
আপনার জীবনী নিয়ে কেউ বায়োগ্রাফি সিনেমা বানাতে চাইলে আপনার চরিত্রে কাকে দেখতে চাইবেন?
আমি নিজেই তো নিজেকে চিনলাম না এখনো! নিজের চরিত্রে কাকে দেখতে চাই... উমম...সালমান খানকে দেখতে চাই (হাসি)।
অবসর সময়ে কী করতে পছন্দ করেন?
সাধারণত টিভিতে খেলা দেখি। খেলা নিয়েই থাকতে পছন্দ করি। আর এখন বাচ্চাকে নিয়ে থাকতেই ভালো লাগে বেশি।
আপনি এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে শ্রীলঙ্কাকে সব সময় হারাতে ইচ্ছে করে। কেন?
টেস্টে শ্রীলঙ্কা এমন একটা দল, যারা আমাদের সবচেয়ে বেশি চাপে রেখেছে। সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, দিলশান যখন ছিল, তখন সাঙ্গাকারা তিন–চারবার ২০০ রান করেছে আমাদের সঙ্গেই। ২০০ তিনটি আর ৩০০ একটি। তখন কিপিং করেছি আমি। তাহলে বুঝতেই পারো, কতটা কষ্ট হয়েছে। তো এই দিক থেকে একটা প্রবল ইচ্ছা ছিল যে সুযোগ পেলে অন্তত ওদের হারাব। কিংবা ওদের এমনভাবে চাপে ফেলব, যেন ওরা বাংলাদেশের কথা মনে রাখে।
এবারের এশিয়া কাপের ইনিংসটার (শ্রীলঙ্কা) পরে কি মনে হয়েছে, সেই প্রতিশোধটা নিতে পেরেছেন?
প্রতিশোধ ঠিক না। কিন্তু যেটা বললাম, ‘দেখ তোরা, যে রকম আমাদের কষ্ট করিয়েছিস, এখন তোদের কেমন লাগে।’ (হাসি) এই আরকি। এটা মজা। প্রতিশোধ না যে এমন করতেই হবে। আমরা তো সবার সঙ্গেই চেষ্টা করি। শুধু শ্রীলঙ্কা না, আরও অনেক দলই বাজেভাবে হারিয়েছে আমাদের। কিন্তু ওদের সঙ্গে খেললে অন্য রকম একটা মোটিভেশন কাজ করে। এই আরকি, অন্য কিছু না।
পরিবারের একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সতীর্থ হিসেবে আছেন। এটা কি আলাদা কোনো উত্সাহ হিসেবে কাজ করে?
আমরা ফ্যামিলি হয়েছি চার বছর আগে। কিন্তু আমরা খেলি প্রায় ১৫ বছর ধরে। ফলে রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগে থেকেই অনেক ভালো। শুধু রিয়াদ ভাই না, তামিম বলো, সাকিব বলো—সবাই আমরা অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫ থেকেই একসঙ্গে খেলি। এটা অনেক বড় সৌভাগ্য যে আমরা বছরের আর ১১-১২ মাস একসঙ্গেই থাকি। পরিবারের চেয়েও বেশি থাকি আমরা এখানে। এটা অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার।
বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আইসিসির একটা ইভেন্ট অবশ্যই জিততে চাই। আর দেশের জন্য এমন কিছু অবদান রেখে যেতে চাই, যেন তা আর কেউ ভাঙতে না পারে। রেকর্ড তো হয়ই ভাঙার জন্য (হাসি)। তারপরও বিশেষ কিছু করে যেতে চাই।
বাংলাদেশ দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে এই মুহূর্তে কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?
আমার মনে হয়, টেস্টের উন্নতিটা অনেক বেশি দরকার। বিদেশের মাটিতে আমাদের ভালো করতে হবে। বাইরে ট্যুর যদি আমরা আরও বেশি বেশি করি, তাহলে ওই জায়গাগুলোতে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে যাব। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলেছি আমরা। কিন্তু এর আগে খেলেছিলাম প্রায় পাঁচ-সাত বছর আগে। এ রকম সাত-আট বছর পরপর খেললে একটু কঠিন হয়ে যায়। অন্তত দুই বা তিন বছরের মধ্যে আমরা যদি ওই জায়গাগুলোয় বারবার গিয়ে খেলি, তাহলে আমার মনে হয় আরও ভালো করার সুযোগ থাকবে। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আল্লাহর রহমতে যা করছি, এটা যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে ইনশা আল্লাহ অনেক ভালো হবে।
কেউ যদি জানতে চায়, কীভাবে ভালো ক্রিকেটার হওয়া যায়, তাকে কী পরামর্শ দেবেন?
সবকিছুর আগে একটা ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। সেটা হলে সবকিছু খুব সহজ হয়ে যায়।
ক্রিকেটার হতে উত্সুক কিশোরদের উদ্দেশে কী বলবেন?
ক্রিকেট একটা সাধনার বিষয়। মানুষ ক্রিকেটার হোক, কিংবা পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার—যা–ই হোক, সবকিছুতেই সাধনার প্রয়োজন। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। নিয়মশৃঙ্খলা মানতে হয়। এই কাজগুলো করলে শুধু ক্রিকেটার না, মানুষ যা চায়, সেটাই হতে পারবে।
ক্রিকেটার হতে অনেক অভিভাবক বাধা দেন। তাঁদের জন্য কী বলবেন?
এটা ঠিক যে সমাজ থেকে যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেটা আসলেই একটু কম। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। কিন্তু গত তিন-চার বছরে আমাদের মেয়েরা মাশা আল্লাহ ভালো খেলছে। আমার মনে হয় যে অভিভাবকেরা এ ক্ষেত্রে সেই সুযোগটা করে দিচ্ছেন তাদের। এখন অনেক ছেলেমেয়ে ক্রিকেট খেলছে এবং তাদের সেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, সুযোগটা তাদের দেওয়া উচিত। কারণ, কার কোন জায়গায় কোন প্রতিভা আছে—এটা কেউ বলতে পারে না। জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে, অন্তত তাকে সুযোগটা দেওয়া উচিত। যদি না হয়, তাহলে আলাদা কথা, কিন্তু সুযোগটা তো দেওয়া যায়।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: রানা আব্বাস
(কিশোর আলোর নভেম্বর ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত)
অনেক গুণীজন আর তারকার সাক্ষাৎকারই প্রকাশ করেছি আমরা। নিয়মিত পাঠকেরা নিশ্চয় সেসব পড়েছ মন দিয়ে। কিশোর আলোতে আর কার সাক্ষাৎকার দেখতে চাও তোমরা? কেন চাও? লিখে জানাও আমাদের। তোমাদের মতামতের ভিত্তিতে তাঁদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করার চেষ্টা করব আমরা।