আমাদের খারাপ সময়ে যারা পাশে থাকে, তাদের কথা আমরা সব সময় মনে রাখি — তামিম ইকবাল

ছবি: প্রীত রেজা
খেলাপ্রেমী পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ক্রিকেটে আসা অনেকটাই সহজ ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের। তবে সানশাইন গ্রামার স্কুল ও কলেজে পড়া এই ক্রিকেটারকে খেলার জগতে এসে পার হতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে থেকেই স্বাভাবিক ছন্দে না থাকায় বহু সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সব সমালোচনার জবাব দিয়ে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেন সে বছরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে। বর্তমানে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তামিম ইকবাল ২০১৫ সালের ২৩ মে ধানমন্ডির উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে মুখোমুখি হয়েছিলেন কিশোর আলোর সাক্ষাৎকারর দলের। সেই দলে থাকা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হামীম ইসলাম, গবর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সাইয়েদুল আবরার, ঢাকা সিটি কলেজের ফাহিম কবির এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের ফাহমিদা মাহবুব খানকে শুনিয়েছেন তাঁর ব্যক্তি ও খেলোয়াড়ি জীবনের নানা গল্প।

প্রশ্ন :

‘তামিম ইকবাল’ নামটা শোনামাত্রই চোখে ভাসে একজন সংগ্রামী মানুষ, যিনি সব প্রতিকূলতা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে বীরের মতো ফিরে আসতে জানেন। সবকিছু জয় করে ফিরে আসার এই ব্যাপারটা কি আপনার ভেতর ছোটবেলায়ও ছিল?

না, এ রকম কোনো কিছু না। আমি যখনই কোনো কাজ করি, চেষ্টা করি যেন সেটাতেই ‘ফোকাসড’ থাকতে পারি। সেটা ক্রিকেট হোক, আর যা-ই হোক। আর সব সময় নিজের শতভাগ দেওয়ার ব্যাপারটা মেনে চলি। খেলা শেষে যদি আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে বলতে পারি, ‘আমি আমার পক্ষে সম্ভব সর্বোচ্চটা করেছি এবং তারপর ব্যর্থ হয়েছি’, তাহলে আমার আপত্তি নেই। আর যদি দেখি, না, এটা করতে পারতাম, ওটা করতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো খেলতে পারতাম—তাহলে সমস্যা। তার মানে আমার কিছু ঘাটতি ছিল।

প্রশ্ন :

ছোটবেলার সেই সময়টা—স্কুল, বন্ধুবান্ধব, ক্রিকেট—সব মিলিয়ে কেমন ছিল?

খুবই চমৎকার ছিল। আসলে স্কুলে যখন ছিলাম, ওই দিনগুলো ভোলার মতো না। কিন্তু স্কুলে ক্রিকেট অতটা খেলা হতো না। আড্ডা মারা এসবই বেশি হতো। স্কুলের পরই যা ক্রিকেট খেলতাম একটু। ওটা স্মরণীয় একটা ব্যাপার।

প্রশ্ন :

ক্রিকেটে এলেন কীভাবে?

আমার জন্য খুব সহজ ছিল। কারণ, আমার পরিবারের সবাই হয় ক্রিকেট খেলত, নাহলে ফুটবল খেলত। আমার ছিল স্পোর্টস ফ্যামিলি। বাংলাদেশ যখন আইসিসি ট্রফি জেতে, তখন আমার চাচা (আকরাম খান) সেই দলে ছিলেন। তখন পরিবারের সদস্যদের আর সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেছি। মানুষের উচ্ছ্বাস, বাইরে থেকে আসা অভিনন্দন, রং মাখানো—এসব ব্যাপার আমার ক্রিকেটে আসাকে খুব সহজ করেছে।

প্রশ্ন :

আমাদের জাতীয় দলে খেলা ব্যাটসম্যান নাফিস ইকবাল আপনার বড় ভাই। ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরে ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন?

