আপনাদের ব্যান্ড শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। প্রায় ২৬ বছর আগে। আপনারা পাঁচ বন্ধু মিলে প্রথমে শুরু করেছিলেন। তারপর অনেক বছরের একটা বিরতি। ২০০২ সালে রিয়েলিটি শো ‘স্টার সার্চ’-এ অংশ নিয়ে সেরা ব্যান্ড হন আপনারা। তারপর কী হলো?
সাবকনশাস: স্টার সার্চের পর আমাদের দুটি অ্যালবাম বের হয়। ওই দুই বছরই আমরা দেশে ছিলাম। ২০০২ সালে বের হয় প্রথম অ্যালবাম মাটির দেহ। ২০০৪ সালে বের হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম তারার মেলা। তারার মেলা বের হওয়ার ছয় মাস আগে আমরা দেশের বাইরে চলে যাই। আমি আর আমার ভাই, দুজনই ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তা ছাড়া সবাই নতুন। আমরা চলে যাই আমেরিকায়। সেখানে ছিলাম ২০১২-১৩ পর্যন্ত। সে কারণে আমাদের আর কোনো অ্যালবাম বের হয়নি। আমেরিকায় বসেই আমরা দুই ভাই বের করি তৃতীয় অ্যালবাম শিল্পের ঘর। সেটা প্রকাশ করি বাংলাদেশে ২০১৩ সালে।
কিশোর আলোর অনেক পাঠক ব্যান্ড তৈরি করতে চায়। আপনারা ও লেভেলে পড়ার সময় ব্যান্ড তৈরি করেছেন। তাদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন।
সাবকনশাস: আমরা ব্যান্ড শুরু করি ক্লাস সেভেন-এইট থেকে। আমি ও লেভেল কোনো স্কুল থেকে দিইনি। প্রাইভেটে থেকে মানে নিজে নিজে পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি। আমার অনেক সময় ছিল আড্ডা দেওয়ার। অনেক প্র্যাকটিস করেছি। এভাবে ব্যান্ডটা তৈরি হয়।
আপনাদের নিজে নিজে গান না গেয়ে কেন মনে হলো ব্যান্ডই তৈরি করতে হবে?
সাবকনশাস: আমরা কলোনির পেছনে গিটার বাজাতাম, গান গাইতাম। ওখান থেকে আমরা সব বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যে নিজেদের একটা গান বানাব। তখন নিজেদের গান গাওয়া শুরু করলাম। মাঝেমধ্যে খ্যাপ মারতে যেতাম (বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গান করা)। এভাবে অনেক বছর গেছে। আমরা অন্যদের সঙ্গেও বাজিয়েছি। সেই থেকে আমরা ঠিক করলাম নিজেদের গান বের করব। নিজেদের গান যখন বের হলো, তখন আমরা ব্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি। আমাদের ব্যান্ডটা যখন ভালোমতো শুরু হয়, তখনই রিয়েলিটি শো স্টার সার্চে আমাদের নাম আসে। আমরা আবেদন করা শুরু করি একদম ১৯৯৯ সালে। ১৯৯৯ সালে সেরা ব্যান্ড হয়েছিল ভাইকিংস। ২০০২ সালে আবার আবেদন করলাম। আমরা সেরা ১৫–তে ছিলাম। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমরা সেরা ব্যান্ড পুরস্কার পাই।
আপনারা কার গান বা কোন ব্যান্ডের গান শুনতেন?
সাবকনশাস: আমাদের সময় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন জেমস ভাই, বাচ্চু ভাই আর হাসান ভাই। এই তিন শিল্পীকে দেখেই আমরা গান করার চিন্তা করি। ১৯৯৬ সালে যখন আমরা শুরু করি, তখন থ্র্যাশ মেটালের গান শুনতাম। আমি ক্লান্টার, সাপালচুড়ার বড় ভক্ত ছিলাম। আয়রন মেইডেন শুনতাম। ‘প্যান্টেরা’ গাইতে গাইতে গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে যেত। তখন ব্যান্ডের সদস্যরা বলে, থাক, আমাদের থ্যাশ মেটাল হওয়া লাগবে না, আমরা পপ ব্যান্ড হব। আমি এখনো থ্র্যাশ মেটালের ভক্ত। এখনো শুনি, কিন্তু গাইতে পারি না। থ্র্যাশ মেটাল গাওয়া খুব কঠিন। পরে আমরা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেছি।
আমাদের এখানে থ্র্যাশ মেটালের গান শোনে খুব কম মানুষ। তো এক সপ্তাহ পরে রাশিয়ান কালচারে শো করছি, দর্শকেরা তো অবাক, ওরা এই গান গায়! থ্র্যাশ মেটালের গান আমরা করেছি ১৯৯৮ পর্যন্ত। তারপর আমরা আমাদের ব্যান্ডের গানগুলো করেছি। ২০০২ সালে বেস্ট ব্যান্ড অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর জি সিরিজের সঙ্গে চুক্তি করি। তখন কিছুই বুঝি না। না বুঝে তিনটা অ্যালবামের চুক্তি করে ফেলেছি। জি সিরিজ তো অ্যালবাম নিয়ে নিল। তবে আসলে আমরা যে আর্ট ফর্ম তৈরি করি, তার স্বত্ব তো আর কেউ নিতে পারে না।
এত বছর পর এসে এত দর্শকের সাড়া পাচ্ছেন, কেমন লাগছে? এটা কি আশা করেছিলেন?