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আব্বা মারা যান। আমি আব্বার সঙ্গে অতিরিক্ত ক্লোজ ছিলাম। আমার বড় ভাই আমার আব্বার মতোই। বয়সের ব্যবধান চার-পাঁচ বছরের। যখন আব্বা মারা যান, তখন সে আমার দেখাশোনা করেছে। সে পরিবারকে যেভাবে সাপোর্ট করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য। আসলে ভাইয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অন্য রকম। এটা আমি বুঝিয়ে বলতে পারব না। ভাইয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব খুব দৃঢ়।

প্রশ্ন :

আপনি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। বল পেলেই মেরে তুলাধোনা করেন। বলের প্রতি এত আক্রোশ কেন?

আমি সব সময় রান তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করি। ব্যক্তিজীবনেও আমার ধৈর্য একটু কম। সব কাজই খুব তাড়াতাড়ি করতে চাই। হয়তো তারই প্রভাব পড়ে আমার ব্যাটিংয়ে। এ রকম কিছু না যে বল মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলব।

প্রশ্ন :

কোনো দেশের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে কি মনে হয়েছে যে ওই দেশের খেলোয়াড় বা সমর্থকেরা অন্যদের জন্য আদর্শ হতে পারে?

যেকোনো দেশের সমর্থকই আসলে আমাদের দেশের মতোই। এমন না যে ওদের থেকে শিখে এসে আমাদের দেশের কাউকে কিছু বলার আছে। তবে আমরা একটু বেশি আবেগপ্রবণ। যুক্তি দিয়ে চিন্তা না করে আবেগ দিয়ে চিন্তা করি। তো মাঝে মাঝে একটু যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে। আমরা মাত্র ভালো খেলা শুরু করেছি, এখন ভালো খেলছি, ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলব। কখনো খারাপও খেলতে পারি। তখন সবকিছু বুঝেশুনে করা উচিত। এমনিতে আমার ইংল্যান্ডের দর্শকদের মজার লাগে। ওদের ওখানে শূন্য করলেও তালি দেয়, ১০০ করলেও তালি দেয়। তবে আমরা যখন ভালো খেলি, তখন আমাদের দেশে যে সমর্থন পাই, আমার কাছে মনে হয় না পৃথিবীর আর কোথাও এই সমর্থনটা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন :

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনি একজন কোচ, নির্বাচক কিংবা সমর্থক। আপনার দলের একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ফর্মে নেই। তাকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সে সময় আপনি কী করবেন?

ওই খেলোয়াড়টি পরীক্ষিত হয়ে থাকলে আমার পক্ষ থেকে যতটুকু দরকার সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করব। এমন সময়ও আসে যখন তুমি অনেক রকম প্র্যাকটিস করলেও তা কাজে আসে না, কিন্তু মানুষের দশটা কথা অনেক কাজে দিয়ে থাকে। ওই খেলোয়াড়কেও বুঝতে হবে যে ওকে যেটা শিখিয়ে দেওয়া হয়, সেটা ওকে করতে হবে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে অনেক সময় দেখা যায় আমাদের দেশের কিছু মানুষ পাকিস্তানকে সমর্থন করে। তাদের ব্যাপারে কী বলবেন?

তাদের দেশপ্রেম একটু কম। আমার এসব জিনিস দেখলে খুব খারাপ লাগে। মুখে পতাকা আঁকা বা এ রকম কিছু করা বাড়াবাড়ি। এর মানে তুমি তোমার নিজের দেশকে অপমান করছ।

প্রশ্ন :

মনে করুন, আপনি আর বেয়ার গেইলস দুর্গম কোনো জায়গায় আছেন। আপনার সঙ্গে সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটগুলো। বেঁচে থাকার জন্য তখন আগুন জ্বালানো প্রয়োজন, কিন্তু কোথাও কাঠ নেই বলে বেয়ার গেইলস আপনার ব্যাটগুলো দিয়ে আগুন জ্বালাতে চায়, কী করবেন?

দিয়ে দেব। ওর উপকার যদি হয়, অসুবিধা কী! ব্যাট জিনিসটা তো একদিন না একদিন নষ্ট হয়েই যাবে। আর এক জীবনে তো এক শটা লাকি ব্যাট থাকতে পারে। একটা ব্যাট দিয়ে তো আর সারা জীবন খেলতে পারা যায় না।

প্রশ্ন :

ক্রিকেটে তো অনেক নিয়মকানুন আছে। আপনার নিজের কি এমন কোনো আইডিয়া আছে, যা প্রয়োগ করলে খেলাটি আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে?

ব্যাটসম্যানকে দুবার চান্স দেওয়া যেতে পারে। বোলাররা তো ৬০ বার চান্স পায়। কিন্তু বেচারা ব্যাটসম্যান একবার আউট হলেই শেষ।

প্রশ্ন :

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ন্যূনতম কতটি দেশ নিয়ে হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

২০...২৫...৩০...যত বেশি করা যায়। কারণ, যত বেশি দল নিয়ে খেলবে, তত বেশি খেলাটাকে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। ফুটবল কিন্তু প্রায় প্রতিটি দেশ খেলে। কিন্তু ক্রিকেট এখনো ১০-১২টা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

প্রশ্ন :

স্লেজিংয়ের শিকার হলে কী করেন?

আমি চাই আমাকে স্লেজিং করুক। কারণ, দুই ধরনের ক্রিকেটার থাকে। একদল দেখবে এসেই মাঠে কথা বলা শুরু করবে। যেমন রিকি পন্টিং। কথা বললে অনেক সময় ফ্রি হয়ে যায়। আর কিছু ক্রিকেটার আছে, যারা কোনো সময় কোনো কিছুর উত্তর দেয় না। আমার সঙ্গে যদি কথা বলে, তাহলে আমি ফ্রি হয়ে যাই। আবার সাকিবকে দেখবে, ও কথা কম বলে। তবে ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে সেদিন শুধু একটু চিল্লাচিল্লি করেছে, কিন্তু ও সাধারণত চুপচাপ থাকে।

প্রশ্ন :

আপনার স্ট্রং জোন আর উইক জোন কোনটা?

স্ট্রং জোন আর উইক জোন দুটিই ব্যাটিং। আমি যদি খারাপ খেলি, ওটা তাড়াতাড়ি ভুলে যাই। আবার দুর্বল দিক হলো, আমি ভালো জিনিসগুলোও ভুলে যাই। যখন ভালো খেলতে থাকি, একটা ছন্দে থাকি। মাঝেমধ্যে ওগুলোও ভুলে যাই। আর শটের মধ্যে কভার ড্রাইভ ভালো খেলি। সুইপ খেলতে একটু সমস্যা হয়।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট, ওডিআই, টি-টোয়েন্টি—সব ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস আপনার। দলে এখন আরও অনেক ভালো ব্যাটসম্যান আছেন। এই রেকর্ডটি তাই কত দিন ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে হয়?

আমার মনে হয় না রেকর্ডটি বেশি দিন থাকবে। কারণ, রেকর্ড তৈরিই হয় ভাঙার জন্য। এটা হয়তো বা আমিই ভাঙতে পারি। আবার আমার সহখেলোয়াড় মুশফিক, মমিনুল...ওরাও ভাঙতে পারে। ওরা চমৎকার খেলে। যেকোনো মুহূর্তে তারা রেকর্ডটি ভেঙে দিতে পারে। আসলে এটা ভেঙে যাওয়াটাই ভালো। তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে আমরা ভালো খেলছি।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে ডাবল আর টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার সামর্থ্য রাখেন বলে আপনি মনে করেন?

মুশফিক...মমিনুল...প্রথম ছয় সাতজনের সবাই করতে পারে।

প্রশ্ন :

আপনি?

উম...করতে পারি।

প্রশ্ন :

আপনি বেশ কয়েকজন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছেন। হাবিবুল বাশার, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক। আপনার দৃষ্টিতে সেরা অধিনায়ক কে?