সাবকনশাস: যখন সব ছেড়ে চলে এসেছিলাম, তখন অনেক বড় ভাই বলেছিলেন, ‘যে জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছ, তা পেতে অনেক কষ্ট হবে।’ সেটা এখনো পাইনি। এটা সত্যি। পার্থদা বকা দিয়েছিলেন।
ফিরে এসে কি আবার নতুন ব্যান্ড তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন?
সাবকনশাস: না। নতুন কোনো ব্যান্ড তৈরির কথা ভাবিনি। অনেক মিউজিশিয়ানের সঙ্গে বাজিয়েছি। আমেরিকায় থাকতে আমি অনেক সেশন ওয়ার্ক করেছি। মঞ্চে বাজিয়েছি।
বিদেশে কী নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন?
সাবকনশাস: আমি অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছি। গানের সঙ্গে থাকার জন্য। অনেকগুলো বিষয় নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি। প্রথমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে গিয়েছিলাম। ক্যালকুলাসে ফেল করেছি। তারপর মেডিকেল লাইনে যেতে চেয়েছি। আব্বু মানা করেছে। বলেছে ‘তোকে দিয়ে হবে না মেডিকেল। তুই যা, গিয়ে গানবাজনা কর।’ তারপর অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছি।
সাবকনশাস ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ
জোহান আলমগীর (ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট)
রায়হান আলমগীর লুকান (ড্রামার)
নিরা আলমগীর (ভোকালিস্ট ও ম্যানেজার)
এ আর সৈকত (গিটারিস্ট)
নাহিয়ান অয়ন (বেজিস্ট)
আতিকুর রহমাস সিদ্দিকী (সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার)
আপনাদের নাম কেন সাবকনশাস? নামটা কোথা থেকে এল?
সাবকনশাস: ১৯৯৬ সালে যখন আমরা ব্যান্ডটা শুরু করি, তখন কী নাম দেব, এটা নিয়ে কথা হয়। আমার চাচা ছিলেন শিল্পী। মামা ছিলেন লেখক-কবি। সবাই সৃজনশীল। ওনাদের সঙ্গে বসি। ওনারা আমাদের থেকেই নাম বের করে নেন। আমাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কীভাবে গান লেখো?’ আমরা তখন এত কিছু বুঝি না। তাঁদের বললাম, কেমন জানি ভেতর থেকে আসে। এগুলো বুঝিয়েছিলাম। তখন তাঁরা বলেন, ‘এটা তো সাবকনশাস মাইন্ডে আসে। তোমরা কী বলো?’ আমরাও বলি, হ্যাঁ ঠিক আছে। ভেতর থেকে আসে। এভাবে সাবকনশাস নামটা এসেছে। নামের জিনিসটা কিন্তু রাতারাতি হয়নি। অনেক দিন ধরে আসতে আসতে সাবকনশাস ব্যান্ডটা তৈরি হয়। আমার বড় ভাই লুকান ড্রামার। আমি আর আমার বড় ভাই ব্যান্ডের নাম দিয়েছিলাম ‘আগলি ফেস’। আমরা মুখে কালিটালি মেখে রাস্তায় বের হতাম। যাতে সবাই আগলি ফেস নামেই চেনে আমাদের। পরে এটা সাবকনশাস হয়ে যায়।
নতুন গানের কি কোনো খবর আছে?
সাবকনশাস: নতুন অনেক গান আসছে সামনে। আমরা চতুর্থ অ্যালবামের কাজ করছি। ৯টা গান থাকবে। ইতিমধ্যে ছয়টা গান বেরিয়েছে। বাকিগুলো অ্যালবামের সঙ্গে আসবে। অক্টোবরের ২৬ তারিখে অ্যালবাম আসবে। তারপর সেই গানগুলোই গাইব। সঙ্গে ‘অহনা’র মতো গানগুলো গাইব। এগুলো নিয়ে একটা অনুষ্ঠান হবে।
আপনারা নিয়মিত কনসার্ট করছেন স্কুল–কলেজে। কেমন লাগছে ওদের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে?
সাবকনশাস: অনেক জোশ। এটা ছাড়া আমাদের গান পৌঁছাবে না। সে জন্য আমাদের পারফর্ম করতেই হবে।
আপনাদের অনলাইন নিয়ে পরিকল্পনা কী?
সাবকনশাস: অনলাইনটা চলে শুধু যাঁরা পারফর্ম করেন, তাঁদের জন্য। তোমরা অনেকে আজকের পর আমাদের গানগুলো আবার শুনবে। সে জন্য সবখানে আমাদের পারফরম্যান্স থাকতে হবে। স্টেজ পারফরম্যান্স অনেক কঠিন একটা জিনিস। আমাদের দেশের জন্য তো এটা আরও কঠিন। অনেক ঝামেলার মধ্যেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাও যে পারফর্ম করি, তাতে দর্শকের থেকে যা পাই, তাতে আর কিছু চাওয়ার নেই। সামনে আমরা ইউটিউবে কিছু কনসার্টের ভিডিও নিয়ে আসছি। বিভিন্ন লাইভ আসছে সামনে।
‘অহনা’ শেষ কবে রেকর্ড করা হয়েছিল?
সাবকনশাস: শেষ কবে রেকর্ড করা হয়েছিল? ২০০৩ সালে। আমাদের লক্ষ্য আছে ১২টা অ্যালবাম করার। আমরা মাত্র চারটা অ্যালবাম নিয়ে কাজ করছি এখন। আশা করি বছরে একটা করে অ্যালবাম আসবে।