সবাই ভালো। কার নাম বলব? সাকিবের নাম বলা যায়।

প্রশ্ন :

বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনি অধিনায়ক থাকলে কী কী বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেন?

এটা নিয়ে একদমই ভাবি না। আমি এখনো অধিনায়কত্বের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না মনে করি। সহঅধিনায়ক হিসেবেই ঠিক আছি। আমি যতটুকু দেখেছি কাছে থেকে মুশফিকের অধিনায়কত্বে কোনো ভুল দেখিনি। আমি মনে করি, ও চমৎকার অধিনায়ক। অধিনায়ক কিন্তু শুধু মাঠে না, সব জায়গার জন্য। মাঠের বাইরে অধিনায়কের গুরুত্ব আরও বেশি। মুশফিক এত সুন্দরভাবে সবকিছু পরিচালনা করেছে, আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। মাশরাফি ভাইও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে অস্ট্রেলিয়ায়। একটা মানুষের যতটুকু করা সম্ভব, সে তা করেছে আমার জন্য। আমি যদি ভালো মানুষ হয়ে থাকি, ওটা আসলে কখনো আমার ভোলা উচিত না। যত দিন ক্রিকেট খেলব, যত দিন বেঁচে থাকি, আমি মনে রাখব।

প্রশ্ন :

একসময় চট্টগ্রাম থেকে নামকরা ক্রিকেটাররা উঠে এসেছিলেন। আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন, আফতাব আহমেদ...সর্বশেষ আপনি। কিন্তু এখন যেন চট্টগ্রামের সেই সুদিন হারিয়ে গেল। এর পেছনের কারণটা কী?

সুযোগ-সুবিধার অভাব। আমার কাছে মনে হয় না, চট্টগ্রামে তেমন সুযোগ-সুবিধা আছে খেলোয়াড় উঠে আসার জন্য। বিষয়টা চট্টগ্রামের সংগঠকদের একটু বুঝতে হবে। ওদের যদি ইচ্ছা না থাকে, তাহলে তো ক্রিকেট বোর্ড যতই চেষ্টা করুক, ভালো খেলোয়াড় উঠে আসবে না।

প্রশ্ন :

তাহলে তামিম ইকবাল কীভাবে এলেন?

চট্টগ্রামে যত মানুষ থাকে, তার মধ্য থেকে যদি হাতে গোনা কয়েকজন উঠে আসে, তাহলে এটা আজব না? আমি শতকরা ৯০ ভাগ সময় ঢাকায় ছিলাম। নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিমউদ্দিনসহ যাঁরাই জাতীয় দলে খেলেছেন, তাঁরা কিন্তু বেশির ভাগ সময় ঢাকায় ছিলেন। চট্টগ্রামে যদি ৫০০ জন ক্রিকেটার থাকে, তাদের সবাই তো এতটা সৌভাগ্যবান না যে ঢাকায় এসে থাকবে। কঠোর পরিশ্রম করে মোটামুটি মানের খেলোয়াড় আরও ভালো হতে পারে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের জন্য জায়গা তো থাকা লাগবে। চট্টগ্রামে সে জায়গাটা কই?

প্রশ্ন :

আপনার জার্সি তো ২৯ নম্বর ছিল। পরে ২৮ নম্বর নিলেন কেন?

আমি আগে ২৮ নম্বরই নিতে চাইতাম। ২৮ আমার প্রিয় নম্বর। কিন্তু আমি যখন দলে ঢুকি তখন ২৮ নম্বর আরেকজনের ছিল। পরে একদিন জিজ্ঞেস করি ২৮ পাওয়া যাবে কি না। তখন পেয়ে যাই। অনেকেই ভেবেছে, ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য করেছি। কিন্তু যদি নম্বর বদল করে ভাগ্য বদল করা যেত, তাহলে তো দুই মাস পর পর নম্বর বদল করতাম।

প্রশ্ন :

প্রতি ঈদে নাকি আপনারা একটি পারিবারিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেন। সেটি কেমন হয়? কে কে অংশ নেয়।

আমার বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন, যারা আছে সবাই আসে খেলতে। এটা আসলে আমার আব্বা শুরু করেছিলেন। ঈদের পরের দিন আমরা ক্রিকেট খেলতাম। বড়রা বড়দের দলে থাকত। ছোটরা ছোটদের দলে থাকতাম। খুব মজার খেলা হতো। এখন ওটা বদলে ফুটবলে চলে গেছে। ক্রিকেট খেলাটা তো একটু লম্বা সময় ধরে হয়। অনেকের বয়স হয়ে গেছে, খেলতে পারে না। তাই এখন ফুটবল হয়।

প্রশ্ন :

খেলার মাঠে ‘লুক’ দিয়ে সত্যিই কি আম্পায়ার বা বোলারদের পটানো যায়?

আরে না রে ভাই (হাসি)। যদি পারতাম তাহলে তো হতোই। এগুলো তো বিজ্ঞাপনে যা বলতে দেয়, তা-ই বলতে হয়। ডানোর বিজ্ঞাপন করে তো অনেক পচানি খেলাম। কিন্তু তারা খুব খুশি।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞাপনে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

মজাই লাগে। টাকাপয়সা দেয়। পরে অবশ্য লোকে মজা করে! হু কেয়ারস! ওটা নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। আমাদেরও জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে একটা জিনিস ভালো লাগে যে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি বলেই আমাদের বিজ্ঞাপনে কাজ করানো হচ্ছে। এটা আমাদেরই একটা অর্জন।

প্রশ্ন :

ভারতকে পেলেই আপনি জ্বলে ওঠেন। ভারতের বিপক্ষে বেশি ভালো খেলার পেছনে কি আলাদা কোনো কারণ আছে?

এমন কিছু না। যেকোনো বড় দলের সঙ্গে ভালো খেললে একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। ভারত যেহেতু বড় দল, তাদের সঙ্গে ভালো খেললে ভালো লাগে।

প্রশ্ন :

এখন পর্যন্ত আপনার সেরা সাফল্য আর স্মরণীয় ম্যাচ কোনটি?

লর্ডসের সেঞ্চুরি। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ইনিংসটি লর্ডসের চেয়ে ভালো খেলেছিলাম। সেরা ম্যাচ ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে।

প্রশ্ন :

লর্ডসে সেঞ্চুরির আগে বলে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরি হবে। কীভাবে?

ওভাবে ঠিক বলিনি। আগের ম্যাচে ৫৮ করি। তখন হঠাৎ অনার্স বোর্ডটা দেখে এমনিই বলি যে ৫৮... ১০৩। পরের ম্যাচে সত্যিই ১০৩ করি আর অনার্স বোর্ডে নাম লেখাই। ইট ওয়াজ আ মিরাকল।

প্রশ্ন :

ফিফটি বা সেঞ্চুরির পর আপনি যে উদ্‌যাপনগুলো করেন, সেসব কি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে?

এটা অনেকে ভাবে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আমি এসব জবাবটবাব নিয়ে ভাবি না। জবাব দেব এমনটা ভেবে খেলতে গেলে বরং খেলা খারাপ হয়। আমি স্বাভাবিক খেলাটা খেলি। উদ্যাপনগুলোও তাতক্ষণিকভাবে যা মাথায় আসে, তা-ই।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ দলে প্রিয় বন্ধু কে?

অনেকেই। দু-তিনজনের সঙ্গে একটু বেশি ক্লোজ। সাকিবের সঙ্গে অনেক ভালো সম্পর্ক। মুশফিকের সঙ্গেও। আর মমিনুল। আমার ছোট, ভাই বলে ডাকে। কিন্তু ওর সঙ্গে আমি সবচেয়ে বেশি ফাজলামি করি। ও আমার উপদেষ্টা বলতে পারো। খুব ভালো, প্রতিভাবান।

প্রশ্ন :

পত্রিকায় পড়েছিলাম, আপনি নাকি সহখেলোয়াড়দের বিভিন্ন টার্গেট দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন? টার্গেট পূরণ করতে পারলেই ট্রিট...

মাঝে মাঝে বলি। যেমন, রুবেল যদি আমার বলে ছয় মারতে পারে, তাহলে কিছু একটা দেব। প্র্যাকটিসে এসব মজার জন্য করি আর কী...।

প্রশ্ন :

অনেক বছর পরে একদিন শুনলেন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি মাইকেল ক্লার্ক আপনাকে সে দেশের কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কী করবেন?

না করে দেব। আমি কোচ হব না।

প্রশ্ন :

আপনার ব্যাটের গ্রিপ গোলাপি কেন?

গ্লেন ম্যাকগ্রার একটা ফাউন্ডেশন আছে, যেখানে ব্রেস্ট ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতার জন্য গোলাপি রং ব্যবহার করে। আমি প্রথম যখন ম্যাথু হেইডেনকে গোলাপি গ্রিপ ব্যবহার করতে দেখেছি, তখন ভেবেছি, আমি যদি খেলি, আমিও গোলাপি গ্রিপ ব্যবহার করব।

প্রশ্ন :

কার হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে?

শাশুড়ির। এটা শুনলে নিশ্চয় বউ খুশি হয়ে যাবে (হাসি)।

প্রশ্ন :

সমর্থকদের কাছে প্রত্যাশা কী?

আসলে ভালো সময় তো সমর্থন করা খুব সহজ। বাংলাদেশ দলের খারাপ সময়ে আমাদের সঙ্গে থেকো। ওই সময় আমাদের সবচেয়ে বেশি সমর্থন দরকার। ভালো করলে তো সবাই এমনিতেই তালি দেবে। আমাদের খারাপ সময়ে যারা পাশে থাকে, তাদের কথা আমরা সব সময় মনে রাখি।

প্রশ্ন :

কিশোর যারা ক্রিকেটার হতে চায়, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

জীবনে কোনো কিছুই সহজে আসে না। যদি কোনো কিছু অর্জন করতে চাও, তাহলে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকো। যদি কষ্ট করো, তাহলে একদিন না একদিন ফল পাবেই।

আরও যাদের প্রশ্ন নির্বাচিত হয়েছে—আইরিন হক, আনিকা তাসনিম, আসিফ-উল-ইসলাম, আহমেদ ইমরান, ইউশরা জাহান, ইসতিয়াক হোসেন, ইসমাইল হোসেন, উম্মে মারিয়াম, উম্মে হুমায়রা, এস কে শাহরিয়ার, কাজী ফাতিন, কাজী ফারহিন, জান্নাতুন নূর, জান্নাতুল নাঈম, তানজিনা আক্তার, তাসমিমা হক, তাহমিদ জামান খান, নওশীন ইবনাত, নাফিজ ইমতিয়াজ, নাফিসা মালিয়াত, নিজাম উদ্দিন, নিবেদিতা বিশ্বাস, প্রজ্ঞা আহমেদ, ফাহিম ফয়সাল খান, ফাহমিদ মুনতাসির, বেলাল হুসাইন, মারজুকা আহমেদ, মাহিন খান, মাহিব মাহাতাসিম, মীর মো. নুরুল করিম, মেঘবতী সুকন্যা দে, মনামি হামিদ, মুবতাসিম আলভী, মুহ্সী রহমান, রাশেদুল হাসান, শিহাবুজ্জামান মল্লিক, শর্মি সাহা, সাদিয়া ইবনাত, সাদিয়া বিনতে লিয়া, সামিউল ইসলাম, সামিউল হাসান, সামিরা সিফাত, সিমুন্নাহার, সজীব-উজ-জামান, সুপ্রীতি মালাকার, স্বরূপ সুলতানা, হামীম জুলফিকার ও হাসান জামিল।

(কিশোর আলোর জুন ২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত)